আমরা গরীব মানুষ বছরজুড়ে অন্যকোন কাজ না থাকায় প্রতি বছর কৃষি কাজ করে জীবিকা অর্জন করে থাকি। জমিতে আল্লার রহমতে ধানের ফলনও ভাল হয়েছে। ৫‘শ টাকা ধানের মন, কাজের মানুষের রোজ ৫‘শ টাকা, তিন বেলা খাওয়াতে হয়। ৫‘শ টাকা মন দরে ২৪ মন বোরোধান বিক্রি করে ঋন পরিশোধ করেছি। কিছু ধান রেখেছি নিজের খাওয়ার জন্য তাও পূরো বছর যাবেনা। কয়েক বছর থেকে অপেক্ষায় আছি ধানের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। ধান বিক্রি করে লাভবান হবো। কিন্তু তাও দেখছিনা। সন্তানদের লেখাপড়া ঠিক মতো করাতে পারিনা। অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক টাকাও লাগে। ক্ষেতের ধান বিক্রি করে খরচও উঠেনা। এ অবস্থা থাকলে জমিতে আর ধান লাগাতে যাবোনা। কষ্টার্জিত ফসল ধান বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পেলে এমন অবস্থা হতনা জানালেন কুলাউড়ার ভুকশিমইল ইউনিয়নের মুক্তাজিপুর গ্রামের কৃষক কুটি মিয়া।
অনুকুল আবহাওয়া ও পোকা মাকড় আক্রমন তেমন না থাকায় মৌলভীবাজার জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা জমি থেকে ধান হাসি মুখে বাড়িতে তোলছেন। গত কয়েক বছর পূরোপুরি মাঠ থেকে কৃষকরা রোরোধান উঠাতে না পারলেও এবছর অনুকুল আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা স্বপ্নের সোনালী ফসল ধান ঘরে উঠাতে পেরেছেন। এবার প্রতি বিঘায় ধানের ফলন ১৬ থেকে ২০ মণ হওয়ায় বেজায় খুশি কৃষকরা। তবে কৃষকের সেই স্বপ্নের ধান মাঠ থেকে ঘরে তোললেও ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না এনিয়ে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের মহিষঘরি গ্রামের কৃষক আনফর আলী। মুক্তাজিপুর গ্রামের কৃষক হারিছ মিয়া, ফয়ছল আহমদ ও গৌড়করন গ্রামের লেচু মিয়াসহ অনেকেই ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে বলেন আমাদের নিয়ে সরকার কোন চিন্তা করেননা। চিন্তা থাকলে সরকার আমাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতেন। ধানের ন্যায্য মূল্যও দিতেন। আমরাতো হাওর পাড়ের মানুষ আমাদেও জীবন জীবীকা ওই বোরো ধানের উপরই নির্ভরশীল। তাদের দাবী ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্য গুদাম তৈরী করে কৃষক থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, জেলায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বোরো ধানের বা¤পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ১’শ ৬২ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৪ হাজার মেট্টিক টন চাল। এ বছর ধানের উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন। কর্তনের সময় একসাথে অনেক ধান মাঠ থেকে সংগ্রহ করেন কৃষকরা। তাই ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু দিন মজুদ রেখে বিক্রি করলে মূল্য কিছুটা বেশী পাওয়া যাবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিনয় কুমার দেব জানান মৌলভীবাজার জেলায় সরকারী ভাবে ১ হাজার ৪শ ৫৫ টন ধান ও ৭ হাজার ৭শ ৭ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হবে। ক্রয় সংক্রান্ত এই বরাদ্ধের নির্দেশনা ২৭ এপ্রিলে তাদের হস্তগত হয়েছে। খুব শিগগিরই ধান চাল ক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে।
হাওর বাঁচাও,কৃষি বাঁচাও ও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সিরাজ উদ্দিন আহমেদ বাদশাহ বলেন, এ মৌসুমে সরকার সাড়ে এগারো লক্ষ টন চাল এবং দেড় লক্ষ টন ধান ক্রয় করবে। সরকার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা কেজি দরেক্রয়, সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা কেজি দরে ও ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল ক্রয় করার সিন্ধান্ত নিয়েছে। সরকারী ভাবে ধান ক্রয় বিক্রয় কার্যক্রমে অংশ গ্রহনের পর্যাপ্ত সুযোগ ও বরাদ্ধ না থাকায় এ জেলার কৃষকরা মণ প্রতি ধান বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। সরকার মিল মালিকগণকে বাচাঁতে মরিয়া উঠেছেন। অথচ ওই মিল মালিকরা ধান চাষ করেন না। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান ক্রয় করে বেশি দামে সরকারের কাছে বিক্রি করেন। এতে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকার কৌশলে ওই সবগুলোই ধান চাল মূলত মিল মালিকের কাছ থেকে কিনতে চান। এই ঘোষণা শুধুমাত্র লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। তিনি কৃষক বাঁচাতে এবিষয়ে সরকারকে সদয় হওয়ার আহবান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন