বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিস্ময়কর জীবনের গল্প

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

স্যামুয়েল আব্দুল রহিমকে যেদিন অপহরণ করা হয়েছিল সেদিনের কোন কিছুই তার মনে নেই। সেসময় তার বয়স ছিল সাত বছর। নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কানো শহরে তার নিজের বাড়ি থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তার পরের ছয় বছর সে আর বাড়িতে ফিরেনি।
স্যামুয়েলের বড় বোন ফিরদৌসি ওকেজি বলেন, ‘তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্যে হেন কিছু নেই যা আমরা করি নি।’ সেসময় ফিরদৌসির বয়স ছিল ২১। স্যামুয়েলের পিতার সাথে তার মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তিনি থাকতেন অন্য একটি শহরে।
ফিরদৌসি তার ভাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা বাদ দিতে রাজি হন নি। কাজের সন্ধানে তিনি চলে যান দক্ষিণের লাগোস শহরে। সেখানে স্থানীয় গির্জায় প্রত্যেক ডিসেম্বর মাসে পাঁচদিনের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হত। সেই অনুষ্ঠানে একদিন তিনি দেখলেন, এক ভিক্ষুক একজন বালকের কাঁধ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বালকটির পরনে ছিন্ন বস্ত্র। তাকে দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠলেন ফিরদৌসি - বালকটি আর কেউ নয়, তারই হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাই।
স্যামুয়েলের এখন বয়স ৩০ বছর। তাকে তার পরিবার থেকে কিভাবে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে সম্পর্কে তার কিছুই মনে নেই। তার শুধু ট্রেনে করে কোথাও যাওয়ার কথা মনে আছে। তাকে লাগোসের এক শহরতলিতে একজন মহিলার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার ছিল একটা হাত। তিনি স্যামুয়েলকে ভাড়া দিতেন অন্ধ ভিক্ষুকদের পথ-নির্দেশক হিসেবে। এজন্যে তাকে দেওয়া হতো দিনে ৫০০ নাইরা বা পাঁচ ডলার।
স্যামুয়েলের মনে হতো তাকে এমন কিছু দেওয়া হয়েছে বা এমন কিছু একটা করা হয়েছে যার ফলে ওই সময়ের কথা সে কিছুই মনে করতে পারছে না। সেসময় তার পরিবারের সদস্যদের কথাও তার মনে পড়েনি। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় ক্ষুধার্ত থাকতাম। কিন্তু দিনের বেলা যখন কাজে থাকতাম তখন খাওয়ার জন্য কোন ফুসরত ছিল না। লোকেরা যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে চলে যেত তেমনি ওই ভিক্ষুকরাও সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে নিয়ে ভিক্ষা করতে বের হয়ে পড়তো।’
কিন্তু এই গল্পের এখানেই শেষ নয়। ছয় বছর নিখোঁজ থাকার পর উদ্ধার হওয়া ১৬ বছর বয়সী ভাইকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতেও তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বোন ফিরদৌসিকে। তার সারা শরীরে ফুসকুড়ি পড়ে গিয়েছিল। গা থেকে আসতো দুর্গন্ধও। স্যামুয়েলের ডান কাঁধটা এক বছরেরও বেশি সময়ের জন্য একপাশে ঝুলে থাকতো। তারপর এক্স-রে করা হলো, ফিজিওথেরাপি দেওয়া হলো। ডাক্তাররা বললো, বছরের পর বছর ভিক্ষুকদের হাতের চাপের কারণে তার কাঁধটা একদিকে বাঁকা হয়ে গিয়েছিল।
ফিরদৌসি তাকে স্কুলে ভর্তি করেন। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই স্যামুয়েল ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস ফোরে উঠে গেল। এক বছরের মধ্যে সে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ভর্তি পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হলো। এর মাত্র তিন বছর পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি ভর্তি হয়ে গেলেন জারিয়ার আহমাদু বেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিন্তু তার মেধাই তার জন্যে কাল হয়ে দাঁড়ালো। পরীক্ষায় আরেক ছাত্রের জন্য উত্তর লিখে দেওয়ায় তাকে যখন বহিষ্কার করা হলো তখন তিনি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
বর্তমানে স্যামুয়েল একটি নির্মাণ কোম্পানির সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছেন। জীবনে যা ঘটেছে তার জন্যে খারাপ কিছু মনে হয় না তার। তিনি মনে করেন তার ওই দিনগুলিই তার জীবন গড়ে তুলেছে, তাকে শিখিয়েছে অন্যদের প্রতি বিনয়ী হতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন