শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মেঘনায় উচ্ছেদ অভিযান

সোনারগাঁয়ে ‘নদী দখল’ ইনকিলাবে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর

মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁ | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

অবশেষে ঘুম ভেঙ্গেছে সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠিান বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষের। ‘মেঘনা নদীর পাড় দখল’ নিয়ে ৬ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে বিআইডব্লিউটিএ। গত ১৯ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বলাকিরচর ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া চর বেতাগির মেঘনা নদীর তীরবর্তী ‘দখল’ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। কোথাও স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে; আবার কোথাও কোথাও দখলকারীদের দু’একদিনের মধ্যে নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। দেশের প্রভাবশালী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের জমির পাশের মেঘনা নদীর পাড় দখল করে প্রাচীর দিয়ে দখল নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। কিন্তু দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। ইনকিলাবে খবর প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদী দখলমুক্ত অভিযানে স্থানীয় মানুষ বেজায় খুশি। বিআইডবিল্ডিউটিএ জানায় মেঘনার পাড় দখলমুক্ত করতে অভিযান অব্যহত থাকবে।
সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদী দখল করে বিভিন্ন কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণসহ বালু দিয়ে ভরাট করে রাখে। এ নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর সোমবার থেকে মেঘনা নদী দখল মুক্ত শুরু হয়। সোমবার মেঘনা ঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলে। এসময় মেঘনা নদীর তীরবর্তী মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার চর বেতাকি খাঁন ব্রার্দাসের ৬‘শ ফিট লম্বা সীমানা প্রাচীর, এবং দুটি মাটি কাটা ড্রেজার ভাংচুর করা হয়। সোনারগাঁয়ের মেঘনা, হোসেনদি, বলাকিরচর এলাকায় নদী ভরাট করে বালু রাখা অংশ ভেকু দিয়ে খনন করে নদী দখল মুক্ত করা হয়। এছাড়া মেঘনা লঞ্চঘাট এলাকায় ৩০০ফুট লম্বা এবং ২০০ ফি প্রশস্ত মেঘনা নদী বালু দিয়ে ভরাট করে অবৈধ ভাবে বালু, পাথর, টিনের ব্যবসা করে আসছিল একটি চক্র। বিআইডব্লিউটিএর এসব মালামাল জব্দ করে নিলামে তুলে ৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা বিক্রি করে।
গতকাল মঙ্গলবার বিআইডব্লিউটিএ এর উচ্ছেদ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে সোনারগাঁওয়ের বৈদ্যেরবাজার এলাকা মেঘনা নদীর পশ্চিম তীর দখল করে গড়ে তোলা আল মোস্তফা গ্রুপের ৪ তলা বহুতল গুড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া নদী দখল করে ডকইয়ার্ড সম্প্রসারণ করায় ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স নামের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন সংস্থাটির ভ্রাম্যমান আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী ও উপ পরিচালক মোঃ শহীদুল্লাহর সার্বিক তত্বাবধায়নে উচ্ছেদ অভিযানটি পরিচালিত হয়। উচ্ছেদ অভিযানে দুটি ভেকু, দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ, একটি টাগবোট, বিপুল সংখ্যক উচ্ছেদ কর্মী, পুলিশ ও আনসার সদস্য, বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
গুলজার আলী আরো বলেন, নদীর তীর দখল করে আরো যারা অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে পরবর্তী অভিযানগুলোতে পর্যায়ক্রমে সেগুলো উচ্ছেদ করনা হবে। তিনি জানান, গত শুক্রবার নদী কমিশনের চেয়ারম্যার বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিন মেঘনা নদী পরিদর্শন করেছেন। এসময় মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ইউনিক গ্রুপ, আল মোস্তফা গ্রুপের পলিমার ইন্ড্রাষ্ট্রিজসহ বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে নদী দখলের প্রমান পেয়েছেন। সেগুলো পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।
উপজেলার সাতভাইয়াপাড়া ও চর লাউয়াদী মৌজার মেঘনা নদী, নদীর তীরবর্তী খাস ভূমি, সরকারি দুইটি খাল এবং ফোরশোর ল্যান্ডভূক্ত ভূমিতে বালু ভরাট করে আল মোস্তফা গ্রুপর মালিকানাধীন ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স ও হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রাচীর নির্মাণ করছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় বৈদ্যেরবাজার এলাকায় নদীর পশ্চিম দিকে ২হাজার ফুট দীর্ঘ বাই ৭শ প্রস্থ্য বর্গফুট পরিমান মেঘনা নদীর তীরভূমি ভরাট করে বিশালাকার এ প্রান নির্মাণ করা হচ্ছে। বালু ভরাটের কারনে মেনীখালী নদীর মুখ শুকিয়ে যাওয়ায় রতনপুর, ভাটি বন্দর, পিরোজপুর, দুধঘাটা ও নোয়াগাও কৃষকরা চলতি ইরি মৌসুমে পানি সংকটে পরে। পর্যাপ্ত সেচ দিতে না পারায় কয়েকশ একর কৃষি জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ এবং এলাকাবাসী। নদী দখলের কারনে সোনারগাওয়ের ঐতিহ্যবাহী কাইকারটেক হাট থেকে বৈদ্যেরবাজার ঘাটে নৌ-চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পরেছে।
জানা গেছে, নদী দখলের পাশাপাশি ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স ও হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটির মালিক আল মোস্তফা জনপদ বিভাগের জমিও দখল করেছে। ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগ দখলকৃত রাস্তা দেওয়ার জন্য নোটিশ করলেও তা আমলেনেয়নি আল-মোস্তফা গ্রুপ। বাংলাদেশ অব্যন্তরিন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিগত ২০১৭ সনের ৬ ডিসেম্বর সরেজমিনে তদন্তে এসে বৈদ্যেরবাজার এলাকায় মেঘনা নদীর পশ্চিম দিকে ২হাজার বাই ৭শ বর্গফুট পরিমান মেঘনা নদীর তীরভূমি দখল ও ভরাটের সত্যতার প্রমান পায়। পরবর্তীতে বিআইডবিল্ডিউটিএ
নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ, উপ-পরিচালক এহেতেশামুল পারভেজ, সহকারী পরিচালক শাহ আলম, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমসহ কর্মকর্তারা প্রষ্ঠানটির সকল কাজ বন্ধ করে ৭ দিনের মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিজ খরচে বালু অপসারণ করার নির্দেশ দেন। এমনকি সহকারী কমিশনার (ভূমি), সোনারগাঁও কার্যালয় থেকেও বালু অপসারণ ও দখলকৃত নদী ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতকিছুর পরেও আল- মোস্তফা নদী দখল করে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলে।
উপজেলার বৈদ্যেরবাজার সাতভাইয়াপাড়া গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে হাজী আজিজুল্লাহ বলেন, আমি বাদী হয়ে অবৈধ দখল ও নদী ভরাটের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট করি। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মামুনুর রহমান ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাস বিগত ২০১৭ সনের ১১ডিসেম্বর নদী দখলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কাজ করে যাচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির মালিক আল-মোস্তফা।
এলাকাবাসীর জানান,সড়কও জনপদের জায়গা দখল করে দোকানপাঠ গড়ে তুলেছে আল- মোস্তফা। সে গুলি অভিলম্বে দখল মুক্ত করা জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
জেলে পল্লীর লোকজন বলেন, আমরা নদীতে মাছ ধরে জিবিকা নির্বাহ করে থাকি, কিন্তু আল- মোস্তফা গ্রুপ প্রায় ২ বছর ধরে সড়কারী খাল ও মেনিখালি নদে বালু ভরাট করে দখল করার কারনে জেলে পরিবারসহ প্রায় ২০হাজার মানুষ চলাচলে ব্যহতে হচ্ছে। অবৈধভাবে দখল হওয়ার নদীর সম্পত্তি দখল মুক্ত হওয়ায় আমরা বৈদ্যোরবাজারের লোকজন অনেক খুশি। এতে করে আমরা নদীতে সকল প্রকার কাজ কর্ম পরিচালনা করতে পারবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Zaman ২২ মে, ২০১৯, ১২:৪৬ পিএম says : 0
এইতো সাংবাদিকতার সার্থকতা দৃশ্যমান হচ্ছে । সব সাংবাদিক যদি এভাবে এগিয়ে আসত !
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন