শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হওয়া রোধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

বাংলাদেশের প্রধানতম রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প খাতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিজিএমইএ-এর হিসেবেই গত ১৮ দিনে ২২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে আরও ৩০টি। এসব কারখান বন্ধ হওয়া এবং বন্ধের পথে থাকার মূল কারণ হচ্ছে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো দিতে না পারা এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারা। বিজিএমইএ-এর সভাপতি রুবানা হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশে আন্তর্জাতিক চাহিদার চেয়ে বেশি কারখানা গড়ে উঠিা ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অসম প্রতিযোগিতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, বেতন দিতে না পারলে আমরা কারখানা বন্ধ করে দিতে বলেছি। কোনো শ্রমিককে অভুক্ত থেকে যেন বাড়ি যেতে না হয়। ঈদের আগে অন্তত ১০০ কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবে না বলেও তিনি ধারণা করছেন। তবে হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে পর্যবেক্ষকরা ভালভাবে নিতে পারছেন না। এ ঘটনাকে তারা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন।
দেশে বিগত প্রায় এক মাস ধরে বেতন-ভাতার দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও আন্দোলন চলেছে এবং চলছে। মাসের পর মাস বেতন-ভাতা না পেয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর সইতে না পেরে তারা রাস্তায় নেমেছেন। বলা বাহুল্য, এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের কারখানাগুলো এখন প্রায় বন্ধ। নানামুখী সমস্যার কারণে এবং বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি এ খাতটিকে তলানিতে নিয়ে ঠেকিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেন যে নিশ্চল হয়ে রয়েছে, তা বোঝা মুশকিল। পাট খাতের কি সমস্যা, কেন এমন হচ্ছে, তা তাদের কি জানা নেই? জানা থাকলে এ খাতটিকে চাঙা করে তুলে লাভজনক করে তুলতে সমস্যা কোথায়? বছরের পর বছর ধরে এ খাতটি লোকসান দিয়ে যাবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না। যদি তাই হয়, তবে এ খাতে আলাদাভাবে মন্ত্রণালয় থাকা না থাকা একই কথা। একটি প্রতিষ্ঠিত খাতকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উদ্যোগ না থাকা বিশ্বের কোনো দেশে আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। অন্যদিকে দেশের প্রধানতম রপ্তানি খাত গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে আলাদা কোনো মন্ত্রণালয় না থাকলেও পুরোপুরি বেসরকারিভাবে গড়ে উঠা এ খাতটি ধ্বংসে বিভিন্ন সময় নানা ষড়যন্ত্রের কথা শোনা গেছে। এ ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে, গুজব ছড়িয়ে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আগুন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত কারখানা ধ্বংস করে দেয়ার নজির ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি। দেশি-বিদেশি এসব ষড়যন্ত্রের মধ্যেও খাতটি এগিয়ে চলেছে। বিশ্বে পোশাক রপ্তানির দিক থেকে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে এ খাতটিতে যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থান ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। কারণ ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলো দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। তারা নতুন নতুন বাজার ধরছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ নতুন বাজার সৃষ্টি দূরে থাক পুরনো বাজার ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে। বাজারে প্রতিযোগী থাকবে প্রতিযোগিতা হবে-এটাই স্বাভাবিক। তবে যারা এক্ষেত্রে শুরু থেকে এগিয়ে তারা ভাল করেই জানে কীভাবে বাজার ধরে রাখতে হয়। এ জায়গায় বাংলাদেশ নানামুখী ষড়যন্ত্রে পড়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়। এ পিছিয়ে যাওয়া থেকে সতর্ক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা জরুরি। বিশ্ববাজারের চাহিদার তুলনায় দেশে কারখানা গড়ে উঠেছে-এ কথার সাথে একমত পোষণ করা কঠিন। কারণ একজন উদ্যোক্তা নিশ্চয়ই খোঁজখবর না নিয়ে লস দেয়ার জন্য কারখানা গড়ে তোলেন না। জেনেবুঝেই কারখানা গড়ে তোলেন। এই যে একে একে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে, এ ব্যর্থতা শুধু তাদের নয়, এতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও দায় আছে। কারণ সমস্যার কারণে বাজারের চাহিদা কমে যাওয়া রোধ বা ধরে রাখতে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিশ্বে এ খাতের প্রসারে যেখানে সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন, সেখানে সরকার কিংবা বিজিএমই কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে না। যদি একটি কারখানা গড়ে উঠার পর টিকিয়ে রাখার জন্য পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হতো, তাহলে ঐ কারখানাটি বন্ধ হতো না। একটি গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
শিল্প কারখানায় বেতন-ভাতা অনিয়মিত হওয়া নতুন কিছু নয়। তবে তা সবসময় হওয়া বড় ধরনের সমস্যার কারণ। বেতন-ভাতা দিতে না পারার জন্য গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করে দেয়া কোনো যুক্তি হতে পারে না। যেসব কারখানা রুগ্ন সেগুলোকে সচল রাখার জন্য সরকার ও বিজিএমইএ’র এগিয়ে আসা উচিত। একটি কারখানা একদিনে গড়ে ওঠে না, সময় লাগে এবং তা বাণিজ্যিক রূপ লাভ করতেও অনেক পথ পারি দিতে হয়। এই পথ অতিক্রম করে স্থায়ী হওয়ার আগে বা পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। যে শত শত কারখানা বন্ধ হয়েছে, তাতে দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি হয়েছে। সামনে যেগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাতেও ক্ষতিই হবে। কাজেই গার্মেন্টস খাতের কারখানা যাতে বন্ধ না হয়, এ ব্যাপারে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। আর্থিক সমস্যা বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমাধান করা দরকার। সম্ভব হলে পাট খাতের মতো গার্মেন্টস শিল্প সংক্রান্ত আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা যেতে পারে। বালা বাহুল্য, গার্মেন্টস শিল্পটি প্রসার হওয়ার অন্যতম কারণ শ্রমিকের কম পারিশ্রমিক হওয়া। সরকার এ খাতে ন্যূনতম শ্রমমূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ কারণেও ছোট গার্মেন্টস কারখানাগুলোর টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এ বিষয়টিও এ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। গার্মেন্টস খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এ খাতের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বিজিএমইকেও তার সদস্য ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা এবং এ খাতের প্রসারে ভূমিকা রাখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন