শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কয়রায় নির্মাণ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ

আইলার ১০ বছর

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

আজ সেই ভয়াল ২৫ মে। ২০০৯ সালের এ দিনে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই থেকে এ দিনটিকে এ জনপদের মানুষ বিভীষিকাময় দিন স্মরণ করে আসছে। এ দিনে কয়রা পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৭টি পয়েন্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেলে তাৎক্ষণিক গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ক্ষতবিক্ষত এ জনপদে রক্ষা পায়নি মানুষজন, গবাদি পশু, গাছপালা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মৎস্য ঘেরসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ। একই সঙ্গে ৫৭ জন প্রাণ হারায়। আইলার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষ তাদের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সহায় সম্বলহীন স্বজনহারা মানুষ এ দিনটিকে আজো আতঙ্কের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষক আইলার পর থেকে দু’বছরই বেশকিছু জমিতে ভালভাবে ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম মিজান মাহমুদ বলেন, এখনও লবণাক্ততার গ্রাস থেকে পূর্ণাঙ্গ রক্ষা পায়নি কয়রা এলাকা। লবণাক্ত জমিতে লবণ সহনশীল ফসল উৎপাদন করতে পারছে স্থানীয় কৃষক। আইলার তিন বছর পর ভেঙে যাওয়া ভয়াবহ পবনা বাঁধ, হারেজখালি, পদ্মপুকুর, শিকারিবাড়ি, পাথরখালি মেরামত হলেও সে থেকে ১০ বছর কেটে গেলেও কয়রার ক্ষতিগ্রস্ত ৬ ইউনিয়নের কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত মাটি নেই। পাউবো কর্তৃপক্ষ মাটি না দেয়ায় বাঁধগুলোর সর্বত্র দুর্বল অবস্থা বিরাজ করছে। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আইলার পর থেকে এ জনপদের মানুষের খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে খাবার পানির জন্য প্রকল্প গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ অদ্রিশ আদিত্য মন্ডল বলেন, আইলার ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে কয়রাকে পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে উপকূলীয় এলাকা ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙা উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকার বেড়িবাঁধগুলো অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এসব বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে আবারো গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আইলার ক্ষতি এখনও কেটে ওঠা সম্ভব হয়নি। কয়রার সবচেয়ে বড় সমস্যা বেড়িবাঁধ। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে আতঙ্ক কাটবেনা এ জনপদের। পাউবোর আমাদী উপ-বিভাগীয় শাখা কর্মকর্তা মো. মশিউল আবেদিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধে মাটির কাজ চলছে। তা ছাড়া ভাঙনকবলিত অনেক এলাকায় টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি যেসব বাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহ বলেন, আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে। কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার বেশি সমস্যা বেড়িবাঁধ সংস্কার, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কয়রাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন