শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রমজানে মা-বাবার খেদমত

মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম-এর যে দোয়াসমূহ করেছিলেন, তন্মধ্যে আরেকটি দোয়া ছিল, যে ব্যক্তি তার মা-বাবাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল এবং তাদের খেদমত করে তাদের সন্তুষ্টি ও দোয়ার বরকতে জান্নাতের উপযোগী হতে পারল না, সে ধ্বংস হোক, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হোক। আল্লাহতায়ালা কোরআন শরীফে মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারা মা-বাবাকে কষ্ট দেয়, অসদাচরণ করে তারা দুনিয়ায় বহু কিছু অর্জন করতে পারে, অঢেল সম্পত্তির মালিক হতে পারে, কিন্তু সুখ-শান্তি লাভ করতে পারে না। খোঁজ নিলে সমাজে এমন বহু মানুষ পাওয়া যাবে।
মা-বাবার অবাধ্যতা: হাদীস শরীফে হযরত আবু বাকরাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহতাযালা চাইলে বান্দার সকল গোনাহ মাফ করে দিতে পারেন। তবে মা-বাবাকে কষ্ট দেয়ার গোনাহ তিনি মাফ করবেন না; বরং তার মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়াতেই এর শাস্তি ভোগ করাবেন। -শুআবুল ঈমান : ৭৮৯০
বনী ইসরাঈলের এক বুযুর্গের ঘটনা: এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে (হাদীস নং ১২০৬) হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। বনী ইসরাঈলে জুরাইয নামে এক বুযুর্গ ছিলেন। তিনি তাঁর ইবাদতখানায় নির্জনে সর্বক্ষণ ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন। একদিন তার মা (বিশেষ কোনো প্রয়োজনে) তাকে ডাকল, জুরাইয!
জুরাইয তখন নফল নামাযে ছিল। মায়ের ডাক শুনে জুরাইয ধন্দে পড়ে গেল, কী করবে? মনে মনে বলছে, হে আল্লাহ! আমার মা আর আমার নামায।
মা পর পর আরও দু’বার ডেকে কোনো সাড়া পেলেন না। জুরাইযও কী করবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বার বার ডেকেও ছেলের সাড়া না পেয়ে মনঃক্ষুণœ হলেন এবং একপর্যায়ে জুরাইযকে বদ-দোয়া দিলেন, হে আল্লাহ! কোনো ব্যভিচারিণীর মুখোমুখি না হয়ে যেন জুরাইযের মৃত্যু না হয়।
কিছুদিন পরের কথা। জুরাইযের ইবাদতখানার পাশে এক রাখাল মেয়ে বকরি চড়াত। সে অপর এক রাখালের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে।
লোকেরা তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, জুরাইয আমার সঙ্গে যিনা করেছেন। লোকেরা এ কথা শুনে জুরাইযের ইবাদতখানা গুঁড়িয়ে দেয়। তাকে গাল-মন্দ করতে থাকে। জুরাইয তাদের কথা শুনে বললেন, তোমরা ওই মেয়ে ও তার সন্তানকে নিয়ে আসো। মেয়েটি এলে জুরাইয তার সদ্যঃপ্রসূত শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলেন, এই বাচ্চা! বলোত তোমার পিতা কে?
বাচ্চাটি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, আমার পিতা অমুক রাখাল।
এখানে দেখা যায়, জুরাইয একজন বুযুর্গ হওয়া সত্তে¡ও মায়ের বদ-দোয়ার কারণে সমাজে অপমাণিত হলো। অথচ তিনি ছিলেন নির্দোষ। বোঝা গেল, মা-বাবাকে কষ্ট দিলে এর শাস্তি দুনিয়াতেই ভোগ করতে হয়। আল্লাহপাক আমাদের হেফাজত করুন।
মা-বাবার খেদমতের সওয়াব: আমরা সকলে মা-বাবার খেদমত করব, তাদের দোয়া নেব। কখনো তাদের সঙ্গে অসদাচারণ করব না। মা-বাবার খেদমতের অনেক ফায়দা ও সওয়াব রয়েছে। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো সদাচারী ছেলে-মেয়ে যদি তার মা-বাবার দিকে দয়া-মায়ার দৃষ্টিতে তাকায়, তা হলে আল্লাহতায়ালা তাকে প্রত্যেক বার তাকানোর বিনিময়ে একটি কবুল হজের সওয়াব দান করবেন।
সাহাবায়ে কেরাম আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেউ যদি দিনে একশ’ বার মা-বাবার দিকে তাকায়?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। আল্লাহতায়ালা অনেক বড় ও সর্বোত্তম সত্তা।-শুআবুল ঈমান : ৭৮৫৬
মা-বাবার চেহারার দিকে তাকালে যদি একটি কবুল হজের সওয়াব পাওয়া যায়, তা হলে তাদের খেদমত করলে কী পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে! মা-বাবা কাফের-বেদীন হলেও তাদের সঙ্গে সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মা-বাবার খেদমত করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Monir Hasan ২৫ মে, ২০১৯, ২:৩৩ এএম says : 0
মা-বাবা অসুস্থ হলে তাদের সেবা করা, তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা, তাদের মনে কষ্ট না দেওয়া, তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা সন্তানের ওপর ফরজ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মা-বাবার বাধ্য, অনুগত সন্তান হিসেবে তাদের খেদমতে আমাদের কবুল করে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে দিন।
Total Reply(0)
raihan ২৫ মে, ২০১৯, ৩:৫৭ এএম says : 0
rabbir hamhuma kama rabba yani sagira
Total Reply(0)
ujjol ২৫ মে, ২০১৯, ৪:০১ এএম says : 0
এই রমজান এ বাবা মার খেদমত করে জাননাতে যেতে চাই।আমিন
Total Reply(0)
kalam ২৫ মে, ২০১৯, ৪:০২ এএম says : 0
beautiful write up
Total Reply(0)
Abdul Mukit ২৫ মে, ২০১৯, ৯:২২ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মা-বাবার খেদমত করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন
Total Reply(0)
Mohammed Ismail ২৫ মে, ২০১৯, ৯:২৩ এএম says : 0
মা-বাবার চেহারার দিকে তাকালে যদি একটি কবুল হজের সওয়াব পাওয়া যায়, তা হলে তাদের খেদমত করলে কী পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে
Total Reply(0)
Najir ahammed ২৫ মে, ২০১৯, ৯:২৬ এএম says : 0
সন্তান যদি একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করার পাশাপাশি পিতা-মাতার সেবাযত্ন, খেদমত এবং উত্তম আচরণ করে; তবে সে দুনিয়া ও পরকালে মহাসফলতা লাভ করবে।
Total Reply(0)
Harunur Rashid ২৫ মে, ২০১৯, ৯:২৭ এএম says : 0
সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার ইবাদাত (হুকুম-আহকাম) করা; তারপরই পিতা-মাতার খেদমত করা, তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই সকল মানুষের একান্ত কর্তব্য। সর্বোপরি এমন কোনো কাজ না করা, যাতে তাদের মনে সামান্যতম কষ্টও হয়।
Total Reply(0)
johir ২৫ মে, ২০১৯, ৩:৪৫ পিএম says : 0
আমিন
Total Reply(0)
azad ২৫ মে, ২০১৯, ৩:৫৭ পিএম says : 0
all comment is best.
Total Reply(0)
Sayed abul basar ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১১:২৯ এএম says : 0
قال النبي صلى الله عليه وسلم قال رضى الرب في رضى الوالدين- وسخاط الرب فى سخط الوالدين-رواه الترمذي রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম বলেছেন পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার ক্রোধেই আল্লাহর ক্রোধ। (তিরমিজী শরীর) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তৌফিক দিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন