কুরআনুল কারীম ও আহাদীসে সহীহার দ্বারা লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই রাতটি বছরের অন্যান্য রাত হতে অধিকতর মর্যাদাশালী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একই সাথে এই রাতের ইবাদত বন্দেগীর মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশি। সহীহুল বুখারীতে উদ্ধৃত ও হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদীস সূত্রে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান ও সওয়াব লাভ করার বাসনা ও কামনা মনে রেখে রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার অতীতের গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কদর রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদতে রাতটি অতিবাহিত করবে তারও অতীতের গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’
এই হাদীসে কদর রাতের অধিকতর মর্যাদা ও সম্মানের কথা এবং এর প্রতিদানের কথা ব্যক্ত করার পর এই রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মর্যাদার কথাও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বস্তুত: রমজান মাসের রোজা প্রাপ্তবয়স্ক ঈমানদারদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। ফরজ প্রতিপালন অবশ্যম্ভাবী। এর কোনো নড়চড় হওয়ার সুযোগ নেই। এই ফরজ পালনের প্রতিফলের কথাও এখানে তুলে ধরা হয়েছে। তা হলো অতীত জীবনের যাবতীয় পাপ মোচন হওয়া। একই সাথে কদর রাতের ইবাদত বন্দেগীর বিনিময়ের কথাও ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এই রাতে ইবাদত-বন্দেগীকারী ব্যক্তির অতীত জীবনের যাবতীয় গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বিনিময়ের দিক থেকে উভয়টিই এক সমান। ইহা মহান রাব্বুল আলামীনের একান্ত দয়া ও অনুগ্রহ। তিনি যাকে চান, এভাবেই অনুগৃহীত করেন।
জামে তিরমিজী শরীফে উপরোল্লিত হাদীসটির ভাষায় খানিকটা অতিরিক্ত বাক্য উদ্ধৃত হয়েছে। তা’ হলো, যে ব্যক্তি মাহে রমজানের রোজা রাখবে, আর সারা রমজান ধরে কিয়াম করবে অর্থাৎ তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, তার অতীত জীবনের যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তবে বিনিময় লাভের ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘ঈমান’ ও ‘ইহতেসাব’ অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের প্রতি, তার নির্দেশের প্রতি এবং তার সওয়াব প্রদানের প্রতি এবং তার নিকট হতে গোনাহমাফী পাওয়ার প্রতি, তার নিকট হতে বিপুল সওয়াব লাভ করার প্রতি সন্দেহমুক্ত সুদৃঢ় আশা-কামনা মনের মধ্যে ধরে রাখতে হবে। এই দৃঢ়তা ও অবিচলতা থাকলেই ইবাদতের বিনিময় লাভ করা ও এর কল্যাণ ও মঙ্গল লাভে সৌভাগ্যশালী হওয়া অবশ্যই সম্ভব হবে। অন্যথায় নিছক আনুষ্ঠানকতা ও লোক দেখানো নেক আমলের দ্বারা কোনো ফলই লাভ করা সম্ভব হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন