বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাঁচ বছরেও সক্রিয় হতে পারেনি

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

খাদ্যে ভেজাল রোধ ও মান নিয়ন্ত্রণে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা মার্কিন সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) আদলে গড়ে তোলা হয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩-এর অধীনে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গড়ে তোলা সংস্থাটির ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত পাঁচ বছরে ৬৪ জেলায় ১২০টি মামলা দায়েরের বাইরে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই এ সংস্থাটির। এ দিকে রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে থেকে মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তারপরও গত প্রায় পাঁচ বছরে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ প্রতিষ্ঠানটি। অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক এ প্রতিষ্ঠানের কাজ কী, তা নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগের শেষ নেই। খোদ হাইকোর্টও প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হয়েছেন, বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা কী করছেন? সম্প্রতি জবাব চেয়ে তাদের হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিষ্ঠানের মালিক ইনকিলাবকে জানান, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে ঘুষ দিতে হয়। আর যদি না দেয়া হয় তাহলে অভিযান করে মামলা দিয়ে থাকে। মামলার ভয়ে তাদের মাসিক একটি হারে টাকা দেয়া হয়। আমি একাই নই, সারা দেশের ব্যবসায়ীরা দিচ্ছেন।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ইনকিলাকে বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব নয়। বিএসটিআই, ভোক্তা অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অনেক প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরাপদ খাদ্য পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করবে। আইনে আমাদের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ জন্য তাদের সঙ্গে সমন্বয় করা হয় ভোক্তাদের নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করতে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কৌশলগত পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তবে নতুন কোনো উদ্যোগ এ মুহূর্তে নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে, ভেজালকারীদের জেল-জরিমানা করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা আমি জানি না। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংস্থাটির শীর্ষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলছেন, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে সারা দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের পক্ষে অসম্ভব। আর বাজেট স্বল্পতার কারণে প্রচার-প্রচারণাতেও থাকতে পারছেন না তারা। যদিও দুই শতাধিক জনবল নিয়োগের সর্বশেষ দুই বিজ্ঞপ্তির একটির কার্যক্রমও শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। আবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংস্থাটির ব্যয় দেখিয়েছে ১৬ কোটি টাকা।
সূত্রে জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে এ মুহূর্তে কাজ করছেন, একজন চেয়ারম্যান, পাঁচজন পরিচালক, চারজন সদস্য, চারজন ম্যাজিস্ট্রেট ও দু’জন অতিরিক্ত পরিচালক। এ ছাড়া অফিস সহায়ক, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, পিয়ন, আয়াসহ আরো রয়েছেন ৪৩ জন কর্মচারী।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গত বছরের নভেম্বর মাসে ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে ১১৪ জনকে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেয়া হয়। আবার এ বছরের জানুয়ারিতে দশম গ্রেডে ১০৬ জনকে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেয়া হয়। তবে দু’টি সার্কুলার অনুযায়ী একটি নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। এ দিকে, এখনো প্রধান কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সব কার্যক্রম। সারা দেশে অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া থাকলেও সংস্থাটির কোনো শাখা অফিস নেই। তবে ১৮টি মন্ত্রণালয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অধিদফতর, সংস্থা ও স্থানীয় সরকারের ৪৮০টি প্রতিষ্ঠান খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত পাঁচ বছরে ৬৪ জেলায় ১২০টি মামলা করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের কোনো ওয়েবসাইট নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নেই তেমন তৎপরতা। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমে কোনো বিজ্ঞপ্তি বা বিজ্ঞাপনও দেয়া হয় না সংস্থাটির পক্ষ থেকে। যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংস্থাটি ব্যয় দেখিয়েছে ১৬ কোটি টাকা।
গত ১২ মে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় গত ১২ মে নামীদামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২ পণ্য জব্দ ও সেসব বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংসের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এসব পণ্য উৎপাদন বন্ধে পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন আদালত। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে ওই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গরুর দুধ, দই ও গো-খাদ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক ও সিসা রয়েছে তা নিরূপণের জন্য জরিপ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই দিন আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। সেই সঙ্গে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান আদালত।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ওপর সারা দেশের খাদ্য নিরাপদ রাখার এই বিশাল কর্মযজ্ঞের দায়িত্ব থাকলেও সংস্থাটি বলছে, সীমিত লোকবল নিয়ে তাদের পক্ষে সারা দেশে কাজ করা অসম্ভব। সংস্থার পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন পরিদর্শক আমাদের সহযোগিতা করছেন। কিন্ত সারা দেশেই তো ভেজাল ছড়িয়ে পড়েছে। সীমিত লোকবল নিয়ে সারা দেশে কাজ করা অসম্ভব। আমাদের লোকবল দরকার। সেই সঙ্গে দরকার মানুষের সচেতনতা।
এ দিকে জনবলের অভাবে অভিযান পরিচালনায় সক্ষম না হওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রচারে না আসার পেছনে বাজেট স্বল্পতাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক। তিনি বলেন, আমাদের কার্যক্রম যেন সাধারণ মানুষ জানতে পারে সেজন্য প্রচার-প্রচারণায় সমান গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ, সেমিনার আয়োজন, লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তবে আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় বাজেট অনেক কম। এ দিকে অভিযোগ রয়েছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মামলা ও জরিমানার নামে ঘুষ নিয়ে কাজ করছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তুলেছেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন