শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

দেশের ৫ কোটি লোক থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত

একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারীর আক্রান্ত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৯, ৭:২৯ পিএম

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি বিভিন্ন রকম থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। সে হিসাবে, ৫ কোটি মানুষ থাইরয়েড জনিত সমস্যায় আক্রান্ত বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৩ কোটি মানুষ জানে না তারা এ সমস্যায় আক্রান্ত এবং বেশিরভাগ গ্রামে বসবাস করে বলে জানিয়েছেন এন্ডোক্রাইনোলজিস্টরা। এ বিপুল সংখ্যক মানুষ এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পরও নীতি-নির্ধারক চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী এবং চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী সকলের মাঝেই রোগগুলো সম্পর্কে সচেতনতার, উদ্যোগ ও পদক্ষেপের ব্যাপক ঘাটতি রয়ে গেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগ হওয়ার আগেই আক্রান্ত হওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।

শনিবার (২৫ মে) বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মিলনায়তনে আয়োজিত সচেতনতামূলক সভা এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশকে আয়রন ঘাটতির অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ভূখন্ডে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ঘাটতি থাকার পরেও মাত্র ১৫০ জন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট রয়েছে। অথচ আয়রন ঘাটতির ফলে থাইরয়েড ডিজিজের মত মারাত্মক সব রোগের প্রকাপ দেশে দেখা দিচ্ছে। যা সম্পর্কে দেশের সাধারন মানুষ জানে না। এ কারণে নন কমিউনিকেবল ডিজিজের তালিকায় দ্রুত থাইরয়েড গ্রন্থি সম্পর্কিত রোগ গুলোকে সংযুক্ত করার আহ্বান ছাড়াও উন্নতমানের ল্যাব প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তারা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষের শরীরে অতিরিক্ত অ্যান্টিবডির সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এটা ক্ষতিকর। থায়রয়েডজনিত রোগ বিশ্বের ১ নম্বর রোগ। বাংলাদেশে সম্ভাব্য থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি রোগীই জানেনা তাদের এই সমস্যা রয়েছে। তাই এই রোগ প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই মূখ্য। থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে। তাই বিয়ের আগে কিংবা গর্ভধারণের পূর্বে নারীদের অবশ্যই থায়রয়েড পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। পাশাপাশি এ রোগের সম্ভাবনা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিৎ। না হলে বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাৎ করে শরীর মোটা ও চিকন হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখ ভয়ংকর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারনত একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারীর থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়।

বক্তারা বলেন, থায়রয়েড গ্রন্থিটি গলার সামনের দিকে অবস্থিত জাপতিসদৃশ একটি গ্রন্থি। যা ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালিকে প্যাঁচিয়ে থাকে। যদিও এটি একটি ছোটপ্র গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকরীতা ব্যাপক। থায়রয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ভ্রুণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থায়রয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য। এ হরমোনের তারতম্যের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা-ক্ষয় হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা এবং চোখ ভয়ঙ্করভাবে বড় হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশে থাইরয়েডের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে থাইরয়েড সমস্যার সকল ধরণকে এক সাথে হিসেব করলে তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০শতাংশের কাছাকাছি হবে। ভারতের অবস্থা অনেকটা এরকমই। প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় শূণ্য দশমিক ২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড ও হরমোনের বৃদ্ধি জনিত সমস্যা) রোগে ভোগে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড ও হরমোনের ঘাটতি জনিত সমস্যা) থাকতে পারে। আরও প্রায় ৭ ভাগ মহিলা ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথায়রয়েডিজমে ভোগে। নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি জনিত সমস্যা (কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম) হতে পারে। তার হার ১০ হাজার জীবিত নবজাতকের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৮ জন। বাড়ন্ত শিশুরাও থায়রয়েডের হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে। খুলনা বিভাগে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ৯২৫ জন নারীর মধ্যে ২০ দশমিক ৪৩ ভাগ নারী থাইরয়েড সমস্যায় ভোগে।

বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারডেম হাসপাতালের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. জাফর এ লতিফ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মো. হাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. এসএম আশরাফুজ্জামান, সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. এম এ হাসানাত, সহ-সভাপতি ডা. এম এ সামাদ, ইসি সদস্য প্রফেসর ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্পাদক ডা. কাজী আলী হাসান, বিজ্ঞান ও গবেষণা সম্পাদক ডা. নাজমুল কবীর কুরায়েশী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন