বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকারের ভ্রান্তনীতিতে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণেই কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্ধ দাবি করেছে বিএনপি। তিনি বলেন, কৃষকদের বর্তমানে যে দূরাবস্থা তা সরকারের ভুলনীতির প্রতিফলন। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী দেশ খাদ্যে বিশেষ করে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে চাল উপাদনের পরিমাণ তিন কোটি ৬২ লাখ মেট্রিক টন। অথচ এই সময়ে সরকারি চ্যানেলে বা ব্যবস্থায় খাদ্য শষ্য আমদানি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৭ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ একদিকে বলা হচ্ছে যে, আমরা স্বয়ংসম্পন্ন, অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে চাল। গতকাল (শনিবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, চাল আমদানির করা হয়েছে শুধুমাত্র তাদের (ক্ষমতাসীন) সুবিধাভোগীদের সুবিধা দেয়ার জন্য। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, চাল আমদানির কারনেই কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার জন্য তাদের ধান কেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। বর্তমান সংকট উত্তরনে কৃষকদের থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্ধ দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, খাদ্য শষ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে কৃষকদের কৃষকদের বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। দেশের কৃষককুল তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অনেক স্থানে ধানের জমিতে আগুন দিয়ে রাস্তায় ধান ফেলে দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। কৃষকরা বিশেষ করে ধান চাষীদের চাওয়া হচ্ছে- সরকার ন্যায্য মূল্যে ধানের চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করুক। আমরা তাদের এই দাবির সাথে একমত। সরকার কৃষকদের ন্যায্য দাবির কথা কানেও নিচ্ছে না। বরং সরকারের মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব কৃষকদের এই বিক্ষোভকে সাবোটেজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বিভিন্ন রকমভাবে এটার সঙ্গে আবার বিএনপিকে জড়ানোর চেষ্টা করেছেন। আমি আগেও একদিন বলেছিলাম আসলে বিএনপি হেজ বিকাম দে এ নাইট মেয়ার। অর্থাৎ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের কাছে। উঠতে বসতে শয়নে-স্বপনে তারা সবখানেই বিএনপি ভূত দেখতে পায়। যার ফলে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলেন, বিএনপিকে সব জায়গায় জড়াতে চায়।
চাল আমদানিতে সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, চাল আমদানির ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা এতোই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, সরকারের অংশীদারী একটি দলের প্রধান সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও চাল আমদানীতে সরকারের দুর্নীতির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া সরকারি দলের এমপি রমেশ চন্দ্র সেনও এহেন পরিস্থিতির জন্য এই সরকারের সাবেক খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে দায়ী করেছেন। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল না কিনে ‘মধ্য-সত্ত¡ভোগী চাল কল মালিক ও দলীয় লোকদের’ কাছ থেকে চাল ক্রয় করে তাদেরকে সরকার মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে।
কৃষকদের বর্তমান সংকট উত্তরণে ১১ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। এগুলো হচ্ছে, কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে তিন মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান, সরকারি পর্যায়ে ধান-চাল গুদামজাত করতে প্রয়োজনে বেসরকারি গুদাম ভাড়া করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচিতে অধিক পরিমাণ চাল বিতরণ করা, ধান ক্রয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্ধ, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা, প্রান্তিক চাষী ও ক্ষেত মজুরদের বিশেষ সুদবিহীন ঋণ প্রদান, সরকার দলীয় কর্মীদের ধান ক্রয়ের অনুমতি বাতিল করা, ধান উপাদন সম্পর্কে সরকারি সঠিক তথ্য প্রদান, মৌসুমের আগেই ধান সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা, ধান-চাল সংগ্রহের পরিমান কমপক্ষে বোরো উৎপাদনের ১৫ শতাংশ করা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এই খেলাপী ঋণ গ্রহীতাদের জন্য সরকার বিশেষ ছাড় দিয়েছে। যদিও এই ছাড় মহামান্য হাইকোর্ট আটকে দিয়েছে। সরকার ব্যাংক লুটপাটকারীদের দুধ-কলা দিয়ে পুষছেন। অথচ এই খেলাপী ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্ধ দিলে সরকার আরো ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা উপকৃত হবে। ঋণ খেলাপীদের এখন সুবিধা দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কৃষকদের কৃষি ঋণের মওকুফের কোনো পদক্ষেপ নেই। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে কৃষি ঋণ মওকুফ ও কৃষকদের উন্নয়নে পদক্ষেপও তুলে ধরেন তিনি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কৃষি বিষয়ক সহ-সম্পাদক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক, কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, কেন্দ্রীয় সদস্য ইব্রাহিম খলিল, শামসুজ্জামান প্রমূখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন