শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মোদি এনডিএ জোটের নেতা নির্বাচিত

পদত্যাগ প্রস্তাব নাকচ : রাহুলকে দল গোছানোর দায়িত্ব দিল কংগ্রেস ৪০ ভাগ এমপি ফৌজদারি মামলার আসামি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ভারতের লোকসভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নেতা নির্বাচিত হলেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। গতকাল লোকসভার সেন্ট্রাল হলে এনডিএ জোটের বৈঠকে তাকে এ দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত করা হয়। অমিত শাহ ছাড়াও মুরলীমনোহর জোশী এবং লালকৃষ্ণ আদভানী-র মতো বর্ষীয়ান বিজেপি নেতারা এ বৈঠকে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন জনতা দল (ইউনাইটেড) নেতা নীতীশকুমার, লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসওয়ান, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেসহ বিজেপি’র শরিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা।
পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত করার পর মোদিকে ফুলেল শুভেচ্ছা বিজেপি ও এনডিএ জোটের অন্য শরিক দলগুলোর নেতারা। এরপর তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ভাষণ দেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। একইসঙ্গে তিনি শরিক দলগুলোকেও পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
অমিত শাহের পর বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদি। নিজের বক্তব্যে তিনি বলেন, এনডিএ জোট বিপুল গণরায় পেয়েছে। এটি আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিলো। জাতীয় উচ্চাশা আর আঞ্চলিক প্রেরণা, এই দুই নিয়েই এগোতে হবে আমাদের। কোনও একটিকে উপেক্ষা করলে চলবে না। এটাই আমাদের নতুন স্লোগান। মোদি বলেন, যদি কোনও ভুল হয়, তবে তা মেনে নিয়ে শুধরে নিয়ে চলতে হবে। সমতা আর মমতা, এই দুই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে। বিশ্বের দরবারে ভারতকে আরও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমার লক্ষ্য। বিজেপি-র সব সদস্য, এনডিএ জোটের শরিক দলের সব নির্বাচিত সদস্য আমাকে পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত করায় আমি কৃতজ্ঞ।
এদিকে নতুন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো আবেদন নিয়ে গতরাতেই প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দর সাথে রাষ্ট্রপতি ভবনে দেখা করেছেন বিজেপি পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা।
রাহুলের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি কংগ্রেস
লোকসভা নির্বাচনে ভয়াবহ ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে গতকাল পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কিন্তু দলটির কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তা সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। উল্টো, কংগ্রেসকে ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রাহুলকে।
বৃহস্পতিবার ভোটগণনা শেষ হওয়ার আগেই কংগ্রেসের পুনরায় ভরাডুবি স্পষ্ট হয়ে যায়। যদিও গতবারের চেয়ে এবার কংগ্রেস আটটি আসন বেশি পেয়েছে। দলের ব্যর্থতার মধ্যেই রাহুলের জন্য গান্ধীদের পারিবারিক আসন হয়ে ওঠা আমেথিতে হার ছিল চরম ব্যর্থতার। যদিও ওয়ানাড় থেকে জয়ী হয়ে লোকসভায় যাচ্ছেন তিনি।
গতকাল কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির কাছে পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন রাহুল। তবে বৈঠকের মাঝপথে কংগ্রেস মুখপাত্র রন্দিপ সিং সুরজেওয়ালা সাংবাদিকদের জানান, রাহুলের পদত্যাগের প্রস্তাব দেয়ার খবর সত্য নয়। বৈঠকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনও প্রস্তাব দেননি তিনি। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে কংগ্রেস নেতারা তাদের ভোটারদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। দলটির দাবি, তারা সব সময় শোষিতের হয়ে লড়াই করেছেন। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আগামী দিনে সরকারকে তার মোকাবিলা করতে হবে।
‘মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে চেয়েছিলাম, দল চায়নি’, বিস্ফোরক মমতা
লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে তিনি প্রকাশ্যে আসেননি। অবশেষে এলেন গতকাল। দলের কোর কমিটির বৈঠক শেষে। আর এসেই কার্যত বোমা ফাটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, ‘উন্নয়নের কোনো দাম নেই। শেষ পাঁচ মাস ক্ষমতাহীন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম আমি। এই মুখ্যমন্ত্রীত্ব আমি চালাতে চাইনি, পদত্যাগ করতে চাইছিলাম।’
এরপরই তিনি জানিয়ে দেন, দল তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে দেয়নি। ‘দলই চায়নি, আমি ইস্তফা দিই।’ সেইসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘আমি তো হিন্দু ঘরের মেয়ে, উগ্র হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাস করতে পারব না। মমতা মমতাই থাকবে, বদলাবে না।’
শুধু তাই নয়, এদিন ভোটের সাফল্যের জন্যে ইভিএম প্রোগ্রামিং, বিদেশি হাতের কথাও তুলেছেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন ওদের হয়ে কাজ করেছে, কোনও অভিযোগের ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারি অফিসারদের দিয়ে টাকা বিলিয়েছে। সেজন্যেই আমার সমস্ত অফিসারদের সরিয়ে দিয়েছে। সিআরপিএফ, বিএসএফ সবাইকেই ব্যবহার করা হয়েছে।’
৪০ ভাগ এমপি হত্যা ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলার আসামি
ভারতের লোকসভায় নির্বাচিত সদস্যদের ৪০ শতাংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে একটা অংশ হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামি এবং এ তালকা আরও বাড়ছে। গতকাল অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্রেটিক রিফর্মস(এডিআর) নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, ভারতীয় পার্লামেন্টে অপরাধীদের তালিকা ক্রমে বাড়ছে। দেশটির পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় এক সদস্যের বিরুদ্ধে নরহত্যা ও দস্যুতাসহ ২০৪টি মামলা রয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি থেকে জয়ী ৩০৩ প্রার্থীর মধ্যে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সন্ত্রাসবাদের দায়ে অভিযুক্ত। কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত ৫২ এমপির মধ্যে ২৯ জন অপরাধী। কেরালার ইডুক্কি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন দীন কুরিয়াকোস। তার বিরুদ্ধে ২০৪টি ফৌজদারি অপরাধের মামলা রয়েছে। বিজেপির এমপি প্রজ্ঞা ঠাকুরের বিরুদ্ধে মসজিদে হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। যদিও নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করছেন তিনি। সূত্র : এনডিটিভি, এএফপি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন