বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নির্বাচনের পর ইভিএম এর ভাগ্যে কী ঘটে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বিরোধীদের পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) নির্ভরযোগ্যতার ওপর সব অভিযোগ সত্তে¡ও ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে এই যন্ত্রে নেওয়া ভোটেই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। নির্বাচন কমিশন সবসময়ই দাবি করে আসছে ইভিএম চূড়ান্ত নিরাপদ আর তাতে জালিয়াতি সম্ভব না। ইভিএম-এ জালিয়াতি করা প্রায় অসম্ভব। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞও বলেছেন ইভিএমগুলো জালিয়াত-রোধী। প্রায় নব্বই কোটি মানুষের ভোটগ্রহণের মতো মহা আয়োজনের পর এই ইভিএমগুলো কোথায় যায়? ভোটের পর লাখ লাখ এই ইভিএমগুলো সংগ্রহের পর তা কীভাবে সংরক্ষণ করে ভারতের নির্বাচন কমিশন?
বিশ্বের অন্যতম বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে ইভিএম ব্যবহার প্রথম শুরু হয় গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকে। প্রথমদিকে প্রতিটি ইভিএম প্রায় দুই হাজার ভোট গ্রহণ করতে পারতো। তবে নির্বাচন কমিশনের করা নিয়ম অনুযায়ী এখন একটি ইভিএম-এ ১ হাজার চারশোর বেশি ভোট নেওয়া যায় না। প্রতিটি বুথে আলাদা আলাদা পরিমাণ নির্ধারিত ভোটার ভোট দিয়ে থাকেন।
প্রতিটি লোকসভা আসনে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ ভোটার নিবন্ধিত রয়েছেন। আসন প্রতি ভোটার সংখ্যা আলাদাভাবে নির্দিষ্ট করা আছে। এসব লাখ লাখ ভোটারের জন্য ভোট কেন্দ্রে বুথ নির্ধারণ করা আছে যাতে একটি ইভিএম-এ ১ হাজার চারশোর বেশি ভোটগ্রহণ করতে না হয়।
নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ শেষে ইভিএমগুলো রাখা হয় স্ট্রং রুমে। সেখানে কোনও ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস রাখা যায় না। এমনকি স্ট্রং রুমের অভ্যন্তরে লাইটও থাকে না। প্রশাসনিক এই কক্ষে ইভিএম রাখার পর পোলিং অফিসার, প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দুই স্তরের সিলগালা করা হয়। স্ট্রং রুমের বাইরে বসানো থাকে সিসি ক্যামেরা।
ভোট গণনার পর জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের অনেকগুলো প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন করতে হয়। জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর ইভিএমগুলো আবারও স্ট্রং রুমে রেখে তাতে তালা দিয়ে আবারও সিলগালা করা হয়। আবারও প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এসব প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডে’কে বলেন, ‘ফলাফল। ঘোষণার পর ৪৫ দিনের মধ্যে পুনরায় ভোট গণনার আবেদন করতে পারেন প্রার্থীরা। ফলাফল নিয়ে প্রার্থীর কোনও সন্দেহ থাকলে ওই ৪৫ দিনের মধ্যে পুনরায় গণনার আবেদন করতে পারেন প্রার্থী। এই সময়কালকে বলা হয় উইন্ডো পিরিয়ড। বহু উদাহরণ হিসেবে দেখা গেছে যেসব স্থানে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের ভোট ব্যবধান কম সেসব স্থানে প্রার্থীরা পুনরায় ভোট গণনার আবেদন করেছে। যেখানে এক ভোটের ব্যবধানেও জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে সেখানেও পুনরায় গণনার আবেদন হতে পারে। তবে ৪৫ দিন পার হয়ে পুনরায় গণনার আর কোনও সুযোগ নেই।’
কমিশনের আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এই ৪৫ দিন একই স্ট্রং রুম বা যথাযথ নিরাপত্তার আওতায় আনা কোনও অনুমোদিত কক্ষে রাখা হয় এসব ইভিএম। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ইভিএম পাহারা দিয়ে থাকেন। ৪৫ দিন পার হয়ে গেলে ইভিএমগুলো কড়া নিরাপত্তার একটি সংরক্ষণ কক্ষে নিয়ে আসা হয়’।
ওই সংরক্ষণ কক্ষে আনার পর সেখানেই এগুলো রাখা হয় বা নির্বাচন কমিশনের প্রকৌশলীরা তা পরীক্ষা করে দেখেন। প্রকৌশলীরা কয়েক দফায় এগুলো পরীক্ষা করে দেখার পর আরেক দফা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে ইভিএম।
প্রায় ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে কয়েক দিন পরপরই বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেসব স্থানে প্রয়োজনমতো পাঠানো হয় এসব ইভিএম। কোনও জায়গার নির্বাচন ঘোষণার পর সেখানে ইভিএম পাঠানো হয়। এখানেও কয়েক দফায় সেগুলো পরীক্ষা করে দেখে নির্বাচন কমিশন। এরপর ভোটকেন্দ্রে সব প্রার্থী ও তার প্রতিনিধিদের ডেকে ইভিএম যথাযথভাবে কাজ করচে কীনা তা পরীক্ষা করে তা যাচাই করে দেখানো হয়। নির্বাচনি কর্মকর্তা ও প্রার্থী বা তার প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোট গ্রহণের জন্য যে পরিমাণ দরকার তার চেয়ে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ ইভিএম সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঠানো হয়। অতিরিক্ত এসব ইভিএম জরুরি প্রয়োজনের জন্য রাখা হয়। কোনও কারণে নষ্ট হলে বা প্রাযুক্তিক সমস্যা হলে অতিরিক্ত ইভিএম ব্যবহার করা হয়। অন্য আর সাধারণ ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মতো এই ইভিএম। যদি যথাযথভাবে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা যায় তাহলে এগুলো ভালোভাবে কাজ করে আর জালিয়াতি করা যায় না। তবে কোনও কারণে ইভিএম-এ সমস্যা পাওয়া গেলে সেগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়।’ সূত্র : ওয়েবসাইট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন