বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আমেরিকা থেকে এসে মা-বোনকে খুন!

চট্টগ্রামে জোড়া হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ২৭ মে, ২০১৯

আমেরিকা থেকে এসে মা ও বড় বোনকে খুন করেন মাসুদুর রহমান। খুনের পরদিনই ফিরে যান আমেরিকায়। তিন কোটি টাকা দামের একটি বাড়ি দখলের জন্যই বড় বোন আর গর্ভধারিনীকে খুন করেন মাসুদ। আলোচিত এই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হারুন অর রশিদ মুন্না (৩৯) ও তার গাড়িচালক মো. মাহফুজ (২৮) এমন তথ্য জানিয়েছেন। আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, আমেরিকা প্রবাসী মাসুদুর রহমান দেশে ফিরে তার মা ও বোনকে হত্যার মিশনে অংশ নিয়েছেন। হত্যার পর মাসুদ খুনি চক্রের অন্য সদস্যদের কোরআন ছুঁয়ে শপথ করায়, যাতে এই ঘটনা প্রকাশ না করে।
শনিবার সন্ধ্যায় দুই আসামি মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে জবানবন্দি দেন। শুক্রবার রাতে দুইজনকে নগরীর টাইগারপাস এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছরের ১৫ জুলাই খুলশী থানার আমবাগান এলাকার মেহের মঞ্জিল নামে একটি ভবনের পানির ট্যাংক থেকে ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা (৬৭) ও তার ৯৪ বছর বয়সী মা মনোয়ারা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার আইও ইলিয়াছ খান বলেন, ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ মাসুদুর রহমান আমেরিকায় যান। তাকে আমেরিকায় পাঠানোর সব ব্যবস্থা করেন বড় বোন মেহেরুন্নেসা। কিন্তু আমেরিকায় যাওয়ার আগে মেহেরুন্নেসা মাসুদুরের কাছ থেকে তার সম্পত্তি নিয়ে নেয়। মাসুদুর প্রথমে বিয়ে করেন এক পাকিস্তানি নাগরিককে। কিন্তু মেহেরুন্নেসার পছন্দ না হওয়ায় তাকে তালাক দিতে বাধ্য হয়। পরে মাসুদুর আবার খুলশীতে তাদের বাড়ি ফেরতের পাঁয়তারা করেন। সব মিলিয়ে বোনের ওপর ক্ষোভ থেকে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। বোনকে খুন করতে গিয়ে মাকেও মেরে ফেলে, এমন তথ্যও পুলিশের কাছে রয়েছে বলে জানান আইও।
হত্যাকান্ডের আটদিন পর মেহেরুন্নেসার ভাইপো ও মনোয়ারার নাতি মুশফিকুর রহমানকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়েছিল। মুশফিক মনোয়ারার মেজ ছেলে মতিউর রহমানের ছেলে। ২০০৪ সালে মতিউর মারা যাওয়ার পর মুশফিকের মাকে বিয়ে করেন তার সেজ চাচা মোস্তাফিজুর রহমান। হত্যাকান্ডের পর এই মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মেহেরুন্নেসা ও মনোয়ারার কাছে বড় হন মুশফিক। কিন্তু তাদের অমতে বিয়ে করায় তাকে মেহের মঞ্জিল ছাড়তে হয়েছিল। এ নিয়ে দাদি-ফুপুর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি।
আইও ইলিয়াছ বলেন, মুশফিক বখে গিয়েছিল। এজন্য মেহেরুন্নেসা তার মাকে দায়ী করেছিলেন। কারণ মা মুশফিককে রেখে দেবরকে বিয়ে করেছিলেন। হত্যাকান্ডের আগে মুশফিকের মাকে মারধর করেন মেহেরুন্নেসা। মুশফিক এ বিষয়ে আমেরিকায় চাচা মাসুদুরের কাছে বিচার দিয়েছিল। মাসুদুরও এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে মুশফিকুরকে উসকানি দিয়ে ফুফুর উপর ক্ষুব্ধ করে।
এই ঘটনায় মো. মুসলিম (২৫), মেহেরুন্নেসার প্রতিবেশী মো. মাসুদ রানা (৩৯) ও বিএনপি নেতা মো. শাহাবউদ্দিন ওরফে সাবু ওরফে মুছাকে (৩৭) গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালতে দেওয়া মুন্না ও মাহফুজের জবানবন্দিতে এসেছে- শাহাবউদ্দিন সাবু’র বাসায় বসে ছয়জন মিলে হত্যার পরিকল্পনা হয়, যার মধ্যে মাসুদুর ও মুশফিকও ছিল। মাসুদুরের পরিকল্পনা ছিল- মায়ের কাছ থেকে খুলশীর ওই বাড়ির দানপত্র আদায় করা। তারপর শাহাবউদ্দিন সাবু’র মাধ্যমে সেটি তিন কোটি টাকায় বিক্রির কথা ছিল। মা ও বোনকে খুন করতে পারলে সেটি সহজে দখলের পরিকল্পনা থেকে তারা এই ঘটনা ঘটায়।
হত্যাকান্ডের ওই রাতে সাড়ে ১২টার দিকে মাসুদুর নিজেই বাসার দরজায় টোকা দিলে মেহেরুন্নেসা দরজা খুলে দেয়। এ সময় মেহেরুন্নেসা বলেন, তুই বিদেশ থেকে হঠাৎ দেশে কেন?’ এ সময় মাসুদুর মেহেরুন্নেসার কাছ থেকে সম্পত্তির দুটি দলিলে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মেহেরুন্নেসা স্বাক্ষর দিতে না চাইলে তাকে গলাটিপে ধরে এবং মুশফিক পিঁড়ি দিয়ে তার ফুফুর মাথায় আঘাত করে।
সবাই মিলে তাকে হত্যা করে লাশ ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর মেহেরুন্নেসার মা মনোয়ারাকে হত্যার জন্য মাসুদুরের নেতৃত্বে সবাই তার কক্ষে ঢোকে। মাহফুজসহ কয়েকজন মাকে হত্যা না করার অনুরোধ করলে মাসুদুর বলে- এই বুড়িকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই। এরপর মনোয়ারার হাত বেঁধে তাকে সিঁড়ির কাছে আনার পর তিনি চিৎকার দিলে শাহাবউদ্দিন সাবু তার পেটে লাথি মারে। মাসুদ তার গলা টিপে ধরার জন্য মুসলিমকে (পরে গ্রেফতার) নির্দেশ দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মনোয়ারার লাশও ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Muhammed Washim ২৭ মে, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
ছি ছি,,,কি করবি এসব টাকা দিয়ে,,বাড়ি দিয়ে,,,ইসসস,,,দেশে যদি আইন থাকত,, তাহলে এদের সবকটার ফাসি হত
Total Reply(0)
KS Zaman ২৭ মে, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
লোভে পাপ,পাপে মৃত্যু।।
Total Reply(0)
Tohidul Islam Arafat ২৭ মে, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
Keyamot very soon
Total Reply(0)
Omar Faruk ২৭ মে, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
সম্পত্তি মাণুষকে আর কত অমাণুষ বানাবে। যে খানে গর্বদারিনি মাও নিরাপদ না। হ্যায়রে দূনিয়া
Total Reply(0)
Sazedur Rahman ২৭ মে, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
মৃত্যুর পর তো সম্পদের মালিক ছেলেই হত!
Total Reply(0)
Darpan Marma ২৭ মে, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
Shompotti kandhe niye ekhon saare tin haat maatir vitor jete prostoot hou
Total Reply(0)
শাহ্ মিজান ২৭ মে, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
কুফরি করে কুরআন ছুঁয়ে শপত নিলেই কেও মুমিন হয় না।যদি দোষ স্বিকার করে কুরআন অনুযায়ী চলতো তাইলে ঠিক ছিলো
Total Reply(0)
Dinar Islam ২৭ মে, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
হাইরে হতভাগা শয়তান সম্পত্তির জন্য মা আর বোন কে মারলি তোর জাহান্নামে জায়গা হবে
Total Reply(1)
Murad chy ২৭ মে, ২০১৯, ৫:৪৯ এএম says : 4
eder Jannat jahannamer poroya nei..era duniyate sudhu taka poisa cine
Shohag Bhuiyan ২৭ মে, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
আহা রে সম্পত্তি জন্য নিজের মা ও বোনকে খুন করে ফেলে কতটা নরপিচাশ ছেলে । একবার মরে দেখ সম্পত্তি কবর নিয়ে যেতে পারিস কিনা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন