শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

প্রধানমন্ত্রী পদে মোদির শপথ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায়

শান্তি আলোচনায় বসতে মোদিকে ইমরানের টেলিফোন : সন্তানদের প্রার্থী করায় দলীয় নেতাদের সমালোচনায় রাহুল গান্ধী : গো-রক্ষকদের থামানোর আহ্বান ওয়াইসির

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৯, ১:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে আগামী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে সন্ধে ৭টায় শপথ নেবেন। প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ গতকাল রোববার টুইট করে এই কথা জানিয়েছেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে এসেছিলেন। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়লাভ করে। ৫৪৫টি আসনের মধ্যে ৩৫২টি আসন পায় তারা। সম্ভাব্য নতুন মন্ত্রী কারা, সে ব্যাপারে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে। তবে মোদী ও তার সহকারী অমিত শাহ সম্ভবত একঝাঁক নতুন মুখকে মন্ত্রী হিসেবে বেছে নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ২ থেকে ১৮টি পদে উত্থানের পরে আশা করা হচ্ছে সেখান থেকে অনেককে প্রতিনিধি বাছা হতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহ এখনও পর্যন্ত ‘বিগ ৪’ অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র, অর্থ, বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কারা হবেন সে ব্যাপারে কোনও ইঙ্গিতই দেননি।
সকলের নজর থাকবে সিনিয়র বিজেপি নেতা অরুণ জেটলিকেই অর্থমন্ত্রী হিসেবে রেখে দেয়া হয়, নাকি তার ভগ্ন স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে রেল ও কয়লামন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দায়িত্ব দেয়া হবে সেই দিকে। ৫৪ বছরের গয়াল এর আগে জেটলির অসুস্থতার সময় দু’বার ওই দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাময়িক ভাবে। নির্বাচনের আগে বাজেট পেশ করেছিলেন তিনি। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরের সম্পূর্ণ বাজেটটি পেশ করার কথা।
বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি অমেথীতে রাহুল গান্ধীকে হারানোর পুরস্কার হিসেবে আরও ভারী কোনও দফতর দেয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই কেন্দ্র গত চার দশক ধরে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। রাহুল নিজে ওখান থেকে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। স্মৃতির পাঁচ বছর লাগল তাকে ওখান থেকে পরাস্ত করতে, ২০১৪ সালে তিনি রাহুলের কাছে হেরে গেলও বৃহস্পতিবার পাল্টা জয় পেয়েছেন।
শান্তি আলোচনায় বসতে মোদিকে ইমরানের টেলিফোন
শান্তি আলোচনায় বসতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গতকাল (রোববার) টেলিফোনে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান ইমরান। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ১৪ ফেব্রুয়ারি হামলার ঘটনার পরে এই প্রথম টেলিফোনে কথা বললেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ট আসন নিয়ে জয়ী হওয়ার পর দেশটির প্রাধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টুইটারে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ইমরান খান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চান ভারতের দ্বিতীয়বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি জানিয়েছেন। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, নিজেদের বিশ্বাস বাড়াতে হবে, হিংস্রতামুক্ত এবং সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় দেশ তাদের জনগণের কল্যাণে একত্রে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
সন্তানদের প্রার্থী করায় দলীয় নেতাদের সমালোচনায় রাহুল গান্ধী
লোকসভা নির্বাচনে চরম ব্যর্থতা পর্যালোচনা করতে শনিবার এক বৈঠকে মিলিত হন দলের নেতারা। কংগ্রেস নেতারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা রাহুলের পদত্যাগের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে নির্বাচনে ভরাডুবি দলের ভেতরেও সমস্যা তৈরি করেছে। চার ঘণ্টার বৈঠকে রাহুল গান্ধী কয়েকজন সিনিয়র কংগ্রেস নেতাকে উদ্দেশ্য করে কড়া ভাষায় কথা বলেন। নিজেদের সন্তানদের প্রার্থী করায় তাদের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। নেতারা নিজেদের ছেলেদের প্রার্থী হিসেবে দলের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাহুল।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের ছেলে বৈভব যোধপুরে ২.৭ লাখেরও বেশি ভোটে হেরে যান বিজেপি প্রার্থী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের কাছে। যদিও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের ছেলে নকুল নাথ ছিনদ্বারা লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হন কংগ্রেসের টিকিটে। পি চিদাম্বরমের ছেলে কার্তি চিদাম্বরমও তামিলনাডুর শিবগঙ্গা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন।
রাহুলের স্পষ্ট কথার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল, তার বিশ্বাসভাজন উপদেষ্টা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার একটি মন্তব্য। দলে স্থানীয় নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে ওই মন্তব্য করেন সিন্ধিয়া। তবে রাহুল কারও নাম নেননি বলে জানা যাচ্ছে।
ডিসেম্বরে কংগ্রেস তিনটি রাজ্যে জয়লাভ করে রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশ। ওই সব রাজ্যে ঋণের দায়ে জর্জরিত কৃষদের দুর্গতি, শস্যের দাম বৃদ্ধির ফলে বিজেপি-বিরোধিতা বেড়ে যাওয়ায় ফল রাহুলদের পক্ষে গিয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের আত্মপ্রসাদ লাভ ও অন্তর্দ্ব›েদ্বর ফলে পাঁচ মাসের মধ্যে তারা সেই জয়ের থেকে সুবিধা নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। ৫২ সদস্যের কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকে রাহুল জানান, দেড় বছর আগে মা সোনিয়া গান্ধীর পর প্রাপ্ত দলের সর্বোচ্চ পদটি তিনি ছেড়ে দিতে চান। বিপুল পরাজয়ের ধাক্কায় পর্যুদস্ত কংগ্রেসের নেতারা বারবার তাদের প্রধান নেতার কাছে আবেদন করতে থাকেন নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য।
সূত্র বলছে, পি চিদাম্বরম রাহুলকে পদত্যাগ না করার ব্যাপারে অনুরোধ জানাতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এর ফলে অনেক সমর্থক, বিশেষত দক্ষিণের, যারা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে তারা কোনও ‘চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ নিতে পারে। রাহুল গান্ধী অবশ্য বারবারই বলেছেন যে, তিনি মোটেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছেন না এবং দলের হয়ে তিনি কাজ চালিয়ে যাবেন।
প্রতিবাদী কংগ্রেস নেতারা প্রশ্ন করেন, ‘যদি তুমি না হও, তবে কে?’ এ প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নাম উঠে এলে রাহুল বলতে থাকেন, ‘আমার বোনকে এর মধ্যে টানবেন না।’ তিনি জানিয়ে দেন, ‘এটা জরুরি নয় যে, সভাপতি গান্ধী পরিবারের কাউকেই হতে হবে।’
গো-রক্ষকদের থামান, সংখ্যালঘুরা ভয়ে আছে : মোদিকে মুসলিম সাংসদ ওয়াইসি
অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ভারতের সংখ্যালঘুরা ভয়ভীতি নিয়ে বসবাস করছে। নরেন্দ্র মোদি যদি সত্যিই সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকতেন, তাহলে মুসলমানদের নির্যাতন করা থেকে গো-রক্ষকদের বাধা দিতেন।
শনিবার পার্লামেন্টের কেন্দ্রীয় সভাকক্ষে নরেন্দ্র মোদি জানান, দরিদ্রদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, সংখ্যালঘুরাও একইভাবে প্রতারিত হয়েছে একসময়। বর্তমানে তাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। বিজেপি সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে।
আসাদুদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, মুসলমানরা যদি ভারতে নির্ভয়ে থেকে থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কি আমাদের জানাতে পারবেন যে, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি থেকে জয়ী তিন শতাধিকের মধ্যে কতজন মুসলিম প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন?
গত পাঁচ বছর ধরে বিজেপি যে ধরনের রাজনৈতিক চর্চা করছে সেটার সঙ্গে মোদি এবং তার পার্টির বক্তব্য একেবারেই বৈপরীত্য তৈরি করে। এটা হিপোক্রেসি ছাড়া আর কিছুই নয় বলেও মনে করেন তিনি।
আসাদুদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালে যারা আখলাককে হত্যা করেছে (গরুর গোশত রাখার অভিযোগে), মোদির পার্লামেন্টে তাদের সামনের সারির আসনগুলোতে দেখা গেছে। মোদি যদি সত্যিই মুসলমানদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হতেন, তাহলে ক্যাডারদের থামাতেন। গরু রক্ষার নামে যারা মানুষদের পেটাচ্ছে, মুসলমান মারছে, ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিচ্ছে, তাদের থামাতেন।
আসাদুদ্দিন আরো বলেন, আমাদের বিধানে মানুষের জীবন ধারণের অধিকার রয়েছে, পশুর নয়। আমি নিশ্চিত যে, প্রধানমন্ত্রী যদি এসব অনুধাবন করতেন, তাহলে সংখ্যালঘুদের ভয় চলে যেত।
এ ব্যাপারে মধ্যপ্রদেশের সিওনি জেলায় গত সপ্তাহে গরুর গোশত রাখার অভিযোগে তিন যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধরের প্রসঙ্গও তোলেন হায়দরাবাদের এই সাংসদ। সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন