শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

মুনাফা কমেছে ব্যাংকিং খাতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৯, ১২:৪১ এএম

২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতের নিট মুনাফা ৫৭.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্পদের বিপরীতে আয়-হার ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমে ০.৩ শতাংশে এবং মূলধনের বিপরীতে আয়-হার ৬০০ বেসিস পয়েন্ট কমে ৪.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৮’-তে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রিপোর্টটি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গভর্নর ফজলে কবির রিপোর্টটির মোড়ক উন্মোচন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, চেইঞ্জ ম্যানেজমেন্ট এ্যাডভাইজর আল্লাহ মালিক কাজেমি, ব্যাংকিং রিফর্ম এডভাইজর এস. কে. সুর চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর কমিশনার অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা, ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক ড. শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর সহ-সভাপতি শফিকুল আলম, বাংলাদেশ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এসোসিয়েশন এর প্রতিনিধি জনাব আরিফ খান। প্রতিবেদনটির ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট এর মহাব্যবস্থাপক ড. মো. কবির আহাম্মদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন একই বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জনাব মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন।

ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের তারল্য পরিস্থিতি ২০১৮ সালে তুলনামূলক চাপের মুখে ছিল। বছর শেষে আগাম-আমানত অনুপাত বেড়ে ৭৭.৬ শতাংশে উন্নীত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরি পলিসিতে নির্ধারিত সীমার মধ্যেই ছিল। এই সময়ে কলমানি হারে মিশ্র প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়, যা ডিসেম্বর ২০১৮-তে দাঁড়ায় ৪.১ শতাংশ।

রিপোর্টটিতে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে ২০১৮ সালে মোট শ্রেণিকৃত ঋণের হার ছিল ১০.৩ শতাংশ এবং নিট শ্রেণিকৃত ঋণের (রক্ষিত প্রভিশন সমন্বয়ের পর) হার ২.২ শতাংশ ছিল। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট শ্রেণিকৃত ঋণের হার ৬০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৫.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গভর্নর বলেন, বৈশ্বিক শ্লথ প্রবৃদ্ধির হার ও নানামুখী ঝুঁকি সত্তে¡ও নি¤œমুখী মুদ্রাস্ফীতি, রেমিটেন্স ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রবৃদ্ধি সহায়ক নীতিমালার পাশাপাশি শক্তিশালী রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততা ও তারল্য ন্যূনতম আবশ্যকীয় হারের চেয়ে বেশী ছিল। তিনি ব্যাংকিং খাতে পুঞ্জীভূত মন্দঋণ কমাতে ব্যাংকারদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি: রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি সহনীয় মাত্রায় ছিল। সার্বিক ঝুঁকি পরিমাপক নির্দেশক সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকিং খাতের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের মধ্যে ঋণঝুঁকির পরিমাণ ছিল ৮৮ শতাংশ। করপোরেট প্রতিষ্ঠানসম‚হের ক্রেডিট রেটিং অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থিতিশীল ছিল এবং ব্যাংকিং খাতে সুদের হার, মুদ্রা বিনিময় হার, ইকুইটি মূল্য এবং তারল্যের ওপর স্ট্রেস টেস্টের অভিঘাত সহনক্ষম ছিল।

ব্যাংকিং খাতের কর্মদক্ষতা: রিপোর্টটিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের সমাপনান্তে ব্যাংকিং খাতের সম্পদ ১১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণ ও আগাম ১৪.১ শতাংশ এবং আমানত ১০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতে মূলধন ও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত কিছুটা কমে ১০.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা আবশ্যকীয় ন্যূনতম হার (১০ শতাংশ) অপেক্ষা বেশি।

বৈদেশিক মুদ্রা বাজার: ২০১৮ সালে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হ্রাস পেয়েছে। মূল্যমানের হিসেবে আমদানি ঋণপত্র খোলা ২০১৭ সাল অপেক্ষা কমলেও নিষ্পত্তি ৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৮ সালে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। রিপোর্টটিতে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সার্বিকভাবে স্থিতিশীল ছিল। প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরে ৭.৩ শতাংশ ছিল। ২০১৮ সাল সমাপনান্তে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৫ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের স্থিতি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা কমে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

আলোচ্য অর্থবছরে রফতানি বাণিজ্য এবং ওয়েজ আর্নার’স রেমিট্যান্স যথাক্রমে ৬.৪ ও ১৭.৩ শতাংশ বাড়লেও আমদানি বাণিজ্য ২৫.২ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি ৯.৮ বিলিয়ন ডলারে (যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ) দাঁড়িয়েছে। চলতি হিসাবের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঋণাত্মক প্রবণতা দেখা দেয়।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন