শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রাখাইনে নতুন যুদ্ধাপরাধ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধের জন্য বিশ্ব সমাজের প্রতি আহ্বান জাতিসংঘের

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৯, ১২:০৯ এএম

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করার জন্য বিশ্ব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এই বিশ্ব সংস্থার তদন্ত কমিটি বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ চালানোর পাশাপাশি ‘মানবতা বিরোধী অপরাধ’ করেছে। কাজেই বিশ্ব সমাজকে এই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন (সাবেক আরাকান) প্রদেশে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের কারণে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এই মুসলিম জাতির ভাগ্য উন্নয়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অপর এক খবরে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নতুন করে যুদ্ধাপরাধ করছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার গ্রুপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বুধবার লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপটির নতুন এক প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, বিনা বিচারে আটকের অভিযোগ তোলা হয়েছে। নৃতাত্তি¡ক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অধিকার আদায়ে লড়াইরত এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সেনাবাহিনী এসব অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে অ্যামনেস্টি। সংঘাত কবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে আসা বহু মানুষের সাক্ষাৎকার এবং ছবি, ভিডিওচিত্র ও স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে নতুন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি। তবে রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগের মতো এই অভিযোগও অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

জাতিগত সংঘাত ও দারিদ্র্য-জর্জরিত রাখাইনে কেবল রোহিঙ্গারাই একমাত্র নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠী নয়। রাখাইন বৌদ্ধরা (আরাকান জাতিভুক্ত)-সহ সেখানকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সেনাপ্রাধান্যশীল কেন্দ্রীয় সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়। কেবল রোহিঙ্গা ছাড়া বাদবাকি সব জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতির প্রশ্নকে সামনে রেখে রাখাইন রাজ্যে নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে আরাকান আর্মি। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে এই সরব ভূমিকা বিশেষত রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা অভিযানের পর চলতি বছরের শুরুতে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা জোরালো করে আরাকান আর্মি। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে আরাকান আর্মিবিরোধী অভিযান জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বুধবার প্রকাশিত অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর নির্বিচার হামলায় রাখাইনের বেসামরিক মানুষ নিহত ও আহত হচ্ছে।

অ্যামনেস্টির পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক পরিচালক নিকোলাস বেকুলিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতার নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আবারও রাখাইন রাজ্যে নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ নিপীড়ন চালাচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে নতুন অভিযান স্পষ্ট করেছে যে একটি অনুতাপ ও সংস্কারহীন সামরিক বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর কীভাবে সন্ত্রাস চালাচ্ছে আর বিভিন্ন কৌশলে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটাচ্ছে’। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে সাতটি বেআইনি হামলার ঘটনায় ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ২৯ জনেরও বেশি আহত হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনে নির্যাতন, গুম ও বিনা বিচারে আটকের ঘটনারও বর্ণনা রয়েছে ওই প্রতিবেদনে। গত মাসে ছয় নিরস্ত্র বন্দিকে আটকের স্বীকারোক্তি দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের দাবি নিরস্ত্র এসব ব্যক্তিরা সেনা সদস্যদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হত্যায় বাধ্য হয় তারা। তারপরও অ্যামনেস্টির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাউ মিন তুন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন সেনাবাহিনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয় আর বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়িয়ে চলে। তিনি বলেন, ‘সেখানে সন্ত্রাসী নির্মূলে অভিযান চলছে। কোনও যুদ্ধাপরাধ সংঘটন না করার বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি’। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে ছোট আকারের হলেও আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অপহরণসহ বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে। তবে গোষ্ঠীটির এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, আমি জোরালোভাবে বলছি এধরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। রয়টার্স, এএফপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Rifat Rahil ৩১ মে, ২০১৯, ৩:৫২ এএম says : 0
জাতিসংঘের আহবানে বার্মিজ দের কিছু যায়ও না,আসেও না।ওদের কাজ ওরা ঠিকই করে যাচ্ছে।
Total Reply(0)
ব্লাক ডায়মন্ড ৩১ মে, ২০১৯, ৩:৫২ এএম says : 0
ওই হারামিরাই তো নাটের গুরু।
Total Reply(0)
Saiful Alom Nazrul ৩১ মে, ২০১৯, ৩:৫২ এএম says : 0
জাতিসংঘকে এদের বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে,সম্ভব না হলে জাতিসংঘ ভেঙ্গে দিন।।
Total Reply(0)
Golam Rabbani ৩১ মে, ২০১৯, ৩:৫২ এএম says : 0
জাতিসংঘ বলে কিছু আছে? এইসব সংঘ মিডিয়ার তৈরি
Total Reply(0)
Kazi Afsari Nur ৩১ মে, ২০১৯, ৩:৫২ এএম says : 0
নীতি কথায় কাজ হবে না, ডাইরেক্ট একশান করতে হবে।
Total Reply(0)
Metaphysician Zahed ৩১ মে, ২০১৯, ৩:৫৩ এএম says : 0
what I say,note it.The chain of command of mayanmar armies must be scuttered, Mayanmar Will be divided into seven parts immediately insha-Allah, The Arakan will achieve independence finally insha-Allah.
Total Reply(0)
Saiful Alom Nazrul ৩১ মে, ২০১৯, ৩:৫৩ এএম says : 0
জাতিসংঘ নামক অকর্মা সংঘ এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক না হয় জাতিসংঘ ভেঙ্গে দিক। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে,বিশ্বে নির্যাতীত-নিপীড়িত মুসলমানদের নিয়ে তাদের কোনই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই,তাদের সব কিছু অমুসলমানদের ঘিরে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন