শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতে মুসলমানদের উপর হামলার ঘটনা বাড়ছে

চায়না ডেইলি | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৯, ১১:০০ এএম

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘটনাগুলো হচ্ছে আগ্রাসী নির্বাচনী প্রচারণার কুফল।
ভারতের এক হকার মোহাম্মদ কাসিম কখনো ভাবেননি যে তিনি অনলাইনে একটি পরিচিত মুখ হয়ে উঠবেন।
উত্তর পূর্ব ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল মধ্য বিহারের বেগুসরাই জেলার বাসিন্দা মুসলিম হকার কাসিম রবিবার বাইকে করে আষপাশের গ্রামগুলোতে ডিটারজেন্ট পাউডারের প্যাকেট বিক্রি করতে বেরিয়েছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি তার নাম জিজ্ঞেস করে।
কাসিম বলেন, আমি নাম বলার সাথে সাথে সে অশ্রাব্য ভাষায় আমাকে গাল দিতে শুরু করে। তারপর জিজ্ঞেস করে, তুমি কি করছ এখানে? তোমার তো পাকিস্তানে থাকা উচিত।
কয়েকদিন আগে অনুিষ্ঠত ভারতের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করে।
আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে পিস্তল বের করে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি আমার পিঠে লাগে। দেখলাম, সে আবার গুলি ছুড়তে যাচ্ছে। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসি।
এ ঘটনা যখন ঘটে তখন একজন পথচারী তা ভিডিও করেন। তারপর ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
কাসিম বলেন, লোকটি যখন পিস্তল নিয়ে তার উপর হামলা চালায় তখন গ্রামবাসীদের কেউই তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। ঘটনার পর তিনি ক্ষতস্থানে একটি কাপড় পেঁচিয়ে ও শরীর থেকে রক্ত বের হতে থাকা অবস্থায় স্থানীয় থানায় যান। পুলিশ তার অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
মুসলমান নাম বলার সাথে সাথে কাসিমের গুলি খাওয়ার ঘটনায় দেশের বহু লোক দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ভারতের সমাজ বিজ্ঞানী শচীন্দ্র নারায়ণ বলেন, এ ধরনের ঘটনা হচ্ছে মাসব্যাপী নির্বাচনের সময় আগ্রাসী নির্বাচনী প্রচারণার পরিণতি। শুধু রাজনৈতিক লাভ পাবার জন্য অন্য সম্প্রদায় সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য সমাজে অবিশ^াস বৃদ্ধির কারণ হয়েছে।
পুলিশ কাসিমের উপর হামলাকারীকে সন্ধান করছে। স্থানীয় সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নীরাজ কুমার সিং বুধবার বেগুসরাইতে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মামলা নিয়েছি। পলাতক হামলাকারীকে গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।
নয়াদিল্লীর কাছে অর্থনৈতিক ও কারিগরি কেন্দ্র গুরুগ্রামের ঘটনা। শনিবার রাতে শহরটির বাসিন্দা মোহাম্মদ বরকত আলম তারাবি নামাজ শেষে স্থানীয় মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় একদল হামলাকারী হাজির হয়।
দি হিন্দু সংবাদপত্রকে মোহাম্মদ আলম বলেন, তারা আমাকে টুপি পরার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিল। বলল, আর টুপি পরা চলবে না। মাথা থেকে ওটা খুলে ফেল। আমি টুপি খুলতে অস্বীকার করায় তারা আমাকে মারধর করল, তারপর টুপি খুলে নিল। তারপর বলল, জয় শ্রী রাম বল। আমি বলতে রাজি না হওয়ায় আমাকে শূকরের মাংস খাওয়ানোর হুমকি দিয়ে চলে গেল।
ভারতের মধ্য প্রদেশে গো রক্ষকরা গরুর মাংস বহন করার সন্দেহে তিনজন মুসলমানকে একটি গাছের সাথে বেঁধে প্রচন্ড মারধর করে। ২২ মে এ দুঃখজনক ঘটনা ঘটলেও ২ দিন পর এ ঘটনার একটি ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তা জানা যায়। পুলিশ ঐ তিন মুসলিমকেই গ্রেফতার করেছে এ যুক্তিতে যে মধ্য প্রদেশে গরুর মাংস রাখা, বহন করা বা বিক্রি করা আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ। নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কিছুই করেনি।
ছাত্রনেতা কানহাইয়া এ জন্য কিছু রাজনীতিককে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, নেতারা ও তাদের বোড়েরা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ঘৃণা ছড়ান। তারাই এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী।
বিশেষজ্ঞরা এ সব ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে দেখছেন ও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। দিল্লি ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অজয় ঝা বলেন, এবার প্রধানমন্ত্রী মোদি পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। তাকে এখন প্রমাণ করতে হবে যে এক ভারত, এক জাতি শুধু স্লোগান নয়। তাকে এটা বাস্তবেও প্রমাণ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন