ভাঙছে নদী, ভাঙছে জনপদ, ভাঙছে হাজারো মানুষের কপাল, হারাচ্ছে তাদের আপন ঠিকানা। যমুনার তীব্র ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে কেউ হয়েছে পথের ভিখারী, কেউ বনে গেছে লাঠিয়াল, কেউ হারিয়েছেন তাদের ভোটের ন্যায্য অধিকার। নদী ভাঙনের জন্য শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় নি।
প্রতিবছর শুষ্ক ও ভরা বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙে এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শুষ্ক মৌসুমেই শুরু হয়েছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও তাঁত সমৃদ্ধ চৌহালীতে তীব্র নদী ভাঙন। বøক ফেলা, জিও ব্যাগ ফেলা, নদীতীর রক্ষা ও গ্রোয়েনের মত শক্ত কাঠামো ভাঙন থেকে বাদ পড়ছে না। চৌহালীতে একই স্থানে ১৫/১৬ বার ভেঙেছে। জেলার কাজিপুরে চলছে একই অবস্থা। যমুনায় পানি বাড়ার সাথে সাথে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। কাজিপুর সদর ইউনিয়নের সিংড়াবাড়ি সলিডস্পারে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে ভাটিতে অবস্থিত গান্ধাইল ইউনিয়নের বাঐখোলা, পাটাগ্রাম ও শুভগাছা ইউনিয়নের জনগণ।
ভাঙন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভাঙনের ভয়াবহতা। প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, ‘হঠাৎ করেই সিংড়াবাড়ি ও তার ভাটিতে কয়েকদিন যাবৎ ব্যাপকভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিনদিনে সিংড়াবাড়ি সলিডস্পারের ভাটিতে ও উজানে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে স্পারের গোড়ার মাটি প্রায় একশ মিটার ধসে গেছে। স্পারের ভাটিতে এবং উজানে আরও বেশী পরিমাণ মাটি সরে যাওয়ায় স্পারটি যেকোন সময় ধসে যেতে পারে। ভাঙন এলাকার স্থানীয়রা জানান, গত বছর এভাবেই স্পারে ভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রায় ১০ হাজার বালি বোঝাই জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং করায় ভাঙন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছিল। তাদের অভিযোগ, এবার স্পারে এতবড় ক্ষতি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ভাঙন রোধে কার্যকরি কোন ব্যবস্থা নেননি।
পূর্ব খুকশিয়া গ্রামের আবুল কালাম জানান, গত ৩০ বছরে একাধিকবার যমুনার ভাঙনের শিকার হয়ে অবশেষে স্পারের ভাটিতে মাথাগুজে পড়ে আছি। এ জায়গা ভেঙে গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। পাটাগ্রাম, খুকশিয়ার ভুট্ট, শাহিন, চানমিয়াসহ অনেকেই এই দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত যাপন করছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, ভাঙন ঠেকাতে টেÐার প্রক্রিয়া চলছে। তবে জরুরী হলে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে ৩/৪ টি বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়লে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে স্থানীয় লোকজন ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা দক্ষিন অঞ্চলে ভাঙছে নদী, বিলীন হচ্ছে-চিরচেনা বসতভিটা-ফসলি জমি, আর কাঁদছে মানুষ। এক সময়ের বিত্তশালীরা অসহায় হয়ে খুঁজছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। অসময়ে নদী ভাঙনের এমন চিত্র উপজেলার দক্ষিন অঞ্চলে খাষপুকুরিয়া, শাকপাল, রেহাইপুখুরিয়া, মিটুয়ানি, বাঘুটিয়া, চরসলিমাবাদ ও ভুতেরমোড় এলাকায়। বর্ষা যতই ঘনিয়ে আসছে নদী ভাঙন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকা সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দেড় মাসের ব্যবধানে নদীর পুর্ব তীরে অবস্থিত রেহাইপুখুরিয়া গ্রাম থেকে দক্ষিণে ভুতের মোড় পর্যন্ত নয়টি গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটা, বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকশ’ শতাধিক হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার রেহাইপুখুরিয়া পশ্চিম পাড়া, খাষপুখুরিয়া ও চরসলিমাবাদ ভুতেরমোড় গ্রামে চলে ভয়াবহ ভাঙন। একে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, বসতভিটা ও ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়ছে মানুষ। খোলা আকাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকে। চিরচেনা বসতভিটা-ফসল জমি হারিয়ে পথের ফকির হতে বসেছে অনেকেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহির জানান, চৌহালী নদী ভাঙন কবলিত এলাকা। ভাঙছে নদী কাঁদছে মানুষ। এখানে দ্রæত ভাঙন রোধে কাজ করা জরুরি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন