বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঠেঙ্গামারা মম ইন পার্ক পাউবোর জমিতে

জমি উদ্ধারে ডিসি ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে মন্ত্রণালয়ের চিঠি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে মম ইন নামের বেসরকারি সংস্থার টিএমএসএস একটি পার্ক। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতর, সড়ক বিভাগ, ভূমি অফিস অবৈধ স্থাপনাটি উচ্ছেদে একমত হলেও অজ্ঞাত কারণে এক মত পারছে না স্থানীয় জেলা প্রশাসন। বরং বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়ে অবৈধ স্থাপনাটি রক্ষায় শেষ চেষ্টা করছেন ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতর প্রধানকে বিবাদী করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি।
এদিকে সরকারি জমি উদ্ধারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার ইনকিলাবকে বলেন, বগুড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে বেসরকারি সংস্থার টিএমএসএস একটি পার্ক নির্মাণ করেছে। বিষয়টি অবগত আছি। নদী অবৈধ দখল উচ্ছেদ বন্ধ করা হয়নি। ঈদের পরে আবারো শুরু হবে। জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার আসার পর সারাদেশের নদী দখলমুক্ত করে আপনরূপ ফিরিয়ে আনতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তৎপর হয়ে উঠে। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গা, তুরাগনদীর তীর দখলমুক্ত করতে দফায় দফায় অভিযান চালানো হয়েছে এবং এখনও চলছে। এসব অভিযানে নদীগুলোর বিরাট অংশ ইতোমধ্যে দখলমুক্ত হয়েছে।
সরকার এবং মন্ত্রণালয়ের কড়াকড়ি নির্দেশনার পর করতোয়া নদী দখলমুক্ত করতে তৎপর হয়ে উঠে স্থানীয় প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে গত এপ্রিল মাসে বগুড়া সদরের নওদাপাড়ার বারবাকপুর মৌজায় করতোয়া নদীর ডানতীরে ঢালের উপর নির্মিত পার্কগেটের মালিকানা নির্ধারণের জন্য টিএমএসএস’র একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারকে সরেজমিন পরিমাপ করে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। ওই সময় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার সময় নির্ধারণ করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার জন্য টিএমএসএস’কে চিঠি দেন বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড’র (পওর) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ। ৮ এপ্রিল সওজ, ভূমি সার্ভেয়ার, জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং টিএমএসএস’র প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বারবাকপুর মৌজার ৬৪০৫ নং দাগে সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত করতোয়া নদীয় সীমানা সিএস নকশা অনুসারে সরেজমিন পরিমাপ করা হয়। পরিমাপে দেখা যায়- ৬৪০৫ নং খাস খতিয়ানভুক্ত করতোয়া নদীর সিংহভাগ টিএমএসএস’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান মম ইন পার্কের স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। অবৈধ অংশের স্থাপনাটির পরিমাণ ০.০৬০৬ একর। অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করার পর তা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানান পওর নির্বাহী প্রকৌশলী।
উচ্ছেদ অভিযানের তৎপরতা বুঝতে পেরে ৯ এপ্রিল জমির জরিপ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের উপর নারাজিনামা দেন টিএমএসএস নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম। একই সঙ্গে পওর নির্বাহী প্রকৌশলী অবস্থান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। চিঠিতে ড. হোসনে আরা বেগম দাবি করেন- জরিপকালে জেলা প্রশাসনের লোকজন টিএমএসএস’র প্রতিনিধির সঙ্গে পরিচিত হয়নি এবং জরিপের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনাও করেননি। পওর নির্বাহী প্রকৌশলী একতরফাভাবে জরিপ করেন এবং ঐ রাতেই অধিনস্ত জনবলের নিকট থেকে তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করে পরের দিন ৯ এপ্রিল উচ্ছেদ প্রস্তাবনা দাখিল করেন। এর একদিন পরই ১০ এপ্রিল বগুড়া জেলা প্রশাসক, পওর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করে টিএমএসএস। মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৭ জুন শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
টিএমএসএস একটি ক্ষুদ্রঋণ ভিত্তিক এনজিও বগুড়ায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে। এটি একটি নারীভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এবং দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিধি মোটামোটি সারাদেশে বিস্তৃত হলেও মূল কর্মযজ্ঞ বগুড়া কেন্দ্রিক। টিএমএসএস উদ্যোগে বগুড়া শহরসহ আশপাশে গড়ে উঠেছে বহু কল্যাণমূলক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান করতে বিভিন্ন সময়ে সরকারি খাস জমি দখলসহ স্থানীয়দের জায়গা নামমাত্র মূল্যে দখল করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে অনেক।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, জায়গাটি দখলে রাখতে টিএমএসএস শুরু থেকেই অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করেছে আবার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। জরিপ একতরফা হওয়ার সুযোগ নেই।
বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ ইনকিলাবকে বলেন, জরিপে খাস জায়গা পাওয়া গেছে। যেহেতু এটি আদালতে উঠেছে, আমরাও কাগজপত্রে জবাব দেব। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি জায়গা দখল করে নয়। আমার জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জরিপ করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন