শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

ঢাকার বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌছেছে অনেক আগেই। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক জরিপে বায়ূদূষণের ক্ষেত্রে ঢাকা নগরী বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেল্থ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনিস্টিটিউট ফর হেল্থ মেট্রিকক্স এন্ড ইভালুয়েশন-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গবেষণা জরিপে বায়ূদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বলে তথ্য দেয়া হয়। এক সময় চীনের বেইজিং নগরী বায়ূদূষণের ক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে থাকলেও সাম্প্রতিক দশকে ভারতে দিল্লী বেইজিংকে ছাড়িয়ে গেছে এবং দিল্লীর পরই ঢাকার অবস্থান। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, ব্যাপক শিল্পায়ণের ফলে চীন এবং ভারতের শহরগুলো বায়ূদূষণের শিকার হলেও বাংলাদেশ কেন উচ্চ মাত্রার বায়ূদূষণের শিকার হচ্ছে, এই প্রশ্নে জবাব খুঁজতে গিয়ে উঠে আসে ঢাকার চারপাশে গড়ে উঠা বৈধ-অবৈধ ইটভাটার প্রসঙ্গ। দুই দশকের বেশী সময় ধরে প্রতিবছর অব্যাহত গতিতে বেড়ে চলা শত শত ইটভাটা ঢাকার আকাশ-বাতাস ও পরিবেশকে বল্গাহীনভাবে দূষিত করে চলেছে। একদিকে ঢাকার রাস্তায় হাজার হাজার ফিটনেস বিহিন গাড়ির কালো ধোঁয়া, যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বায়ূতে ছড়িয়ে পড়া ধূলো-ময়লা ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম দূষিত বায়ূর শহরে পরিনত করেছে।

বিশ্ব্ স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া ও এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যআয়ের দেশগুলোর নাগরিকরাই বায়ূদূষণের বড় শিকার। পরিবেশগত নিরাপত্তা ও আইনগত বাধ্যবাধকতা না মেনে ফিটনেস বিহিন গণপরিবহণ, অনিয়ন্ত্রিত কলকারখানা এবং পুরনো পদ্ধতির ইটভাটার মত বায়ূদূষণকারী স্থাপনাগুলো বছরের পর বছর ধরে বায়ূধূষণ ঘটিয়ে ঢাকার বায়ূকে ক্রমে শিশুর নি:শ্বাস গ্রহণের অনুপযোগি করে তোলা হয়েছে। ঢাকার চারপাশের জনপদ ও নদীগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠা ইটভাটাগুলোর বেশীরভাগই পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং যথাযথ প্রযুক্তি ও আনুসাঙ্গিক বাধ্যবাধকতা পুরণ করা ছাড়াই গড়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যেই অননুমোদিত ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া গড়ে ওঠা ইটভাটার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে অভিযান পরিচালিত করার তথ্য প্রকাশিত হলেও প্রয়োজনীয় ও শর্ত পালন ও অনুমোদন ছাড়াই শুধুমাত্র নগদ জরিমানা আদায় করে এসব ইটভাটা ও দূষণপ্রবণ কলকারখানাকে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকায় ঢাকার বায়ূতে ভয়াবহ ধূষণ ঘটিয়েছে। ইটভাটা থেকে সৃষ্ট বায়ূদূষণ এখন শুধু ঢাকার চারপাশেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যাপক বায়ূদূষণের জন্য দায়ী মান্ধাতা আমলের ইটভাটা এখন সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার মত সারাদেশেই বায়ূদূষণ ক্রমে বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে।

পানি, বায়ূসহ পরিবেশগত দূষণজণিত অসুস্থতার সংখ্যা সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিশেষত ঢাকার বায়ূদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতরকে মাঝে মধ্যেই দায়সারা কিছু কর্মসূচি ও সুপারিশ প্রনয়ণ করতে দেখা গেলেও অবস্থার উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তা আদৌ দেখা যায় না। এ সপ্তাহে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটি আয়োজিত ‘বায়ূদূষণ:করণীয় ও পদক্ষেপ’ শীর্ষক এক সেমিনারের বক্তারা চিমনি চুলার ইটভাটা বন্ধের জোর দাবী জানিয়েছেন। ইতিপূর্বেও পরিবেশ অধিদফতরের তরফ থেকে ঢাকার বায়ূদূষণ রোধে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা বন্ধ করে স্বল্পদূষণকারী, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ইটভাটা নির্মানের সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সাথে যানবাহনের কালো ধোঁয়া নি:স্বরণের মাত্রা পরীক্ষা করে ফিটনেস বিহিন গাড়ী বন্ধ করা, কলকারখানার উপর পরিবেশগত মনিটরিং জোরদার করা, রাস্তা ও গৃহনির্মানের সময় ধুলো-বালি নিয়ন্ত্রনে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। রাস্তায় ধূলা উড়া ঠেকাতে পানি ছিটানো এবং রাস্তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ ছিল। বেশকিছু আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ঢাকার বায়ূদূষণের ভয়াবহ মাত্রা ও এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির যে সব রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা খুবই উদ্বেগজনক। একদিকে দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি, অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম বায়ূদূষণ ও বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিনত হওয়া ঢাকায় নতুন বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করার সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার বায়ূদূষণ ও পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন