শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’র ভাঙনরোধ প্রকল্প প্রি-একনেক-এর বিবেচনায় উঠছে সোমবার

১১ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যায় দাড়াচ্ছে ২৩৪ কোটিতে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৯, ৪:৫৩ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী বরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কের দোয়ারিকাতে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও সংযোগ সড়ক সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় কারিগরি কমিটির প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনের প্রী-একনেক’র সভায় উপস্থাপিত হচ্ছে সোমবার। সেতু ও সংযোগ সড়ক সহ পাশ্ববর্তি বিশাল এলাকা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক অধিদপ্তর এবং নদী শাষন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানÑআইডব্লিউএম’এর দীর্ঘ সমিক্ষার পরে ৩ হাজার ৭৬৫ মিটার নদী তীর রক্ষা সহ সোয়া ৬শ মিটার একটি চর-এর ৮লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন-এর নকশা প্রনয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যায় ধরা হয়েছে ২৩৪ কোটি টাকা । দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে যোগাযোগ মন্ত্রনালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের একাধীক বৈঠকের পরে ভাঙন রোধে চুড়ান্ত নকশা অনুমোদন সহ তা বাস্তবায়নের দিকে এগুচ্ছে। 

অন্তঃ মন্ত্রালয়ের সিদ্ধান্তনুযায়ী সড়ক অধিদপ্তরের এ সেতু ও সংযোগ সড়কটি রক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পটি ‘ডিপোজিট ওয়ার্ক’ হিসবে বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ‘ইনল্যান্ড ওয়াটার ম্যানজমেন্ট-আইডব্লিউএম’ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষন অনুযায়ী দোয়ারিকাতে সেতুটির বরিশালে প্রান্তে সুগন্ধা নদীর বাম তীর ঘেঁষে উজানে একটি ‘কনকেভ ব্যান্ড’ তৈরী হয়েছে। ফলে নদীর ঐ প্রান্তে শ্রোতের চাপ অত্যন্ত বেশী। পাশাপাশি নদীর অপর প্রান্তের ডান তীর ঘেঁেষ চর জেগে উঠে ক্রমান্বয়ে তা বাম তীরের দিকে বর্ধিত হচ্ছে। ফলে নদীর ‘কনভেন্স ক্যাপাসিটি’ হৃাস পেয়ে ভাঙনকে তরান্বিত ও প্রলম্বিত করছে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারনে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীসমুহ অত্যন্ত সর্পিলাকার বৈশিষ্টের ফলে নদীর বঁাঁকে ভাঙনের পাশাপাশি বিপরিত প্রান্তে চর পড়তে থাকে।
দোয়ারিকার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় ভাঙন রোধে নদী তীর রক্ষা ও চর অপসারন-এর ‘সমন্বিত ব্যাবস্থা’ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের আলোকে সেতু এলাকায় নদীর বাম তীরের উজানে ১ হাজার ৮শ মিটার ও ভাটিতে ২শ মিটার এবং ডান তীরের উজানে ৭৬৫ মিটার ও ভাটিতে ১ হাজার মিটার নদী তীর সংরক্ষন করা হবে। এ লক্ষে জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর পরে তার ওপর সিসি ব্লক সন্নিবেশ করে নদী শাষনের পাশাপাশি সেতুটির উজানে নদীর বাঁকে ৮ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারন করে গতিপথ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কুয়েতের অর্থায়নে ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান বরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটির শিকারপুর ও দোয়ারিকাতে দুটি সেতু নির্মান সম্পন্ন করে। ২০০২-এর এপ্রিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেতু দুটির উদ্বোধন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বরিশালের কৃতি সন্তান মেজর জলিল ও বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে এর নামকরন করেন।
কিন্তু সেতু দুটি নির্মানের পরেই দোয়ারিকায় বরিশাল প্রান্তে ভাঙন শুরু হয়। প্রথম দিকে সড়ক অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে খুব একটা মনযোগ না দিলেও ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধির পরে তা নিয়ে সচেতন হয়। কিন্তু গত দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর বরিশাল প্রান্তের সংযোগ সড়কে ভাঙন ব্যপ্তি লাভ করলেও মন্ত্রনালয় বিষয়টি নিয়ে তড়িত কোন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি। ফলে ২০০৬সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাত্র ১১ কোটি টাকার নদী তীর রক্ষা প্রকল্প পেস করলেও সে সময় তহবিলের সংস্থান করতে পারেনি মন্ত্রনালয়। যা বর্তমানে ২৩৪কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুটির বরিশাল প্রান্তের ডান পাশের ‘ওয়েভ প্রটেকশন’ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে সুগন্ধার ভাঙন সেতুটির এবাটমেন্ট ছুয়েছে। তবে সুগন্ধার মূল শ্রোত আঘাত হানছে সংযোগ সড়কের দিকে।
বছর তিনেক আগেও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের এক আন্তঃ মন্ত্রনালয় সভায় সেতু এলাকার ভাঙন রোধে নকশা প্রনয়ন সহ প্রাক্কলন তৈরীর দায়িত্ব দেয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। সভায় ভাঙন রোধে প্রকল্পটির অর্থ যোগাযোগ মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্বের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘ডিপোজিট ওয়ার্ক’ হিসেবে তা বাস্তবায়ন করবে বলেও জানান হয়। তখন ‘জরুরী ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম’ গ্রহনের লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ২ কোটি টাকা বরাদ্বের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলেও আর সে অর্থের সংস্থান হয়নি। গত বছর ভাঙন পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে সড়ক বিভাগ থেকে জরুরী ভিত্তিতে কিছু ‘জিও স্যান্ড ব্যাগ’ ফেলে আপতকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়।
তবে আসন্ন প্রায় বর্ষায় মহউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর এবাটমেন্ট ও সংযোগ সড়কের জন্য মারাত্মক ঝুকির মুখেই পরিকল্পনা কমিশনে প্রীÑএকনেক’এর সভায় ভাঙন রোধ প্রকল্পটি বিবেচনার জন্য উঠছে সোমবার । বিষয়টি অনুমোদিত হলে আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে তা একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে আগামী অর্থ বছরের এডিপি ভূক্ত হয়ে নভেম্বরÑডিসেম্বরের মধ্যেই বীরশ্রেষ্ঠ মহউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রমের বাস্তব কাজ শুরু সম্ভব হতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন