বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মুমিনের নৈতিক গুণাবলি-২

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

মুমিনের নৈতিক গুণাবলি আলোচনা করতে গিয়ে গত নিবন্ধে আমরা বলেছিলাম প্রকৃত মুমিন তারাই, যারা কোনো ভুল কাজ করে ফেললে তার পুনরাবৃত্তি করে না এবং নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। কোনো অশ্লীল কাজ ও সীমালঙ্ঘন করে ফেললে আল্লাহর জিকির করে। এই জিকিরের বদৌলতে তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা বলে স্বীকৃতি লাভ করে ধন্য হয়। উত্তম নৈতিক গুণাবলির অধিকারী মুমিনদের জন্য অফুরন্ত পারিশ্রমিক রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, “এদের দু’বার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে। কারণ, এরা ধৈর্যশীল এবং এরা ভালোর দ্বারা মন্দের মোকাবেলা করে এবং তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। তারা যখন অসার ও বেহুদা বাক্য শ্রবণ করে তখন তারা তা উপেক্ষা করে চলে এবং বলে, আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্য, তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্য। তোমাদের প্রতি সালাম ও নিরাপত্তা, আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাই না।’ (আল কোরআন)।

এখানে মুমিনদের যে বিশেষ গুণের কথা তুলে ধরা হয়েছে তা এই যে, তারা অসার বাক্য শ্রবণ করতে আগ্রহী নয় এবং মন্দের প্রতিফল মন্দের দ্বারা দেয় না; বরং ভালো দ্বারা দেয়। এদের অন্য গুণাবলি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা কর্তব্য পালন করে।’ এবং অন্য গুণাবলি সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, তারা কর্তব্য পালন করে এবং সেদিনের ভয় করে, যেদিনের পরিব্যাপ্তিও হবে ব্যাপক।

আহার্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্তে¡ও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীকে আহার দান করে এবং বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার্য দান করি। আমরা তোমাদের নিকট থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। এই আয়াতসমূহে এবং অনুরূপ অন্যান্য আয়াতসমূহের যে বিশ্লেষণ রাসূল সা. বর্ণনা করেছেন, তা হাদিসের বিভিন্ন গ্রন্থে সংরক্ষিত আছে। এই হাদিসগুলোকে নৈতিক চরিত্রের বিভিন্ন গুণের সাথে পরিবেশন করা হলে বোঝা যাবে, রাসূল সা.-এর শিক্ষাক্রমে নৈতিক শিক্ষা বলতে কী বোঝায় এবং নৈতিকতার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য কতটুকু?

ইসলামে নৈতিক চরিত্রের গুরুত্ব কতখানি তা রাসূল সা.-এর এই দোয়া থেকেই আঁচ করা যায়। যা তিনি নামাজ শেষে পাঠ করতেন, ‘হে আল্লাহ আপনি আমাকে উত্তম থেকে উত্তম নৈতিকতার পথ প্রদর্শন করুন। আপনি ছাড়া আমাকে উত্তম চরিত্রের পথ দেখানোর কেউ নেই এবং মন্দ চরিত্রকে আমা থেকে দূরীভ‚ত করুন। আপনি ছাড়া মন্দ চরিত্র দূরীভ‚ত করার কেউ নেই।’
হাদিসে বর্ণিত এই শব্দাবলির প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যায়, আল্লাহর রাসূল সা. স্বীয় নৈকট্য ও প্রার্থনা কবুলের উত্তমলগ্নে আল্লাহপাকের দরবারে যে বস্তুটি কামনা করেছেন, তা হলো হুসনে আখলাক বা উত্তম চরিত্র। ইসলামে ঈমানের চেয়ে বড় জিনিস আর আছে কি? কিন্তু ঈমানের পরিপূর্ণতা উত্তম চরিত্রের দ্বারাই সম্ভব।

রাসূল সা. বলেছেন, মুমিনদের মাঝে পরিপূর্ণ ঈমান ওই ব্যক্তিরই আছে, যার চরিত্র সর্বোত্তম। এ হাদিসটি তিরমিজী, ইবনে হাম্বল, আবু দাউদ ও হাকেমে বর্ণিত আছে। এতে বোঝা যায়, ইসলামে ঈমানের পরিপূর্ণতা যে মানদন্ডের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা হলো উত্তম চরিত্র। এটি এমন একটি ফল যদ্বারা ঈমানরূপ বৃক্ষের পরিচয় পাওয়া যায়।
বস্তুত ইসলামে নামাজ এবং রোজার যে গুরুত্ব রয়েছে তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কিন্তু উত্তম চরিত্র কখনো কখনো এর স্থলাভিষিক্ত বলে ধরা হয়। রাসূলে আকরাম সা. বলেছেন, ‘মানুষ উত্তম চরিত্রের দ্বারা এই মরতবা লাভ করতে পারে, যা দিনভর রোজা রাখলে, রাতভর ইবাদত করলে অর্জন করা যায়। এ হাদিসটি কয়েকটি সমার্থবোধ পরিবর্তনসহ আবু দাউদ, ইবনে হাম্বলসহ বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে।

এতে বোঝা যায়, নফল নামাজে রাতভর জাগ্রত থাকা এবং নফল রোজায় দিনভর ক্ষুৎপিপাসায় কাতর থাকার ফলে যে দরজা হাসিল করা যায়, ঠিক সেই মরতবা উত্তম চরিত্রের দ্বারাও অর্জন করা যায়। উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ইবাদত ও আনুগত্যের আধিক্য আরো বাড়িয়ে তোলে।
ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষই সমান, কিন্তু ইসলামে উত্তম চরিত্র এমন একটি মানদন্ড, যার দ্বারা পরস্পর মানুষের দরজা ও মরতবা পৃথক হয়ে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
মাহমুদুল হাসান রাশদী ১১ জুন, ২০১৯, ৪:০৫ এএম says : 0
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন সে ব্যক্তি থেকে তার জোড়া, আর তাদের দু’জন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য পুরুষ ও নারী। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা একে অন্যের নিকট কিছু চাও। আর তোমরা আত্মীয়দের (হক আদায় ও সম্পর্ক অটুট রাখার) ব্যাপারে সতর্ক হও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’ -সূরা আন নিসা: ১
Total Reply(0)
হাসিবুল ইসলাম ১১ জুন, ২০১৯, ৪:০৫ এএম says : 0
ইসলাম মানুষে মানুষে মানবিক কোনো ব্যবধান কিংবা বৈষম্য স্বীকার করেনি। মানবিক মর্যাদায় সাধারণভাবে সবাইকে সমান মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রদান করেছে।
Total Reply(0)
সাখাওয়াত হোসেন উজ্জ্বল ১১ জুন, ২০১৯, ৪:০৬ এএম says : 0
নৈতিক উন্নয়ন ছাড়া যে কোনো উন্নয়নই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। তাই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি সুমহান নৈতিক গুণাবলির পূর্ণতা সাধনের জন্য।’ -ইমাম আহমাদ, আল মুসনাদ, হাদিস নং- ৮৯৫২
Total Reply(0)
নাইম ১১ জুন, ২০১৯, ৪:০৬ এএম says : 0
শুকরিয়া,খুবই সন্দর লেখা
Total Reply(0)
মাওলানা রূহুল আমীন'সানী ১১ জুন, ২০১৯, ৪:০৬ এএম says : 0
আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, নবী করিম (সা.) সত্যিকার ও পূর্ণ মুমিন হিসেবে সে ব্যক্তিকেই অভিহিত করেছেন- যার চরিত্র সুন্দর। তিনি বলেছেন, চরিত্রের বিচারে যে উত্তম মুমিনদের মধ্যে সেই পূর্ণ ঈমানের অধিকারী। -আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৬৮৪
Total Reply(0)
তারেক ১১ জুন, ২০১৯, ৪:০৬ এএম says : 0
ইসলাম যে বিষয়গুলোকে চরিত্রের সুন্দর দিক এবং অবশ্য অর্জনীয় গুণ হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলোকে আত্মার গুণ হিসেবে আত্মস্থ করা, নৈতিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত করা এবং জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা গেলে স্বভাবতই মানুষ সম্পদে পরিণত হবে। যে সম্পদ দুনিয়ায় ব্যক্তির নিজের এবং অপরাপর সকলের কল্যাণ ও মুক্তি নিশ্চিত করবে।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ ১১ জুন, ২০১৯, ৪:০৭ এএম says : 0
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মুমিনের অসংখ্য নৈতিক গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই মুমিনগণ সফল, যারা তাদের নামাজে ভীত ও বিনয়ী, যারা নিজেদেরকে অর্থহীন কাজ থেকে বিরত রাখে, যারা জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মতৎপর হয় এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে।’ -সূরা আল মুমিনুন: ১-৫
Total Reply(0)
লোকমান ১১ জুন, ২০১৯, ১০:০৭ এএম says : 0
রসুল (সা.) বলেন, আমি মহান নৈতিক গুণাবলিকে পরিপূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি। (বুখারি) নৈতিকতার কথা শুধু মুখে বললে চলবে না। আমাদের সামগ্রিক সমাজব্যবস্থায় জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
Total Reply(0)
আরিফুর রহমান জসিম ১১ জুন, ২০১৯, ১০:০৮ এএম says : 0
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নৈতিকতার বিচারে যে লোকটি উত্তম মুমিনদের মধ্যে সেই পূর্ণ ইমানের অধিকারী। (তিরমিজি) আল্লাহ আমাদের সবাইকে নৈতিক জীবনধারণ করার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)
BulBul ১১ জুন, ২০১৯, ১০:১২ এএম says : 0
মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) নৈতিকতার উলেল্গখযোগ্য মৌলিক গুণাবলি ছিল ন্যায়বিচার, ইনসাফ, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়, বিশ্বস্ততা, ওয়াদা পালন, সততা, কর্তব্যবোধ, শালীনতা, বদান্যতা, সঠিক পন্থা গ্রহণ, ন্যায়পরায়ণতা, উদারতা, মধ্যপন্থা প্রভৃতি। এ মহৎ কাজগুলো শুধু নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি বরং নৈতিক মূল্যবোধ ও নৈতিক আচরণগুলোর প্রতি যে উৎসাহ এবং প্রেরণা দিয়েছেন, তা সত্যিই অনন্য।
Total Reply(0)
Mizanur Rahman ১১ জুন, ২০১৯, ৬:৩৪ পিএম says : 0
Subahan Allah .......
Total Reply(0)
Md Irfad ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৫:২৫ পিএম says : 0
মুমিনের জন্য নৈতিকতা বলতে কি বুঝ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন