শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শর্ষের ভেতরেই ভূত!

ডিআইজি মিজানের ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গিলে সাময়িক বরখাস্ত দুদক পরিচালক এনামুল বাসির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

এ যেন শর্ষের ভেতরেই ভূত! দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে এক দুদক কর্মকর্তা নিজেই দুর্নীতি করে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালে তদন্তাধীন তথ্য অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রকাশ করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে তার (এনামুল) বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে বিব্রত নয় সদুদক। ব্যক্তির অসাধারণের অভিযোগের দায় সংস্থার ওপরে পড়তে পারেনা। গতকাল সোমবার দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

এনামুল বাসিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গত রোববার এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কমিশনের সচিব মো. দিলওয়ার বখতকে। অন্য সদস্যরা হলেন মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মফিজুর রহমান ভূঞা এবং মহাপরিচালক (প্রশাসন) সাঈদ মাহবুব খান।

গতকাল বিকেলে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে এই প্রতিবেদনে কি আছে সে তথ্য প্রকাশ করেননি দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ডিআইজি মিজানুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত থেকে এনামুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাছে এনামুল বলেছেন- তিনি ঘুষ নেননি। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এনামুল বাসিরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটি অসদাচরণ। এতে দুদক বিব্রত নয়। ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের নয়। দুদকের ৮৭৪ জন কর্মীর সততার নিশ্চয়তা কমিশন দিতে পারে না। এক প্রশ্নের জবাবের ইকবাল মাহমুদ বলেন, এনামুল বাসিরের সঙ্গে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কথোপকথন নিশ্চিত হতে অডিও রেকর্ড ফরেনসিক পরীক্ষা করতে হবে। তাছাড়া মিজানুর ঘুষ দিয়েছেন প্রমাণিত হলে দুদক মামলা করবে বলে জানান তিনি। গত রোববার বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান। মাস ছয়েক ধরে দুজনের মধ্যে এ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমে ২৫ লাখ ও পরে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন মিজানুর।

কিন্তু ২ জুন খন্দকার এনামুল বাসির মিজানুরকে জানান, তিনি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারের চাপে তাঁকে অব্যাহতি দিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিজানুর টাকাপয়সা লেনদেনের সব কথা ফাঁস করে দেন। প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন এনামুল বাসিরের সঙ্গে কথোপকথনের একাধিক অডিও রেকর্ড।
তবে এনামুল বাসির অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অডিও রেকর্ডটি বানোয়াট। তিনি টাকাপয়সা নেননি। তিনি গত মাসের শেষ দিকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এবং মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করেছেন। এদিকে, মিজানুর রহমানের ভাষ্য হলো- তিনি খন্দকার এনামুল বাসিরকে একটা স্যামসাং ফোন কিনে দিয়েছিলেন শুধু তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য। তাঁর গাড়িচালক হৃদয়ের নামে সিমটি তোলা। এতে দু’জনের কথা ও খুদে বার্তা বিনিময় হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে। মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে।

গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে মিজানুরকে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। মিজানুরের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসংগতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা দু’দকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তদন্ত শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দুদক পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার এই অভিযোগ উঠে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
saad ahmed ১১ জুন, ২০১৯, ৩:০৩ এএম says : 0
both are bastards general public must kill them by kicking and stamping
Total Reply(0)
Md Arshad ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৪ এএম says : 0
ঘোষ দেওয়া ও নেওয়া দু'জনই সমান অপরাধী
Total Reply(0)
s.k.k.ahmed ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৫ এএম says : 0
অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল কিন্ত মন্তব্যের সংখ্যা দেখে উতসাহ হারিয়ে ফেলেছি।তাই একটা ছড়া,চোরে চোরে হালি এক চোরে বিয়ে করেছে আর এক চোরের সালি।
Total Reply(0)
Zihad Khan ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৫ এএম says : 0
এই সংবাদ ঘুষ দূর্নীতির মহাসমুদ্রের এক ফোঁটা পানি মাত্র! এখানে দূর্নীতির মহাসমুদ্র এতটাই গভীর এবং ভারি যে সেই সমুদ্রে যদি কেউ সব হাত পা মিলিয়েও সাঁতার দেয় তবে এক হাত এগুতেও পারবে না, কোন ঢেউও উৎপন্ন হবে না! বরং সেই সমুদ্রে সাঁতরানোর আপরাধে আপনাকে গুম কিংবা খুন করে দেয়া হবে! যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণী শক্ত হাতে মাঠে না নামছেন ততদিন পর্যন্ত দূর্নীতি মুক্ত দেশ গড়া সম্ভব নয়! এই দেশের জনপ্রতিনিধিরা স্বীকার করুন বা না করুন তাদের চেয়ে কিন্তু দূর্নীতি গ্রস্থ আমলারাই বেশি শক্তিশালী! কারণ নিত‍্য দিনের পত্রিকার পাতার ঘুষ দূর্নীতি খবরেই বলে দেয় কাদের হাত শক্তিশালী?
Total Reply(0)
Mohammad Imranur Rahman ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৬ এএম says : 0
দুদককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে এখন কোন সংস্থা গঠন করা প্রয়োজন?? যেসব লোক দিয়ে এসব কমিশন গঠন করা হয় তারা নিজেই আগে থেকে দূর্নীতিগ্রস্থ থাকে। নীতিহীন বিবেকহীন লোক দিয়ে যত কমিশন গঠন হোক তা কোন কার্যকর ফল পাওয়া যাবে না।
Total Reply(0)
Mohammad Imranur Rahman ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৬ এএম says : 0
দুদককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে এখন কোন সংস্থা গঠন করা প্রয়োজন?? যেসব লোক দিয়ে এসব কমিশন গঠন করা হয় তারা নিজেই আগে থেকে দূর্নীতিগ্রস্থ থাকে। নীতিহীন বিবেকহীন লোক দিয়ে যত কমিশন গঠন হোক তা কোন কার্যকর ফল পাওয়া যাবে না।
Total Reply(0)
Jasimuddin Mohammed ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৭ এএম says : 0
আমাদের দুদক নিজেই একটা দুর্নীতিতে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের দুদক চেয়ারম্যান একজন নির্লজ্জ মানুষ তার আশেপাশে সব দুর্নীতি বাজ, ধরতে পারেন না। অথচ তিনি সভা সেমিনারে লম্বা লম্বা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। আর যেই লোক চল্লিশ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে পারে তার আয়ের সোর্সটা কত উপরে!
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৭ এএম says : 0
যাদেরকে দায় মুকতি দিয়েছে দুদক সেটা তদনত করার জন্যে আর একটি দুদক গঠন করতে হবে
Total Reply(0)
দবির ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৭ এএম says : 0
যে সরিষা দিয়ে ভুত তারাব ওই সরিষাতেই ভূত !! শোনা জায়, দুদকের চাকুরী নিতেই নাকি ... কাড়ি কাড়ি ... লাগে।
Total Reply(0)
Moshiur Rahman Rune ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৭ এএম says : 0
ভুতের মধ্যে সরিষার ভূত, কথাটি ঠিক বলতে পারছিনা। আবার তদন্ত হলে তদন্তকারীর কাছে আবারো যে দুজন মিলে যাবে না তার ওয়ারেন্টি একমাত্র ভূতই বলতে পারবে। জয় সরিষার জয়, জয় ভূতের জয়।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৭ এএম says : 0
চোরে চোরে মাসতুত ভাই, এটাই এখন এদেশের আসল চিত্র। নয়ত এই রকম অভিযোগ আসার পরেও ডিপার্টমেন্ট কোনো এ্যাকশনে যেতে পারেনি, তাকে দুদকের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে! কেনো? তার নিজস্ব আইন-কানুন-বিধি-বিধান সচল নয় কেনো?
Total Reply(0)
কালাম ১১ জুন, ২০১৯, ৩:৩৮ এএম says : 0
We should break up the whole policing system in our country. Police is NOT for public protection; it is solely for protecting our corrupt political system and corrupt Government.
Total Reply(0)
ash ১১ জুন, ২০১৯, ৬:০১ এএম says : 0
ORA TO SESRA ! ODER WPORE ARO ONEK ASE, .....................................
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন