বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

সাদিয়া কারিমুন | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আজ আমরা সত্যিই গর্বিত বাঙালি। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চলমান। অর্থনীতির সূচকগুলোর অবস্থানও অনেকটাই চোখে পড়ার মতই। বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ, সরকারের নানান তৎপরতা এবং সেইসাথে জনগণের আশা আকাক্সক্ষা। অবশ্যই তা সরকারি বিভিন্ন আয়োজনকে ঘিরে। এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার অবস্থান এবং পরিস্থিতি সঠিকভাবে বিশ্লেষণের সময় এখনই। এখন প্রশ্ন এটা দাঁড়াচ্ছে যে, এত উন্নয়নের মাঝে সামাজিক নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে? অর্থাৎ আমরা সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবনে কতটুকু নিরাপদ বোধ করছি! এটাও সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস জন্মানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।

বাংলাদেশ ২০১৯ সালে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ২৪তম স্থান দখল করে বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। উন্নয়নের একটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাতে বলা আছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নকে অবশ্যই পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের আওতায় রাখতে হবে। যদি সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনা ও অপ্রত্যাশিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে বিবেচনা করি তাহলেও দেশ আজ মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। ভুলগুলো কিন্তু আজকের করা নয়, হঠাৎ করে এসব দুর্যোগ শুরু হয়নি। এখন যা হচ্ছে, সেগুলো পূর্বকৃত অসচেতনতা ও ভুলের মাশুল। যমুনা টিভিতে স¤প্রচারিত প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী, সেখানেও অধিকাংশ ভবন নির্মাণে প্রথম দিকে বেশ অনিয়ম ছিল। ব্যবসায়ীরা অনিরাপদ জেনেও ঝুঁকি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট সেতু ভেঙে অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে। এগুলোর প্রত্যেকটিই সঠিক নিয়ন্ত্রণ আর পর্যবেক্ষণের অভাবে হচ্ছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কোনো দুর্ঘটনার পরপর টিভি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞজনদের নিয়ে বিশ্লেষণের আয়োজন করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয় হাহাকারমূলক কথাবার্তা। উদাসীনতা আর অনিয়ম, শব্দ দুটি অধিকাংশ মানুষের মধ্যে জেঁকে বসেছে। সরকার, গণমাধ্যম আর জনগণ যেটুকু করছে তার অনেকটাই এ প্রবণতার ফলে আসল উন্নয়নকে ব্যাহত করছে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সারাদেশে কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে বিশ্লেষণ হয়। যেমন পূর্বে কী করা উচিত ছিল, কর্তৃপক্ষের দ্বারা কী করা হয়েছে এবং প্রেক্ষাপটকে ঘিরে কী করা উচিত? এই বিশ্লেষণ কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ফলে উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক। সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য জনগণের মধ্যে একটি গবেষণা চালানো যেতে পারে যে তারা মানসিকভাবে কতটুকু নিরাপদ বোধ করেন? তবে তাদের উত্তরটি যে সরাসরি হ্যাঁ হবে না তা বোঝাই যাচ্ছে। প্রয়োজন বা চাহিদার পদসোপান এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে নিরাপত্তা। আজ বাংলাদেশ যতটা সমৃদ্ধ তা রক্ষা করাটা অনেকটাই নির্ভর করছে জনগণের নিরাপদ বোধ করার ওপর। অন্যথায় উন্নয়ন স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে না বলেই বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। যে ভুলগুলোর কারণে আজ কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, সে ভুলগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে যথাযথ নজরদারী এখন সময়ের দাবি। সচেতন জাতি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার এখনই সময়। সরকারি কর্তৃপক্ষের সবাই যদি তাদের বিবেচনায় স্বচ্ছ হন, তাতে অনেক কাজই কঠিন হয়ে উঠবে। তবে ভালো থাকতে চাই আমরা সবাই, আর দিনশেষে এটাই সর্বোচ্চ সত্য। তাই আমাদের চিন্তা, পরিকল্পনা এবং করণীয় সেই অনুযায়ী হোক। সংবিধানে বলা আছে, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎ’ এ কথাটির তাৎপর্য অনেক। আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন আর সচেষ্ট হলে তা প্রকৃত উন্নয়নকে ধারাবাহিক করতে আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন