মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

গণমুখী ব্যবসাবান্ধব

চিটাগাং চেম্বার ও মেট্রো চেম্বার

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের বাজেটকে গণমুখী, সাহসী ও ব্যবসাবান্ধব বলে মন্তব্য করেছেন চিটাগাং চেম্বার ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই চেম্বারের পক্ষ থেকে বাজেট নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে বেশকিছু পরামর্শও তুলে ধরা হয়।চিটাগাং চেম্বারের পক্ষে সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাজেটে চট্টগ্রাম-ঢাকা দ্রুতগতির ট্রেন ও বে-টার্মিনাল নির্মাণ পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানিয়ে এসব মেগা প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি বলেন, এসএমই খাতের উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আহরণের আওতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে প্রস্তাবিত বাজেট।


আট দশমিক দুই শতাংশ জিডিপি অর্জন করা গেলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বাজেটে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অব্যাহত সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি কিছু নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার, সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ফলে অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে ও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
ব্যক্তিগত করমুক্ত সীমা গত ৪ বছর ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে জানিয়ে তিনি এই সীমা বৃদ্ধির দাবি জানান। ঠিকাদারী ও সরবরাহ বিলে উৎসে কর হ্রাস করা হয়েছে, অগ্রিম কর প্রদানের ক্ষেত্রে সীমা ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা এবং এসএমই খাতে টার্নওভার ৩৬ লাখ থেকে ৫০ লাখে উন্নীত করা হয়েছে যা ইতিবাচক। হস্তশিল্প রপ্তানিকে করমুক্ত রাখার সময়সীমা ৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। তৈরীপোশাক শিল্পে হ্রাসকৃত করহার সুবিধা অব্যাহত রাখা দেশের প্রধান রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করবে। এছাড়া সারচার্জের ক্ষেত্রে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার সীমা ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশীয় কৃষি যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, চামড়াজাত পণ্য, গৃহস্থালী পণ্য ইত্যাদি কর অবকাশ সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে ডিভিডেন্ড হতে আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, স্টক ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে ক্যাশ ডিভিডেন্ডকে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের উপর ১৫ শতাংশ কর প্রদান পুঁজি বাজার উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


নতুন ভ্যাট আইনে নিবন্ধন, তালিকাভুক্তি, রিটার্ণ দাখিল, কর পরিশোধ ইত্যাদি অনলাইনে সম্পাদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিদ্যমান মূল্য ঘোষণা পদ্ধতির পরিবর্তে বিনিময় বা ন্যায্য বাজার মূল্যের ভিত্তিতে কর পরিশোধের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ আইনে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারে মূসক অব্যাহতি ও মূসক নিবন্ধন সীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা করা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক হার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক হবে। স্মার্ট ফোনের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
ঔষধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের শুল্ক রেয়াত সুবিধা এবং মেডিক্যাল গ্যাস প্রস্তুতকারী কাঁচামালের উপর ডিউটি হ্রাস করায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় কমবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বজ্রপাত প্রতিরক্ষা সামগ্রী আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। শিল্প খাতে আমদানিকৃত নমুনা দ্রুত ছাড়করণের ক্ষেত্রে ডিমিনিমাস বিধিমালা সহায়ক হবে। এছাড়া স্বর্ণ আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা কালোবাজারী রোধ এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করবে। দেশীয় শিল্প রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদিতে মূসক অব্যাহতি বহাল রাখা এসব শিল্পের সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। চেম্বার সহ-সভাপতি গণপরিবহন ছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ীর ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।


প্রস্তাবিত বাজেটকে সাহসী উল্লেখ করে মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমান দেশের চলমান অগ্রযাত্রায় জাতিকে বিশাল অঙ্কের সর্বোচ্চ বাজেট উপহার দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাজেটের আকার দেখলেই বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানী ও বন্দর উন্নয়ন খাতে আরও বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন উল্লেখ করে বলেন, এতে দেশের শিল্পায়ন বৃদ্ধি পেয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের জিডিপি ৮.৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক সহায়তার ব্যবস্থা থাকলে সরকারকে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ কমিয়ে রাখতে পারলে ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি হবে না।
পক্ষান্তরে ব্যাংক ঋণ ছাড়াই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগার পর্যন্ত তা পৌঁছানো নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেন তিনি। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমাতে কাস্টম হাউজের অটোমেশনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের প্রস্তাব করেন তিনি। এতে করে কিছু কাস্টম কর্মকর্তার ঐচ্ছিক কার্যক্রমের উপর ব্যবসায়ীদের নির্ভরশীলতা কমানোর পাশাপাশি ব্যয় ও সময় কমানোসহ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আসবে যা, বাজেট বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এডিবি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রতিমাসে কাজের অগ্রগতি, ব্যয় ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ে দাখিলের ব্যবস্থা রাখারও প্রস্তাব দেন তিনি। বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব উল্লেখ করে এজন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি। তিনি বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা যেভাবে এগিয়ে চলছে, আমরা আশাবাদী অবশ্যই এ বাজেট বাস্তবায়ন হবে।


বাজেট নারী উদ্যোক্তা সহায়ক : চিটাগাং উইম্যান চেম্বার
প্রস্তাবিত বাজেট নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন, বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং সাধারণ জনগণের জীবন মান উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির প্রেসিডেন্ট মনোয়ারা হাকিম আলী। গতকাল এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, শিশুদের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নয়নে সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে। যোগাযোগ খাতের সংস্কার ও উন্নয়নের ফলে দেশের সামগ্রীক অর্থনীতি বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বর্তমান সময়ে সবচাইতে আলোচিত ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সংস্কারের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেন তিনি। কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের মূল্যহ্রাস এবং সারের মূল্য স্থিতিশীল রাখা কৃষকের জন্য সহায়ক হবে। এছাড়া সিগারেট ও তামাক জাতীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যুক্তিযুক্ত যা, ধূমপানে মানুষকে নিরুৎসাহিত করবে। এসএমইসহ নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে এবারের বাজেট অত্যন্ত সহায়ক হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন