শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাড়ছে কথা বলার খরচ : অপারেটরদের কর বাড়ছে দ্বিগুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম

১ জুলাই থেকে বেড়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর আরও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলায় খরচ বাড়বে। আগে কথা বলার ওপর সম্পূরক শুল্ক ছিল ৫ শতাংশ। আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়ে তা ১০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এই প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় মোবাইল ফোনের সিম/রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথার বলার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা আছে। যাতে করে গ্রাহককে মোবাইলে কথা বলতে হলে সরাসরি ২২ শতাংশ কর দিতে হয়। আরও ৫ শতাংশ সম্প‚রক শুল্ক আরোপ হওয়ায় তা হবে ২৭ শতাংশের কিছু বেশি। এরফলে একজন গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে তা থেকে প্রায় ২৭ টাকা কর বাবদ নিয়ে যাবে সরকার, যা এখন ২২ টাকা। ফলে গ্রাহক যত বেশি কথা বলবে, তত বেশি কর পাবে সরকার। গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকদের কোন মতামত গ্রহণ না করেই ইচ্ছেমতো শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটি করলে সরকারের যে লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ সেটি বাধাগ্রস্ত হবে।

এদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর নূন্যতম কর বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি পৌনে এক শতাংশ ছিল। সাধারণত কোনো কোম্পানি মুনাফা করলে সেই মুনাফার ওপরে এই কর্পোরেট কর দিতে হয়। দেশে খাতভিত্তি অনেকগুলো কর্পোরেট কর রয়েছে। সেখানে মোবাইল অপারেটরগুলোর ক্ষেত্রে পাবলিকলি ট্রেড কোম্পানি হলে ৪০ এবং নন পাবলিকলি হলে ৪৫ শতাংশ কর দিতে হয়। এখনে মোবাইল অপারেটরগুলোর ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি মুনাফা না করলেও মোট আয়ের উপর বা বিভিন্ন উৎসে জমাকৃত অগ্রিম আয়করে সর্বনিম্ন একটি কর রয়েছে। সেটি আগে ছিল পৌনে এক শতাংশ আর এখন প্রস্তাব করা হলো ২ শতাংশের।তার মানে একটি কোম্পানি লসের মধ্যে থাকলেও এই হারে কর দিতে হবে।

বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেছেন, বিদ্যমান কর কাঠামোতেই বাজারে টিকে থাকা চারটি অপারেটরের মধ্যে তিনটিকেই বছরের পরে বছর লোকসানের বোঝা টেনে যেতে হচ্ছে। লোকসান গুনলেও এতদিন তিন অপারেটরের বিনিয়োগকারীদের অনেকটা বাধ্য হয়েই দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে নূন্যতম কর দিয়ে আসতে হচ্ছিল। এবারের বাজেট নূন্যতম এ কর হার বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে, যা একদমই হতাশাজনক। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যে মোবাইল অপারেটররা বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, তাদের ওপর এমন কর হারের চপোটাঘাত একেবারেই অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, টিকে থাকার যুদ্ধে হিমশিম খাওয়া মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পের যখন প্রয়োজন সহযোগিতা ঠিক সে সময়ে এমন কর হার আরোপ আত্মঘাতী ছাড়া কিছুই নয়।এবারের বাজেটে এই সর্বনিম্ন কর ব্যবস্থার প্রত্যাহার চেয়েছিল মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠর অ্যামটব।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলালিংক-এর চিফ কর্পোরেট এ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থে টেলিকম খাতের যে বিষয়গুলি আমরা দীর্ঘ সময় ধরে উত্থাপন করে আসছি সেগুলি এবারের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে প্রতিফলিত না হওয়ায় আমরা আশাহত। দেশের ডিজিটাল বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এমন একটি পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোন সিম/রিম কার্ডের মাধ্যমে প্রদানকৃত সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিমের উপর কর ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০০ টাকা করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক ও সিম করের এই বৃদ্ধি দেশে ডিজিটাল সেবার প্রসারকে ব্যাপক ভাবে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আমরা মনে করি। এর পাশাপাশি স্মার্টফোনকে উচ্চবিত্তদের ব্যবহারযোগ্য পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে এর উপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ফোরজি সেবা চালু হবার পর থেকে দেশের জনসাধারণের মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ সকল শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যম হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এছাড়া বাজেটে মোবাইল কোম্পানির আয়ের উপর সর্বনিম্ন শুল্ক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে যেসব মোবাইল কোম্পানি এখনো লাভজনক নয় সেগুলির করের বোঝা আরও বেড়ে যাবে এবং শেয়ার হোল্ডাররা এগুলিতে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হবে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ ও সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই বিষয়গুলি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আন্তরিক অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন