বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রাম কারাগারে মাদকের কারবার

মূলহোতা হামকা নূর, সহযোগী কতিপয় কারারক্ষী

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বসেই মাদকের জমজমাট কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী হামকা নূর আলম। সুরক্ষিত কারাগারের ভেতরে এবং বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে তার এই নেশার বাণিজ্য। খুন, অস্ত্রবাজি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাÐের ২০ মামলার এ আসামিকে এই অপকর্মে সহযোগিতা দিচ্ছেন কতিপয় কারারক্ষী।
নগরীর কদমতলী ফ্লাইওভার থেকে ৫০টি ইয়াবাসহ গ্রেফতার কারারক্ষী সাইফুল ইসলামকে (২২) জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জেলখানায় হামকা নূর আলমকে মাদক সরবরাহের অভিযোগে গ্রেফতার সাইফুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে এক মহিলাসহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

গ্রেফতারের পর তারাও পুলিশকে বলেছেন, হামকা নূর আলমের ‘নির্দেশে’ তারা কারারক্ষী সাইফুলকে ইয়াবা ও গাঁজা সরবরাহ করতেন। নূর আলম কারাগারে বসেই মাদকের দাম শোধ করতেন। কারাবন্দিদের কাছে হামকা নিজে এসব মাদক বিক্রি করেন। আবার বাইরেও তার সহযোগীরা মাদক কেনাবেচা করেন। গ্রেফতার তিনজন হলেন- দিদারুল আলম মাছুম ওরফে আবু তালেব মাছুম (৩৫) ও আজিজুল ইসলাম জালাল (৩৬) এবং আলো বেগম (৩৫)।

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হামকা নূর কারাগারে বসে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা করছে বলে গ্রেফতাকৃতদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। কারারক্ষী সাইফুল জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ইয়াবা সংগ্রহ করেছে মাছুমের কাছ থেকে। আর থানায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার মোবাইলে জালালের ফোন আসে গাঁজা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপর সাইফুলকে সঙ্গে নিয়ে ‘ফাঁদ পেতে’ লালদীঘির পাড় এলাকা থেকে জালালকে গাঁজাসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে রাতে তাদের নিয়ে এনায়েত বাজার এলাকা থেকে মাছুমকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান ওসি।

কারারক্ষী সাইফুল পুলিশকে বলেছেন, মাছুমের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে হালিশহর কাঁচাবাজার এলাকায় এক লোকের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তিনি। ৫০টি ইয়াবার মধ্যে ওই লোকের হাতে ১০টি দেওয়ার কথা ছিল তার। বাকি ৪০টি ইয়াবা কারাগারে নূর আলমকেই বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।

হামকা নূর আলম একজন দুধর্ষ সন্ত্রাসী ও ছিনতাকারী। ‘হামকা গ্রæপ’ নামে একটি সন্ত্রাসী দলের এই নেতা নগরজুড়ে ছিনতাই, অস্ত্রবাজি চালিয়ে আসছিলেন। পুলিশের করা ‘শীর্ষ ছিনতাইকারীদের’ তালিকাতেও তার নাম রয়েছে। ২০ মামলার আসামি নূর আলম দুই বছর আগে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কারাগারেই আছেন। তবে সেখানে বসেই তিনি বাইরে নিজের সহযোগীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখতেন এবং মাদকের কারবার চালিয়ে আসছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

কারা সূত্র জানায় কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের ৩ নম্বর কারা কক্ষে রাখা হয়েছে হামকা নূর আলমকে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, মাছুম আগেও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। তখনই নূর আলমের সঙ্গে তার পরিচয়। সেই সূত্রে মাছুম জেলে থাকা নূর আলমকে নিয়মিত ইয়াবা সরবরাহ করতেন। আর তাদের এই লেনদেন হত কারারক্ষী সাইফুলের মাধ্যমে। মাছুম জানিয়েছে, নূর আলম তাকে ফোন করে কারারক্ষী সাইফুলের মাধ্যমে ইয়াবা পাঠানোর কথা বলে। সকালে আলোর কাছ থেকে মাসুম ৫০টি ইয়াবা সংগ্রহ করে। দুপুরে সাইফুল ইয়াবাগুলো মাছুমের কাছ থেকে বুঝে নেন। তিন দিন আগেও একবার সাইফুলকে ৫০টি ইয়াবা দেওয়ার কথা তিনি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন। প্রসঙ্গত গত বছর বিপুল পরিমাণ নগদ টাকাসহ জেলার সোহেল রানা গ্রেফতারের পর একের পর এক বেরিয়ে আসে কারাগারে মাদক বাণিজ্যের নানা কাহিনী। তবে এখনও বাণিজ্য থেমে নেই।

ইয়াবাসহ গ্রেফতার পুলিশ কর্মকর্তাকে রিমান্ডের আবেদন
নগরীতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার পুলিশ সদস্য সিদ্দিকুর রহমানকে রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার মামলার তদন্তকারী সংস্থা নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ রিমান্ডের এ আবেদন আদালতে জমা দেন।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) সাহাবুদ্দিন খান জানান, ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি এলাকা থেকে সিদ্দিকুরকে ১০ হাজার ইয়াবা ও ৮০ হাজার টাকা এবং মোটর সাইকেলসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

সিদ্দিকুর রহমান নগর পুলিশের বন্দর জোনে কর্মরত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে সিদ্দিকুর রহমান অপর এক এসআই বাবলু খন্দকার তার সাথে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য দেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে কাউন্টার টেরোরিজম মাদক মামলায় তাকেও আসামি করেছে। তবে তাকে গতকাল পর্যন্ত গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ বলছে, মামলার খবর পেয়ে সে পালিয়ে গেছে।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় গুহ বাদী হয়ে শনিবার নগরীর ডবলমুরিং থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। দুই আসামির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১), ১০ (গ)/৩৮/৪১ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন