বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আবারো সংসদ উত্তপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে সংসদ অধিবেশন। নির্ধারিত দশ মিনিটের বক্তৃতায় তিন দফায় বাধার সন্মুখীন হতে হয়ে বিএনপি এই সংসদ সদস্যকে। এ ছাড়া বিএনপির অপর এক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদও সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সংলাপের উদ্যোগ নিতে সংসদ নেতার প্রতি আহবান জানান।

গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থ বৎসরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় এই সদস্যরা এ সব কথা বলেন। বিকেল ৩ টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। রুমিন ফারহানার বক্তব্যের সময় সভাপতিত্ব করছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।

সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিলেও এ বিষয়ে তেমন কোন বক্তব্য দেননি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, এই সংসদের কেউ বলতে পারবে জনগণের প্রত্যেক্ষ ভোটে নির্বাচিত? কেউ বলতে পারবেন না। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের সদস্যরা হই হই করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার তার বক্তব্য থামিয়ে বলেন, আপনি বাজেটের বাইরে এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে সংসদ উত্তপ্ত হয়। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এই সংসদে আসার আগে সংসদ নেতা বলেছিলেন আমাদের কথা বলতে দেবেন। কিন্তু আমার প্রথম দিনের বক্তৃতার দুই মিনিটের এক মিনিটও শান্তি মত কথা বলতে পারিনি। একই ঘটনা আজকেও।

কথা শুরু করার ৩৬ সেকেন্ডের মাথায় তার বক্তৃতা থামিয়ে দিয়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, এমন কথা বলবেন না যাতে বিরোধী পক্ষ উত্তেজিত হয়।
পুনরায় বক্তব্য শুরু করে তিনি বলেন, আমরা কথা বলতে পারছি না। কোন গণতন্ত্রের কথা বলছি। আমি আমার দলের কথা বলব, তারা তাদের দলের কথা বলবে। আমি দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে পুরো সংসদ যদি উত্তেজিত হয়ে যায়। তাহলে কিভাবে কথা বলব। আমাদের কথা দেওয়া হয়েছিল, এ সংসদে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হবে। এ জন্য এ সংসদ নির্বাচিত নয় জেনেও আমরা সংসদে যোগ দিয়েছি। কারণ, আমাদের মিটিং করতে দেওয়া হয় না। ভেবেছিলাম সংসদে জনগণ, আমার দল নিয়ে কথা বলতে পারব। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ সংসদের সরকারি দলের এমপিদের এতটুকু ধৈর্য নেই আমার কথা শোনার।

রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে আইন আছে, আদালত আছে। কিন্তু আইনের শাসন নেই। সে কারণে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে গত এক বছরে বিচারবর্হিভূত ৪৫০টি হত্যা হয়েছে। এ বিচারবর্হিভূত হত্যা কত জঘন্য ঘটনা, কোনো সভ্য রাষ্ট্রে তা চলতে পারে না। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রিপোর্ট মতে, গত এক দশকে গুম হয়েছে ৬শ’ এর উপরে। আমার সুযোগ হয়, এ গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে বসার। তারা এখন শুধু লাশ চায়, যাতে একটু কবর দিতে পারে।

তিনি বলেন, গত এক মাসে মৃত্যু উপত্যকা বাংলাদেশে হত্যাকান্ডর ঘটনা ঘটেছে ১৬৮টি। বাংলাদেশ এখন ধর্ষণের রঙ্গমঞ্চ। আমার দুঃখ লাগে স্পিকার এ সংসদের একজন নারী এমপিও এ নিয়ে কথা বলেন না। বাংলাদেশে এখন এক বছর থেকে শুরু করে ১০০ বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু কোনো বিচার হয় না। কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত বা সুবিধাভোগী তারাই এ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত।
পুরো দশ মিনিটের বক্তৃতায় অল্প কিছুক্ষণ শুধু সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করেন। তার সেই আলোচনায় বলেন, ২০১০-১১ অর্থ বছর থেকে এ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। সরকারের সক্ষমতা দিন দিন কমছে।

নির্বাচন কমিশনে ব্যয় বাড়ানোয় সমালোচনা করে ব্যারিস্টার ফারহানা বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। কি নির্বাচন তারা করেছে? আমার একটা কথায় পুরো সংসদ উত্তপ্ত। কলামের পর কলাম লেখা হয়। এই সংসদে যারা আছেন তারা আল্লাহকে হাজির নাজির করে বলুক তারা জনগণের প্রত্যেক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? তারা নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুক সবাই উত্তর পেয়ে যাবেন। বক্তৃতার ৪ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে আবারও বাধা প্রদান করা হয়। এভাবেই তার ১০ মিনিটের বক্তৃতা শেষ করেন।

পরে ডেপুটি স্পিকার তাকে উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বাজেটের বাইরে ও সংসদীয় ভাষার বাইরে যে কথাগুলো বলেছেন তার সব কথা সংসদীয় প্রসিডিউর থেকে এক্সপান্স করা হল। এই কথা বলার পর বিএনপি’র সবাই অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যান। পরে অবশ্য আবার অধিবেশনে ফেরেন।

এর আগে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমাদের ৬ জনের আসার মধ্য দিয়ে এই সংসদের বৈধতা দেয়া হয় না। আমাদের সংসদে প্রবেশের অন্যতম কারণ সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক জায়গাগুলোতে উপস্থিত হয়ে কথা বলা। তাই সংসদে এসে কথা বলছি। আমি সংসদ নেতাকে আহবান জানাচ্ছি, আশা করছি দেশে সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্র তথা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তিনি জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সংলাপের আহবান জানিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি আবহাওয়া তৈরি করবেন, সুবাতাস বয়ে আনবেন।

বিএনপি’র এই দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সংসদ নেতা আপনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে বেদনার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড দেশের রাজনীতির ইতিহাসে জাতীয় ট্রাজেডি। আর ইন্ডিমনিটি অধ্যাদেশ বিএনপি দেয়নি। দিয়েছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় থাকাকালে ইন্ডিমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে।

বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে হারুনুর রশীদ বলেন, জিয়াউর রহমান দেশে যে প্রক্রিয়াতেই ক্ষমতায় আসুক না কেনো ক্ষমতায় আসার পর উনি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। এখন আবার সেই গণতন্ত্র অনুপস্থিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (15)
Sofiqul Sofiqul ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
আপনাকে অভিন্দন রুমিন ফারহান
Total Reply(0)
Hridoy Hossain ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বাবা কে স্যালুট এমন একটা মেয়ের জন্ম দিয়েছেন বলে,জাতীয়তাবাদী পরিবারের হৃদয়ের স্পন্দন ব্যারিস্টার রুমিন!
Total Reply(0)
Mamun Hossain ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
সাহসের সাথে সত্য উপস্থাপনকরা এবং আমজনতার মনের কথা গুলো তুলে ধরারজন্য রুমিন ফারহানা কে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
MD Ismail Hossain ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
জাতীয় সংসদে সিংহের গর্জন শোনা যাচ্ছে ! অভিনন্দন সময়ের এই সাহসী নারীকে..
Total Reply(0)
Akm Zilani Remon ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
সংসদে কথা বলার সময় যদি কথা বলতে না পারে তাহলে জনগণের টাকা খরচ করে প্রতিবার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার কোনো দরকার নাই।
Total Reply(0)
Mizan Ahye ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
বিড়ালের মত 500 বছর বেঁচে না থেকে সিংহের মত এক ঘন্টা বেঁচে থাকব যুদ্ধ করে যাব 300 জনের সাথে একাই একশো ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ধন্যবাদ আপনাকে
Total Reply(0)
দ্বীন শিক্ষা ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
মাননীয় স্পিকার আপনার ক্ষমতা বলে সত্য কথাকে এক্সপান্স করতে পারেন । কিন্তু সাধারণ জনগণ যারা শুনছে তাদের কাছে কথাগুলোর গুরুত্ব রয়েছে ।
Total Reply(0)
Kaisar Hamid Jiko ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
আপনারা বলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন কেন সবার বলার অধিকার আছে।।স্বাধীনতার ঘোষক তো জিয়াউর রহমান তা ছোট থেকে পড়ে আসছি।।।
Total Reply(0)
Nur Mohammed Munna ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
হাজারো বিড়ালের মাজে একটা বাঘ যেমন আতন্ক,তেমনি এতগুলো মিথ্যুকের কাছে একজন সত্যবাদী আতন্ক।ধন্যবাদ সৎ সাহসী ব্যাক্তিকে।
Total Reply(0)
Muhib Bin Habib ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্যে অযোক্তিকভাবে শত বাধা দিতে পারে,সত্য বললে স্পীকার হয়ত তা এক্সপাঞ্জ করতে পারে,মাইক বন্ধ করতে পারে কিন্তু রুমিনের বক্তব্য যে মিথ্যা তা প্রমাণ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এটা তাদের চূড়ান্ত নৈতিক পরাজয়। সংসদের কার্যবিবরণী হতে এক্সপাঞ্জ করা হলেও জনগনের হৃদয় থেকে ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্য কেউ এক্সপাঞ্জ করতে পারবে না কারণ এগুলো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের কথা
Total Reply(0)
Rakhal Mato ১৭ জুন, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
লড়াই চালিয়ে যেতে হবে যতদিন জনগন তার নেতা নির্বাচনের স্বাধীনতা না পাবে। ৮০% আওয়ামী লীগের সমর্থক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আমরা চুরি করা ভোটের নেতা "মানি না, মানবো না"।
Total Reply(0)
জসীম উদ্দীন ১৭ জুন, ২০১৯, ৭:৩১ এএম says : 0
মত প্রকাশেরর স্বাধীনতা সকলের আছে। নীতি নির্ধারক হয়ে অপরের কথা বলার অধিকার হরন করা ঠিক নয়।
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১৭ জুন, ২০১৯, ৮:৪৮ এএম says : 0
Eanaderkei bote bolte hoy jonogoner protonidhi jini naki point to ponit gontontro jonogoner najjo dabi nia kotha bole shongshodke pran diasen. shongshoder ojoggo rater vote joy lub kore shorkari doler shangshoddera aj porjonto desher o jonogoner kollane ekta kotha bolte shoni nai.Eai shorkar shottikar nirbachon dite voy pai karon holo jodi rumi farhanader moto sposhtobadi durniti mukto shangshodra khomotai ashle eai oboidho shorkarer ostitto thakbena...
Total Reply(0)
sats1971 ১৭ জুন, ২০১৯, ১২:২২ পিএম says : 0
Don't forget the Gonoandolan 1969 by the all students leaders and workers leaders for freedom of Bangladesh after all they are got their freedom in the world.It is the achievement of Bangali. If today is not freedom state , this barister did not enter in the Sangshad Bhaban so that do not forget the role of Awami league 1969,1971 .Bangabandhu arrange a freedom platform after killing world greatest leader Bangabandhu all miscreants looted and created miscreants after 40 years Awamaileague win majority like 1969 and the people of bangladesh understand that the role of 1969 and aim so they back their 1970 and voting to the Awamileague,Now Bangali people only knows the DO of Bangabandhu. So that development is heading high speed but killers of Bangabandhu trying to anti state works but they failed.So that do not forget freedom of Bangladesh.
Total Reply(0)
Abu kaiser ২৪ জুন, ২০১৯, ১০:১৮ এএম says : 0
যে মা বাবা রুমিন ফারহানা কে জন্ম দিয়েছেন তাদের কে জানাই হাজার ও সালাম, ও স্যলুট।রুমিন ফারহানার মত একজন এমপির বি এন পি তে অনেক আগে আসার দরকার ছিল।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন