বর্ষার বর্ষণ পুরোপুরি শুরু না হলেও মাঝেমধ্যেই হচ্ছে বৃষ্টি। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে পদ্মার পানি। এতে প্রমত্তা হয়ে উঠছে পদ্মা। পদ্মার এমন রূপে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের নদী-তীরবর্তী গ্রামগুলোয় ভাঙন শুরু হয়েছে। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
জানা গেছে, লৌহজং উপজেলা প্রশাসন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জিও ব্যাগ ও ত্রাণসামগ্রীসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় সাহায্যের বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। জেলা প্রশাসক শায়লা ফারজানা ভাঙনকবলিত উপজেলাগুলোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার সামুরবাড়ী এলাকায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। শুধু সামুরবাড়ী এলাকাতেই নয়, ভাঙন শুরু হয়েছে হারিদিয়া, ডহরী ও বেজগাঁও গ্রামে। গত এক সপ্তাহে এসব গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া, কুমারভোগ ইউনিয়নের শিমুলিয়া বাজার, খড়িয়া গ্রাম, মেদিনীম-ল ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রাম, যশলদিয়া গ্রাম, মাওয়া পুরাতন ফেরিঘাটসহ পদ্মা-তীরবর্তী গ্রামগুলোয় ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদী-তীরবর্তী এসব গ্রামের অনেক পরিবার তদের বসতবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া লৌহজং উপজেলার ছয়টি গ্রামের দুটি বাজার, একাধিক মসজিদ, মাদরাসা, বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থাপনা এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
লৌহজংয়ের পাশাপাশি জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া, হাসাইল বানারী ইউনিয়নের নদী-তীরবর্তী গ্রামগুলোতেও পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ভাঙনের মুখে থাকা একাধিক পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। টঙ্গিবাড়ীর বড়াইল গ্রামের কবির ব্যাপারী জানান, তিন বছরের ব্যবধানে তাদের পাঁচটি বাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে আবার ভাঙন শুরু হওয়ায় তাদের পরিবারসহ বড়াইল গ্রামের সাত শতাধিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছে।
লৌহজং উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুমের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পদ্মা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোয় প্রতি বছরই কিছুটা ভাঙন দেখা দেয়। তবে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তারপরও সংশ্নিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত জানাতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া, শামুরবাড়ী ও টঙ্গিবাড়ীর কামারখাড়া এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের লক্ষ্যে তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ শুরুর পর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে।
এ ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান জানান, গত রোববার জেলা উন্নয়ন সভায় পদ্মার ভাঙনকবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সব উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া পদ্মার ভাঙন রক্ষার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জিও ব্যাগ ও ত্রাণসামগ্রীসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় সাহায্যের বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, এ মাসেই সেই বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক শায়লা ফারজানা জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জের যেসব উপজেলায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে সেসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন