মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশ এখন মগ দস্যু ও ঠগীদের অভয়ারণ্য -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম

দেশ এখন মগ দস্যু ও ঠগীদের অভয়ারণ্য হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মানুষের জীবন-যাপন ও বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ঠগীদের ওপর। যেকোন মূহুর্তে যেকোন মানুষ অথবা যেকোন পরিবারের যেকোন সদস্য গুম হয়ে যেতে পারে ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তির সাথে যদি তার ন্যুনতম মনোমালিন্য হয়। দেশে এখন কন্ট্রাক্ট গুম চলছে। প্রভাবশালীরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা গুমের দায়িত্বে আছে তাদের সাথে কন্ট্রাক্ট করে প্রতিপক্ষকে অদৃশ্য করাচ্ছে।
বুধবার (১৯ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারেরই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র ভাগ্নে ও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাতির গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা গোটা জাতিকে আতঙ্কিত ও শিহরিত করে তুলেছে। এমনিতেই দেশব্যাপী গুম হওয়া পরিবারের হাহাকারে বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীনদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকেই যদি গুমের ন্যায় করুণ পরিণতির শিকার হতে হয় তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপদে বেঁচে থাকার আর কোন অবলম্বনই থাকবে না। কত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও রাস্তায় নামতে হয়।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনকে আওয়ামী বাক্সে বন্দী করে রাখার জন্যই গুমকে জাতীয় জীবনের অংশ করা হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাইকারী হারে গুম করার পর এখন ক্ষমতাসীনদের ভেতরেই যারা কিছুটা বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি আছেন তাদের পরিজনরাও এখন গুমের শিকার হচ্ছেন। গত শনিবার বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনকে ২০ ঘন্টা শ্বাসরুদ্ধকর গুম করে রাখার পর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনা ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, সুমনের ধারাবাহিকতারই একটি নমূণা। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট ধ্যানে নিমগ্ন থাকার জন্যই বাংলাদেশ আজ গুম-খুনের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহিতা ও মানুষের মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে তিনি নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে। তিনি গণতন্ত্র ও সংবিধানকে কেড়ে নিয়ে নিজের দখলে রাখার জন্য গুমকে সরকারী কর্মসূচিতে পরিণত করেছেন। শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গুমের চেতনায় আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরুপে অসত্য এবং মামলারই যোগ্য নয় দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এসব মামলা কেবল প্রতিহিংসামূলক। তার প্রমান হলো-গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত জামিন দিলে সেক্ষেত্রে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না’
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে লন্ডন সফরকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য আর ওবায়দুল কাদেরের এই কথায় বুঝা যায়, জামিনযোগ্য হলেও সরকারের কারণেই খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। অর্থাৎ সরকার যদি খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে কোনো হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে খালেদা জিয়ার জামিন হবে এবং তিনি মুক্তি পাবেন।
রিজভী বলেন, কালবিলম্ব না করে সামনে আর দুইটি বানোয়াট মামলায় দেশনেত্রীর জামিন নিশ্চিত হলে উচ্চতর আদালতের ওপর মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। উক্ত দু’টি মামলায় নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করে সরকার বেগম জিয়াকে সাজা দিয়েছে। নিম্ন আদালতের সেই সাজার ওপর আপিল করা হলেও এখনও পর্যন্ত তাঁকে জামিন দেয়া হয়নি। আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকলে বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া যেতো না। আমরা আশা করবো উচ্চতর আদালত সকল চাপকে উপেক্ষা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন এবং জনগণের নেত্রী জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা আরও আশা করবো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার আর কোন কারসাজি করবে না, বাধা দিবে না।
গতকাল অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট গ্রহণে আওয়ামী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ন্যাক্কারজনক ভুমিকা পালন করেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ২০টি উপজেলার প্রায় সবখানে পুলিশের ভুমিকা ছিল দলীয় ক্যাডারের মতো। নৌকা প্রার্থী ছাড়া অন্যরা যারা প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন তাদের ঠেকানোর জন্য মাঠে সক্রিয় ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাতে ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। নৌকার প্রতীকে ভোট না দিলে দেখে নেয়া হবে বলে হুমকীও দেয়া হয়। এই আওয়ামী জবরদস্তিমূলক শাসন দীর্ঘায়িত হতে থাকলে নির্বাচন শব্দটি থাকলেও সুষ্ঠু শব্দটি পরলোকেই অবস্থান করবে। ভোটার থাকলেও ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর। নির্বাচন কমিশন ভোট তামাশার রঙ্গমঞ্চে প্রধান অভিনেতা হিসেবেই ভূমিকা পালন করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন