বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিপুল সম্ভাবনার লৌহ খনি আবিষ্কার

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশে প্রথমবারের মত উন্নত মানের লৌহ আকরিকের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে ভ’-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদফতরের বরাতে ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপুর গ্রামে পরিচালিত ভু-তাত্বিক অনুসন্ধান শেষে গত মঙ্গলবার জিওলজিক্যাল সার্ভে(জিএসবি) বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ মাসুম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভ’-গর্ভের ১৭৫০ ফুট নিচে ৪০০ ফুট পুরুত্বের এই ম্যাগনেটাইট স্তরটি ৬ থেকে ১০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। লৌহ আকরিকের পাশাপাশি স্বর্ণ, কপার, নিকেল, ক্রোমিয়ামের পাশাপাশি ভ’-পৃষ্ঠের ১হাজার ১৫০ ফুট গভীরে বিপুল পরিমান চুনাপাথরের সন্ধ্যান পাওয়ার কথাও জানিয়েছে জরিপ অধিদফতর। বিশ্বের লৌহ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে কানাডা, ব্রাজিল, চীন, সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়ার বেশীরভাগ লৌহ খনিতে আকরিকের মান ৫০ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে আবিস্কৃত লৌহ আকরিকের মান ৬৫ শতাংশের উপরে বলে দাবী করেছেন জরিপ পরিচালনায় অংশগ্রহণকারি বিশেষজ্ঞরা। আরো ৬ বছর আগে ২০১৩ সালেই এই ইসবপুর গ্রামের ৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত মুশিদপুর এলাকায় প্রথম খনিজসম্পদ আবিস্কার করতে সক্ষম হলেও গত ৬ বছরেও এ সম্পর্কে তেমন কোনো অগ্রগতি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়নি জিএসবি। অনেক দেরিতে হলেও অবশেষে বিপুল পরিমান মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ আবিস্কারের তথ্য নিশ্চিত করল ভূ-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদফতর।

দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ জোরে শোরেই প্রচার করা হচ্ছে। তবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা, বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায়, লৌহ খনি আবিস্কৃত হওয়ার মত ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অনেক বড় সুসংবাদ। সেই পঞ্চাশের দশকে দেশে প্রথমবারের মত গ্যাসফিল্ড আবিস্কার ও গ্যাসসম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানীখাতে একপ্রকার মাইলফলক অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষত: আবাসিক খাতে গ্যাসসংযোগ এবং রাসায়নিক সার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার দেশে শিল্পোন্নয়নে সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি কয়েকটি তেলক্ষেত্র আবিস্কৃত হলেও সে সব সম্ভাবনাময় তেলক্ষেত্র উন্নয়নসহ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। আশির দশকের মাঝামাঝি সিলেটের হরিপুর ও কৈলাসটিলায় প্রাথমিক হিসাবে ১৩৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদের তথ্য দিয়ে দৈনিক ৫-৭ ব্যারেল তেল উত্তোলন শুরু করলেও অজ্ঞাত কারণে কয়েক বছরের মধ্যে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। কোটি কোটি ব্যারেল তেলের মজুদ রেখে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এই তেলক্ষেত্রগুলো থেকে ক্রুড তেল উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হলেও সীমান্তের ওপারে কুপ বসিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৮ সালের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে তেল উত্তোলন কার্যক্রম উদ্বোধনের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতীয় দু’টি হেলিকপ্টার খণি এলাকায় ৩ বার চক্কর দেয়ার পর তেলখনি নিয়ে রহম্যময়তা শুরু হয় বলে স্থানীয়রা জানায়। সিসা ও সিমেন্ট দিয়ে খনিমুখ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।

জ্বালানী তেল-গ্যাসের পাশাপাশি শিল্পায়ন ও আধুনিক সভ্যতার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে লোহা। লৌহ আকরিক, স্ক্র্যাপ ও লৌহজাত পণ্য আকারে দেশে প্রতিবছর কয়েক লাখ টন লোহার প্রয়োজন হয় যার পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। একইভাবে জ্বালানী তেলের পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। হরিপুর, কৈলাসটিলার পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রে তেলের মজুদ থাকার সম্ভাবনার কথা শোনা গিয়েছিল। সে সব অনাবিষ্কৃত খনিজের অনুসন্ধান ও উত্তোলন নিশ্চিত করা পরের কথা, কোটি কোটি ব্যারেল তেল মজুদের তথ্য পাওয়ার পরও দু’টি তেলক্ষেত্রের তেল উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ার কোনো সদুত্তোর আমাদের কাছে নেই। দিনাজপুরে আবিস্কৃত লৌহখনি কি বাণিজ্যিক উত্তোলন হবে? লৌহ ছাড়াও স্বর্ণ, নিকেল, কপার ও ক্রোমিয়ামের মত মূল্যবান পদার্থের মজুদের কথা জানিয়েছে জরিপ অধিদফতর। এই সম্পদ উত্তোলন করে জনগনের ভাগ্যোন্নয়নে কাজে লাগানো গেলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নের বাস্তবায়ন খুব বেশী দূরে নয়। কোনো রহস্যময়তা বা ষড়যন্ত্রের কারণে যেন দেশের জন্য বিপুল সম্ভাবনাময় খনিজসম্পদের উত্তোলন ও উন্নয়ন ব্যাহত না হয় সেদিকে সরকারের লক্ষ্য ও সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অহেতুক সময় ক্ষেপণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সিদ্ধান্তহীনতা পরিহার করে লৌহ উত্তোলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। লৌহ আবিষ্কারের বিষয়টি যেন কেউ ধামাচাপা দেয়ার সুযোগ না পায় সে লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারনা ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। দেশের প্রথম লোহার খনি আবিস্কারের সাথে জড়িত সকলের প্রতি আমাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল। তাদের এই অনন্য আবিষ্কার দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে যথাশীঘ্র কাজে লাগানো হোক, এটাই সকলের প্রত্যাশা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন