বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুনাফা তুলতে ভিড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ প্রস্তাব পাস হলে আগামী ১ জুলাই থেকে বর্ধিত হারে কর কাটা হবে। এ ভয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ তুলতে গ্রাহকের হিড়িক লেগেছে।
গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গিয়ে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। তাদের বেশির ভাগই এসেছেন সুদের টাকা তুলতে।

এমনই এক গ্রাহক শেখ মামুন। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শুনছি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের আগে যদি সুদের টাকা না তুলি তাহলে বেশি কর দিতে হবে। ব্যাংকে সুদের টাকা রেখে বাড়তি কর দেয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। তাই সুদের টাকা তুলতে এসেছি।

‘সকাল সাড়ে ১০টায় টোকেন জমা দিয়েছি। বিকাল ৩টা বাজে, এখনও টাকা তুলতে পারিনি। আর কতক্ষণ যে অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে?’

বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হতো। নতুন প্রস্তাব পাস হলে আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে সুদের ওপর নতুন করের হার। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর আগে যখন সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়, ওই সময়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়েছিল। এবার বর্ধিত করহারের প্রস্তাব পাস হলে কোন নিয়মে উৎসে কর কাটা হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মো. মাছুম পাটোয়ারী বলেন, বাজেট প্রস্তাবে সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকার ওপর উৎসে করহার বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে সুদের টাকা তুলতে গত কয়েকদিন ধরে তিন থেকে চারগুণ বেশি গ্রাহক ভিড় করছেন।

তিনি বলেন, মানুষের ধারণা ৩০ জুনের পর সুদের টাকা তুললে বেশি কর কাটা হবে। তবে এনবিআর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পায়নি বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা।

এদিকে এনবিআর কর্মকর্তারাও বলছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। যারা চলতি নিয়মে ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে সুদের টাকা তুলতে চান, তাদের উচিত হবে ৩০ জুনের আগেই সুদের টাকা তোলা। এতে তাদের বাড়তি কর দিতে হবে না।

যদিও আগামী অর্থবছরের জন্য উপস্থাপিত বাজেট বক্তব্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বা উৎসে কর নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কোনো কথা বলেননি। বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমসমূহের বিক্রয়, সুদ, নগদায়ন ইত্যাদি বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। একই সঙ্গে গ্রাহকের সুদ ও আসল ইএফটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এদিকে বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং অন্য খাত থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনার কথা নতুন বাজেটে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন