একে তো প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, তারপর ভেন্যুটাও ট্রেন্ট ব্রিজ। যে মাঠ বরাবরই বোলারদের জন্য বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। সেখানে ব্যাটসম্যানরা খুব কম সুযোগই দেবেন বোলার-ফিল্ডারদের। যৎসামান্য সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারলে দিতে হবে কঠিন খেসারত। সেই খেসারতই দিতে হলো বাংলাদেশকে।
ব্যক্তিগত ১০ রানে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাব্বির রহমানের কাছে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ডেভিড ওয়ার্নার। আসরে প্রথমবারের মত একাদশে সুযোগ পাওয়া এই সাব্বিরের হাতেই অস্ট্রেলিয়া ওপেনার দ্বিতীয় জীবন পান ব্যক্তিগত ৭০ রানে। সেই ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে এসেছে আসর সেরা ১৬৬ রানের ইনিংস। দুই ফিফটিম্যান অ্যারোন ফিঞ্চ ও উসমান খাজার সঙ্গে এই বাঁ-হাতি গড়েছেন যথাক্রমে ১২১ ও ১৯২ রানের বিস্ফোরক জুটি। ৫ উইকেটে ৩৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ। বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। সেমিফাইনালের আশা উজ্জ্বল করতে আবারো রান তাড়ার নতুন রেকর্ড গড়তে হতো বাংলাদেশকে।
এমন লক্ষ্যে শুরুটা যেমন হওয়ার দরকার তেমনটা হয়নি মাশরাফির দলের। তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে দলীয় ২৩ রানে রান আউটের শিকার হন সৌম্য। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০ ওভারে এক উইকেটে ৫৩। ব্যাট করছিলেন তামিম (২৩) ও সাকিব (১৩)। আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ৩২১ রানে লক্ষ্য ৫১ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে পূরণ করেছিল বাংলাদেশ।
বার্মিংহামের এই মাঠেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৪৪ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিল ইংল্যান্ড। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৮১ করে রেকর্ডটা হালনাগাদ করে নেয় ইংলিশরা। সেই খটখটে পিচে বোলারদের যে রকম বল করা দরকার তেমনটা করতে পারেনি টাইগার বোলাররা। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানদের কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন কেবল অনিয়মিন বোলার সৌম্য সরকার। আগের ৯ ইনিংসে ১ উইকেট পাওয়া সৌম্য এবার নেন ৫৮ রানে ৩ উইকেট। যাকে দলে নেয়ার চারিদিকে জোর দাবি সেই রুবেল দেন ৯ ওভারে ৮৩, ছিলেন উইকেটশূন্য। মুস্তাফিজুর রহমান-মাশরাফিরা রান দেন ওভারপ্রতি সাতের উপরে। অকার্যকর ছিল সাকিব আল হাসানের স্পিনও। সেই হিসাবে ১০ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে মিতব্যয়ী বোলিং করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের ফিল্ডিংটাও ছিল দৃষ্টিকটু।
পিচ কথা বলেছে ব্যাটসম্যানদের সুরে। কোনো কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিল না তখন সৌম্যের দারস্থ হন মাশরাফি। অধিনায়ককে হতাশ করেননি এই অনিয়মিত বোলার। একবিংশ ওভারে ফিঞ্চকে রুবেলের হাতে ক্যাচ বানিয়ে উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন করেন সৌম্য। তাতে অজিদের রান বন্যায় কোন প্রভাব পড়েনি। ব্যক্তিগত ৭০ রানে সাব্বিরের সহজ রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ওয়র্নার খাজাকে নিয়ে আসরে প্রথমবারের মত টানা সেঞ্চুরি জুটি উপহার দেন। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নার যখন সৌম্যের শিকার হয়ে ফেরেন ততক্ষণে তার নামের পাশে ১৪৭ বলে ১৪ চার ও ৫ ছয়ে ১৬৬ রান। আসরে যা তার দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ১৬তম শতক। বিশ্বকাপে একাধিক দেড়শোর্ধো ইনিংস খেলা একমাত্র খেলোয়াড়ও এখন ওয়ার্নার। গত আসরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ১৭৮ রান।
এরপর ১০ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাক্সওয়েল রান আউট হন রুবেলের সরাসরি থ্রোতে। খাজাকে সেঞ্চুরি করতে দেননি সৌম্য। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আউট হন ৭২ বলে ৮৯ করে।
শেষ দিকে কয়েকটি উইকেট পড়লেও অস্ট্রেলিয়ার রান আটকানো যায়নি। শেষ দশ ওভারে আসে ১৩১ রান। ৪৯ ওভার শেষে বৃষ্টির বাধায় ২৪ মিনিট খেলার বন্ধ ছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন