একে তো প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, তার উপর ভেন্যুটাও ট্রেন্ট ব্রিজ। যে মাঠ বরাবরই বোলারদের জন্য বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। সেখানে ব্যাটসম্যানরা খুব কম সুযোগই দেবেন বোলার-ফিল্ডারদের। যৎসামান্য সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারলে দিতে হবে কঠিন খেসারত। সেই খেসারতই দিতে হলো বাংলাদেশকে।
সাব্বির-রুবেলদের বাজে ফিল্ডিং-বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে ডেভিড ওয়ার্নারের দেড়শোর্ধো রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে ৩৮১ রানের পাহাড় গড়ার পরই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। রান তাড়ায় কখনোই মনে হয়নি বাংলাদেশ এই রান অতিক্রম করতে পারবে। শেষ পর্যন্ত মাশরাফির দল স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারে ৮ উইকেটে ৩৩৩। তাতে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয়ের রেকর্ড গড়া গেলেও জয়রথ থামে ৪৮ রান দূরে। বিশ্বকাপের ইতিহাসেই এক ম্যাচে এত (৭১৪) রান আসেনি আগে কখনো। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে (৬৮৮)। এই হারে সেমিফাইনালের স্বপ্ন ধূসর হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্যে। অন্যদিকে দুর্দান্ত জয়ে নিউজিল্যান্ডকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এল অস্ট্রেলিয়া।
প্রাপ্তি বলতে মুশফিকুর রহিমের দারুণ সেঞ্চুরি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছন্দে ফেরা। সাকিব আল হাসানও ৪১ রানের ছোট্ট ইনিংস দিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রকারীর তালিকার দ্বিতীয় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন। বিশ্বকাপে মুশফিকের প্রথম সেঞ্চুরি আসে ৯৫ বলে। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরির দিনে এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৯৭ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০২ রানে। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৫০ বলে ৬৯ রানের ঝড়ো ইনিংস। পঞ্চম উইকেটে এই জুটি যোগ করে ১২৭ রান।
বিশ্বকাপে সফল রান তাড়ার রেকর্ডই ৩২৭ রানের। সেখানে চারশ’প্রায় রান তাড়া করে জেতা কঠিন। সেটা আরো কঠিন হয়ে পড়ে এদিন সৌম্য-তামিমের উদ্বোধনী জুটি প্রত্যাশা মেটাতে না পারায়। তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে দলীয় ২৩ রানে রান আউটের শিকার হন সৌম্য। দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে আউট হন বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব। তামিম ভালো কিছুর আভাস দিয়েও তামেন ৭৪ বলে ৬২ রান করে। ভালো শুরু করেও এদিন লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি লিটন দাস।
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটি যখন শুরু করেন স্কোরবোর্ড তখন ৪ উইকেটে ১৭৫। হাতে তখনও ২০.৪ ওভার। অস্ট্রেলিয়ার রানও এই সময় ছিল এমনই। কিন্তু এরপর হাতে উইকেট থাকায় অস্ট্রেলিয়া রান তোলে ¯্রােতের বেগে। যা পারেনি বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়ার বড় ইনিংসের পিছনে অবদান আছে প্রথমবারের মত একাদশে সুযোগ পাওয়া সাব্বিরের। ব্যক্তিগত ১০ রানে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ওয়ার্নারের ক্যাচ নিতে পারেননি সাব্বির। ব্যক্তিগত ৭০ রানে আবারও ওয়ার্নার রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যায় সেই সাব্বিরের কল্যাণে। বিধ্বংসী ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে আসে ম্যাচ তো বটেই আসর সেরা ১৬৬ রানের ইনিংস। দুই ফিফটিম্যান অ্যারোন ফিঞ্চ ও উসমান খাজার সঙ্গে এই বাঁ-হাতি গড়েন যথাক্রমে ১২১ ও ১৯২ রানের বিস্ফোরক জুটি। চলতি আসরে টানা সেঞ্চুরি জুটি এই প্রথম।
বার্মিংহামের এই মাঠেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৪৪ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিল ইংল্যান্ড। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৮১ করে রেকর্ডটা হালনাগাদ করে নেয় ইংলিশরা। সেই খটখটে পিচে বোলারদের যে রকম বল করা দরকার তেমনটা করতে পারেনি টাইগার বোলাররা। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানদের কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন কেবল অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকার। আগের ৯ ইনিংসে ১ উইকেট পাওয়া সৌম্য এবার নেন ৫৮ রানে ৩ উইকেট। প্রথমবার একাদশে সুযোগ পাওয়া রুবেল দেন ৯ ওভারে ৮৩ রানে ছিলেংন উইকেটশূন্য। মুস্তাফিজুর রহমান-মাশরাফিরা রান দেন ওভারপ্রতি সাতের উপরে। অকার্যকর ছিল সাকিবের স্পিনও। সেই হিসাবে ১০ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে মিতব্যয়ী বোলিং করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের ফিল্ডিংটাও ছিল দৃষ্টিকটু। ফিল্ডিংটা আরেকটু ভালো হলে ২০-২৫ রান আটকানো ছিল খুব সম্ভব।
স্বীকৃত বোলাররা যখন অকার্যকর তখন সৌম্যের দারস্থ হন মাশরাফি। অধিনায়ককে হতাশ করেননি এই অনিয়মিত বোলার। একবিংশ ওভারে ফিঞ্চকে রুবেলের হাতে ক্যাচ বানিয়ে উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন করেন সৌম্য। তাতে অবশ্য অজিদের রান বন্যায় কোন প্রভাব পড়েনি। খাজাকে নিয়ে আসরে প্রথমবারের মত টানা সেঞ্চুরি জুটি উপহার দেন ওয়ার্নার। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নার যখন সৌম্যের শিকার হয়ে ফেরেন ততক্ষণে তার নামের পাশে ১৪৭ বলে ১৪ চার ও ৫ ছয়ে ১৬৬ রান। আসরে যা তার দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ১৬তম শতক। বিশ্বকাপে একাধিক দেড়শোর্ধো ইনিংস খেলা একমাত্র খেলোয়াড়ও এখন ওয়ার্নার। গত আসরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ১৭৮ রান। এরপর ১০ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাক্সওয়েল রান আউট হন রুবেলের সরাসরি থ্রোতে। খাজাকে সেঞ্চুরি করতে দেননি সৌম্য। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আউট হন ৭২ বলে ৮৯ করে। শেষ দিকে কয়েকটি উইকেট পড়লেও অস্ট্রেলিয়ার রান আটকানো যায়নি। শেষ দশ ওভারে আসে ১৩১ রান। লক্ষ্যটা চলে যায় বাংলাদেশের নাগালের বাইরে।
২৪ জুন সাউদাম্পটনে পরবর্তি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। অন্য দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন