শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

লিচু খেয়ে বিহারের শিশু মৃত্যু বেড়ে ১৫৩

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৯, ৩:২৮ পিএম

ভারতের বিহার রাজ্যে শিশু মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৩-তে, তার মধ্যে মুজাফ্‌ফরপুর জেলারই ১১৯ জন। রাজ্যটির বিভিন্ন হাসপাতালে অ্যাকিউট এনসেফালাইটিস সিন্ড্রোম (এইস) আক্রান্ত ৪ শতাধিক শিশু ভর্তি হয়েছে, তবে এখন ভর্তির হার কিছুটা হলেও কমছে।

লিচুর বিষক্রিয়ায় অপুষ্ট শিশুর মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেললে শিশুর প্রাণ হারানোর ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। বিহারের তাপমাত্রা এখন গড়ে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এর মধ্যেই অসুস্থ শিশুরা বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালের পাখার বাতাসও পাচ্ছে না। লিচু, দারিদ্র, অব্যবস্থাপনায় ভারতের রাজ্যটিতে অল্প দিনের ব্যবধানেই এত শিশু মারা গেল, আবার মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর অভিযোগও উঠেছে স্বজনদের কাছ থেকে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিহারে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ ও সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সি পি ঠাকুর। মৃতের পরিবারগুলোকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আবেদনও তিনি করেন। শিশুমৃত্যু কাণ্ডে বিভিন্ন মহল থেকে রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে কার্যত আত্মগোপন করে আছেন তিনি। যদিও এ দিন আরজেডি মুখপাত্র মনোজ ঝা বলেন, ‘তেজস্বী দিল্লিতে। বিহারের পরিস্থিতির ওপরে তাঁর তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে।' রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, শিশুমৃত্যুর ঘটনায় নীতিশ সরকারকে ছাড় দিয়েছে বিরোধীরা। তবে, এ দিন আরজেডির রাজ্যসভা সাংসদ মিশা ভারতী বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে আমি প্রধানমন্ত্রীর ভোজে যোগ দিতে পারি। আমার দলেরও একই অবস্থান।’

রাজনৈতিক টানাপোড়েন চললেও মুজফ্ফরপুরের হাসপাতালগুলোর চেহারা পাল্টায়নি। স্বজনদের ক্ষোভ, হাসপাতালের পাখা কাজ করছে না। মৃতদেহের ময়না তদন্তের পরে ২৫০০ টাকা করে চাওয়া হচ্ছে। এমনকি মৃত শিশুর নাকের নথও চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ। রোগীর পরিজনদের ওষুধ থেকে অক্সিজেনের সিলিন্ডার, সবই কিনে আনতে হচ্ছে। বাচ্চার মৃত্যুর পরেও ফি নেওয়া হচ্ছে। জলের অভাবও ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে।

বিহারের হিছারাতে এই প্রাদুর্ভাবের অবস্থার কেবল অবনতিই হচ্ছে, সেখানে নেই কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পানিশূন্য এমনকি রান্না করার গ্যাস পর্যন্ত নেই। হাসপাতালের বিছানায় অপুষ্ট শিশুগুলো এইস-এ আক্রান্ত অবস্থায় ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে, শীতাতপ ব্যবস্থা তো দূরেই থাক কোন ধরনের বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস ও পাচ্ছে না। 

৩ সন্তানের মা শাকিলা খাতুন বার্তা সংস্থা ‘এএফপি’কে বলেন, আমাদের পান করার মতো স্বচ্ছ পানিটুকু পর্যন্ত নাই। কাছাকাছি এক গ্রামের ট্যাপ থেকে পানি আনতে হয়। সেখানে আমরা কীভাবে স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করব? সরকার আমাদের নিয়ে মাথা ঘামায় না। যখন ভোটের দরকার হয় তখন শুধু তারা আমাদের কাছে আসে, এরপর আমাদের ভুলে যায়।’

প্রাদুর্ভাবের স্থান মুজাফ্‌ফরপুর জেলা, গ্রীষ্মকালে লিচু পাকার মৌসুমে এটাই দেশটির অন্যতম লিচু কেন্দ্রে পরিণত হয়। আর এই ভয়ংকর রোগ প্রতি বছরেই এখানে মহামারী আকারে ধারণ করে। গ্রীষ্মকালে এলাকার বাগানগুলিতে গোলাপী ত্বকের সুস্বাদু লিচুর ছড়াগুলো স্থানীয় ক্ষুধার্ত শিশুদের প্রলুব্ধ করে।

এই মহামারীর ওপর বিশদ গবেষণা করা শিশু বিশেষজ্ঞ অরুন শাহ বলেন, ‘কাঁচা (অপরিণত) লিচুই সমস্যার মূল কারণ। এটা এমন এক বিষাক্ত পদার্থ ধারণ করে যা কোনো অপুষ্ট শিশু খাওয়া মাত্রই তাদের শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা শিশুটির মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে।’

শুধু লিচুকেই দোষারোপ করে বিচার করা যাবে না, মানুষের ভাল স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকলে সম্ভবত এই মহামারী এড়ানো যেত, বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ২০১৮ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১১৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ১০৩। দেশটি স্বাস্থ্যসেবায় জাতীয় আয়ের এক শতাংশের কিছুটা বেশি ব্যয় করে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বিহারের মুজাফ্‌ফরপুরসহ সংলগ্ন এলাকায় শিশুমৃত্যু রুখতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে অসুস্থদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। দেশের জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অবস্থাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করে কেন্দ্র ও সমস্ত রাজ্যকে নোটিশ পাঠিয়েছে দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মুজাফ্‌ফরপুরের ঘটনার উল্লেখ করে তারা বলেছে, আগামী কয়েক দিনে কমিশনের চিকিৎসক-সহ বিশেষ দল বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করবে। সূত্র: এনডিটিভি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন