শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খালেদার বিরুদ্ধে হাসিনার চার কৌশল

প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দুটি ধারা বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করছে, যে দেশটি বিশ্বের অষ্টম জনবহুল জাতি। প্রথমটি হচ্ছে, দেশটির একদলীয় শাসনের দিকে নিপতিত হওয়া এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে উগ্রবাদীদের হামলায় ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি গোয়েন্দা কোম্পানি স্ট্রাটফোরের বিশ্লেষণে বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব মন্তব্য করা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে আরো বলা হয়, কর্তৃত্ববাদী শাসনের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয়, মধ্য বামপন্থী আওয়ামী লীগের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্য বামপন্থী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কোণঠাসা করতে চারটি কৌশল প্রয়োগ করছেন।
প্রথমত, ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সরকারের শাসনে সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল এবং বিএনপির শরীক জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে। জামায়াতের গঠনতন্ত্র অবৈধ ঘোষণা করার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারায়। (জামায়াতের গঠনতন্ত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলা হয়েছে আল্লাহকে, জনগণকে নয়।)
এর প্রতিবাদে সংঘর্ষে অন্তত ১৫০ জন মারা যায়। জামায়াত যদিও দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি নয়, তবে তার তৃণমূলের শক্তি বিএনপিকে ভোট পেতে সহায়তা করে।
দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিন লাখ থেকে ত্রিশ লাখ মানুষ হত্যার বিচারের জন্য যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ চার জামায়াত নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শেখ হাসিনা জামায়াতকে দুর্বল করেছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারে সমর্থন থাকলেও বিচারে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে।
তৃতীয়ত, বিএনপির ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের সুযোগ নেন হাসিনা। এতে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত হয়। এ নির্বাচনে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে। এতে হাসিনার জোট ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮০টিতে জয় পায়। ফলে আইন প্রণয়নে তারা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। চতুর্থত, হাসিনার সরকার বিএনপির বহু শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য চাপ দিচ্ছে। গণমাধ্যমের বহু প্রভাবশালী সদস্যও রয়েছেন বিচারের তালিকায়।
কর্তৃত্ববাদী শাসনের পাশাপাশি হয়েছে ক্রমবর্ধমান মৌলবাদী হামলা। অধ্যাপকসহ বহু বগ্লারকে খুন করা হয়েছে। এসব হত্যার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে নিরাপত্তা জোরদারের অজুহাতে জিএনপি-জামায়াতকে আরো কোণঠাসা করার পথ সুগম হয়েছে।
খালেদা জিয়াকে কোণঠাসা করে নির্বাচনী ফায়দা চান হাসিনা। এজন্য ধর্মের অবস্থানের ব্যাপারে তিনি কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন। যেমন তিনি ইসলামের সমালোচনাকারী বগ্লারদের সমালোচনা করছেন এবং সম্প্রতি সুপ্রিম কোট রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে একটি রিট খারিজ করে দিয়েছে। হাসিনার রাজনৈতিক হিসেব হচ্ছে তিনি যদি দেশের ৬ ভাগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র হ্রাস এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারেন তবে ভোটাররা একদলীয় শাসনের ব্যাপারটি উপেক্ষা করে আগামী নির্বাচনে তার দলকেই বিজয়ী করবে।
এক্ষেত্রে তার সফলতা আছে। ২০১৪ সালে দেশব্যাপী বহুদিন হরতাল হলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে ধর্মঘট না থাকলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৫ শতাংশ। শেখ হাসিনার শাসনে মূল্যস্ফীতি কমেছে। ঋণ এবং দারিদ্রও হ্রাস পেয়েছে। বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
তবে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে ব্যর্থ হলে এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন না হলে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে। তবে বিএনপি-জামায়াতকে কোণঠাসা করে তিনি হরতাল ডেকে অর্থনীতির ক্ষতি করার শক্তি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বাংলাদেশ কীভাবে তার এই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগায় সেটাই নির্ধারণ করবে দেশের ভবিষ্যৎ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন