শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পাকিস্তানে হিজড়াদের জন্য চালু হল বৃদ্ধাশ্রম!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৯, ২:৪২ পিএম

পাকিস্তানে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া সম্প্রদায়ের বৃদ্ধ মানুষের জন্য একটি অবসরকালীন নিবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাদের নিজেদের সম্প্রদায়েরই একজন সম্প্রতি এক বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে অন্তত সম্মানের সাথে জীবনের শেষ সময়টুকু পার করার একটা সুযোগ তাদের অনেকের জন্য তৈরি হল।

লাহোরে বাদশাহী মসজিদের পাশেই ডায়মন্ড মার্কেট। ডায়মন্ড মার্কেট হলেও সেখানে হীরা কিনতে পাওয়া যায় না। তবে সেখানে অর্থের বিনিময়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের যৌনতা কেনা যায়। তাদের নাচ দেখা যায়, তাদের মধ্যে যারা বয়স্ক, তারা অল্প বয়সীদের তুলনায় কম পয়সায় এসব সেবা দিয়ে থাকেন।

আর যখন আরও বয়স হয়ে যায় তখন জীবিকা নির্বাহ করা তাদের জন্য রীতিমতো কঠিন হয়ে পরে। এই সম্প্রদায়ের একজন অশি বাট্। সম্মান করে অনেকে তাকে গুরু অশি বলে ডাকেন। ২৫ বছর আগে লাহোরে বেশ নামডাক ছিল তার। শহরের বহু বিয়ের অনুষ্ঠান বা পার্টিতে তাকে নিয়মিত নাচগানে মশগুল দেখা যেতো। কিন্তু বয়স যত বাড়তে থাকলো, সময় তার জন্য ততই বদলাতে থাকলো।
নিজের বিছানায় প্রিয় বিড়াল চান্দাকে পাশে নিয়ে তিনি বলছিলেন, সেইসব দিনে প্রতি রাতেই একটা করে পার্টি থাকতো। নাচের বিনিময়ে আমি যে টাকা চাইতাম সেটাই আমাকে দেয়া হতো। কিন্তু সময় বদলে গেছে। জানালেন, এখনো নাচের অনুষ্ঠান করেন তিনি কিন্তু সঙ্গে করে বয়সে তরুণদের নিতে হয়।

তরুণদের নেয়া হয় যাতে তিনি হাঁপিয়ে গেলে তারাই যেন বেশ কিছুক্ষণ সবাইকে মাতিয়ে রাখতে পারেন। গুরু অশির জীবন যেমন বয়সের ভারে বদলে গেছে, তেমনি বদলে গেছে পাকিস্তান। ১৯৯০ এর দশক থেকে পাকিস্তান ক্রমাগত রক্ষণশীল ভাবধারার দিকে ঝুঁকছে।

যার অর্থ হল অশির মতো মানুষের জায়গা পাকিস্তানের সমাজে সংকুচিত হয়ে আসছে। নতুন ধারার পাকিস্তানে মানুষের চিন্তার ধারাও পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু সেখানে হিজড়া সম্প্রদায়ের সব সময় একটা অবস্থান ছিল। মুঘল আমলে এমনকি তারা রাজদরবারে উপদেষ্টা হিসেবেও নিয়োগ পেতেন।

পাকিস্তানের আনুমানিক পাঁচ লাখ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বাস। পরিবার যে তাদের ত্যাগ করে সেটি বেশিরভাগ হিজড়ারাই মানসিকভাবে একরকম গ্রহণ করেই নিয়েছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে তাদের এক কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়তে হয়।

পাকিস্তানের সমাজে বৃদ্ধ বাবা মায়ের দায়িত্ব থাকে ছেলে মেয়ের কাঁধে। কিন্তু যখন ছেলে মেয়ে থাকে না, তখন কোন সহায়তা পাওয়া খুবই কঠিন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য বাস্তবতা আরও কঠিন। সেই সমস্যা মোকাবিলায় এই সম্প্রদায়ের মানুষজন নিজেরাই একটা ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।

তাদের সেই ব্যবস্থার নাম দেয়া হয়েছে ‘গুরু-চেলা’ ব্যবস্থা। নামটি শুনেই কিছুটা আঁচ করা যায় পদ্ধতিটি কেমন হতে পারে। গুরু মানে বয়স্ক কেউ, আর চেলা মানে বয়সে তরুণ কেউ। যেখানে গুরুকে দেখভাল করার দায়িত্ব বয়সে তরুণদের। কিন্তু এই ব্যবস্থা সব সময় কাজ করে না। এই সমস্যা নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে অনুধাবন করেছিলেন অশি বাট্।

তিনি বলছেন, ‘একদিন একটা লোক হন্তদন্ত করে আমার কাছে এসে বলল গত সপ্তাহখানেক হল মর্গে তোমাদের একজনের মরদেহ পরে রয়েছে। কেউ সেই মরদেহ দাবি করেনি বলে কোন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়নি। আমার খুব কষ্ট লেগেছিল। আমি বিষয়টা মেনে নিতে পারিনি।’

সেখান থেকেই মাথার মধ্যে একটা ধারনা ঘুরপাক খেতে থাকলো। গত আট বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অবশেষে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের সম্প্রদায়ের বয়স্কদের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম বা অবসরকালীন নিবাস চালু করেন তিনি।

তার সেই বৃদ্ধ নিবাস তৃতীয় লিঙ্গের ৪০ জন বয়স্ক ব্যক্তির বাস। যাদের জন্য থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সামনে এর সাথে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র এবং আরও বড় আকারের থাকার ব্যবস্থা তৈরি করতে চান তিনি। শুরুতে নিজের অর্থেই এই কেন্দ্র চালু করেছেন অশি বাট্। তবে সম্প্রতি কিছু অর্থ সহায়তা পেতে শুরু করেছেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন