বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা

তৈমূর আলম খন্দকার | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৯, ৬:৪৮ এএম

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের অবসর প্রাপ্ত বিচারক যিনি অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল প্রধান বিচারপতি পদ প্রাপ্তির দৌড়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তিনি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম. শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক গত ৩ জুন প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকায় বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা, জামিন, চিকিৎসা প্রভৃতি সম্পর্কে বিএনপি সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের বক্তব্যকে চরম মিথ্যাচার উল্লেখ করে লর্ড হো হোর সাথে তুলনা করেছেন। বিচারপতি মানিকের আর্টিকেলটির শিরোনাম ছিল “খালেদার ব্যাপারে মিথ্যাচার এবং লর্ড হো হো”। তিনি আর্টিকেলটির যবনিকা টানতে যেয়ে বলেছেন যে, “তাদের (বিএনপি নেতাদের) অবস্থা আজ লর্ড হো হোর মতো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে ব্যক্তিকে বার্লিন বেতারের মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণার জন্য ঘৃণা এবং কৌতুকভাবে ডাকা হতো লর্ড হো হো বলে”। বিএনপি নেতাদের মিথ্যাবাদী প্রমাণ করার জন্য ঘৃণিত, কুখ্যাত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একজন মিথ্যাবাদীর সাথে তুলনা করেছেন এ জন্য যে, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য লর্ড হো হো এর চেয়ে নিম্নমানের উপমা দেয়ার কোনো ভাষা বা শব্দ বিচারপতি মহোদয়ের হয়তো জানা ছিল না, যদি থাকতো তবে তাও করতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করতেন না। আর্টিকেলটি কাকে খুশি করার জন্য তিনি লিখেছেন তা পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবেন। তবে লেখাটি যে একপেশে হয়ে গেল তা তিনি বুঝতে পেরেছেন কিনা এটাই এখন প্রশ্ন। তিনি নিশ্চয় আমার মতো কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, বিচারপতি হিসাবে তার নিরপেক্ষ থাকার কথা, তবে এ লেখায় তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি আওয়ামী ঘরানার লোক এবং বিচারক হিসাবে সে দৃষ্টিকোণ থেকেই দায়িত্বে থাকাকালীন বিচার কার্য সম্পন্ন করেছেন বলে ধারণা করা অযৌক্তিক কিছু হবে না। সরকারের মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ অনেক নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন ও দল সম্পর্কে অনেক কটুক্তি করে, কারণ তারা বিএনপি’র প্রতিপক্ষ। কিন্তু বিচারপতি মহোদয় সে একই কায়দায় বাস্তবতা বহির্ভূত আইনের গান গাইলেন। সিনিয়র নেত্রী শ্রদ্ধাভাজন সাজেদা চৌধুরী এক সাবেক এক এম.পি বর্তমানে মন্ত্রীকে বেয়াদব বলে আখ্যায়িত করেছিলেন যা মিডিয়াতে প্রকাশ পেয়েছে। সে মন্ত্রী যে ভাষায় বিএনপি’কে প্রতিনিয়ত কটাক্ক বা কটুক্তি করেন বিচারপতি মহোদয় বিএনপি নেতাদের লর্ড হো হো’র সাথে তুলনা করে বিএনপি’কে হেয় ও কটুক্তি করার প্রতিযোগিতায় মন্ত্রীর চেয়ে বরং বেশী এগিয়ে গেলেন। এ জন্য আকাক্সিক্ষত পুরষ্কার তিনি পেতেও পারেন।

বিচারপতি মহোদয়ের বোধদয় হওয়া উচিৎ ছিল যে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বয়স ৭৪/৭৫ বৎসর, তিনি অসুস্থ্য এবং একজন সিনিয়র নারী এবং মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দু’জন সিনিয়র নারী এবং একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আর একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী যিনি কারারুদ্ধ। তাদের শাসনআমল নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা আছে, তবে ব্যক্তি হিসাবে দুইজনই মা’য়ের জাতি এবং আমাদের শ্রদ্ধাপাত্র। ব্যক্তি পুজায় একজনকে বড় করার জন্য অন্যজনকে ছোট করার মানসিকতা বীরত্বের নয় বরং তোষামোদীর বহিঃপ্রকাশ এবং রাজনীতিতে তোয়াজের প্রচলন এরাই করেছে নির্লজ্জভাবে। তোয়াজের কারণে গণতান্ত্রিক রাজনীতি কলুষিত হচ্ছে, মেধাবী রাজনীতিকরা পিছিয়ে পড়েছে, ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে জনগণের ভোগান্তি, এর সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে সারশূন্য কথামালার ফুলঝুড়ি। এটাই নির্মম পরিহাস।

কোনো রাজনৈতিক মামলাতেই রাজনীতিকে অপরাধ গণ্যকরে অভিযোগ আনা হয় না। বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে করা মামলাই রাজনৈতিক মামলা হিসাবে ইতোপূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই হয়। যেমন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হলেও মামলাটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, যার কারণে রাজনৈতিকভাবে এর সমাধান হয়েছিল। সে সময় আমরা শ্লোগান দিয়েছি যে, “জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো।” সে কারণে আগরতলা ষড়যন্ত্র নামক রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনায় বসেছিল। শেখ হাসিনা সরকার বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, খালেদা জিয়ার জামিন বা মামলায় সরকারের কোন হাত নাই বরং আদালতের বিষয়। এখানে বিএনপিকে প্রমাণ করতে হবে যে, মামলাটি উদ্দ্যেশ্য রাজনৈতিক প্রণোদিত (!) কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবিধান থেকে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতির প্রভিশন রদ করেছেন এবং খালেদা জিয়া চেয়েছেন এর পুনর্বহাল এবং বিরোধ এখানেই এবং এটাই তাকে জেলে রাখার মূল উদ্দ্যেশ্য, যতটুকু আমরা বুঝতে পারি। এখানে অকপটে স্বীকার করতে হয় যে, দেশনেত্রীর মুক্তির বিষয়ে একটি রাজনৈতিক সুযোগ হাত ছাড়া হয়েছে। সংলাপে বসার পূর্বে দাবি করা উচিৎ ছিল যে, “বিএনপি চেয়ারপার্সনকে ছাড়া আমরা আলোচনায় বসবো না।” এখানে স্বরণ রাখা দরকার যে, বেগম খালেদা জিয়াই ঐক্যফ্রন্টের মূল ও প্রধান নেতা। কারণ বেগম জিয়ার সমর্থকদের দ্বারা মাঠ ভর্তি হলে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বক্তৃতা দেন। ঐক্যফ্রন্টের জনবল কতটুকু আছে তা নিশ্চয় তারা আঁচ করতে পেরেছেন। নেত্রীকে আলোচনার টেবিলে আনা হোক, যেমনিভাবে অনেক নেতাকে মুক্তি দিতে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়েছিল এ দাবি সরকার মানতো না, ফলে খালি হাতে ফিরে আসার চেয়ে এ দাবীর কারণে সংলাপ ভেঙ্গে গেলে একটি রাজনৈতিক ফয়দা অবশ্যই হতো এবং আমার বিশ্বাস এতে জনসমর্থন অবশ্যই বিএনপি’র পক্ষে আসতো। সংলাপে বসে সরকার থেকে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি কোন দাবীই আদায় করতে পারে নাই। সংলাপে গায়েবী মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী তালিকা চেয়েছেন, যার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেয়া সম্ভব ছিল না, কারণ রোজই প্রতি থানায় মামলা হচ্ছিল। বিচারপতি মহোদয়ের আর্টিকেলে চেয়ারপার্সনের মামলাগুলির আইনী ব্যাখ্যায় তার মত করে সরকারের সাফাই গেয়েছেন, অন্যদিকে তার লেখনীতে গায়েবী মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, সরকারের প্রভাব ও জামিনে প্রতিবন্ধকতা যদি উপস্থাপিত হতো তবে লেখাটির মর্যাদা পাঠকের নিকট বৃদ্ধি পেতো বলে আমার বিশ্বাস।

বিচারপতি মহোদয়ের বোধদয় হওয়া উচিৎ ছিল যে, সরলতা বা সদইচ্ছার জন্য বিএনপি’কে হোঁচট খেতে হয়েছে বার বার। দেশবাসীর নিকট স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য অনেকগুলি আইনের রেফারেন্স দিয়ে বিচারপতি মানিক বিএনপি চেয়ারপার্সনকে কারাগারে আটকের যথাযথ ভ‚মিকাকে জাসটিফাইড করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভোটার বিহীন তথাকথিত নির্বাচনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে একটি গণ প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট হতে পারে না, এ কথাগুলি তার আর্টিকেলে আসে নাই। সর্বোচ্চ আদালতের এক বিচারপতি (অব.) যখন কথা বলেন তখন তিনি এক পেশে না হয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে কথা বলবেন এটাইতো জাতি প্রত্যাশা করে। জনগণের কোটি কোটি টাকার নির্বাচন ভোটারবিহীন হয়ে গেল, তথাকথিত এ নির্বাচনী তামাশা কি দুর্নীতির আওতায় পড়ে না? এ মর্মে বিচারপতি মানিক মন্তব্য করবেন কি?

অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনের মতো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি না বানিয়ে মাঠের রাজনৈতিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করলে ১/১১ এর হোঁচোট বিএনপি’কে খেতে হতো না। বিএনপি’র আজকের ঝুট ঝামেলার মূল কারণ ইয়াজউদ্দিনের অদূরদর্শিতা। উল্লেখ্য, ১/১১ এর সময় যারা দলের সাথে বেইমানী করেছে মহানুভতার কারণে বিএনপি ভুলে গেলেও জাতীয়তাবাদী প্রেমিকেরা তা ভুলে নাই বা ভুলার কথা নয়। বিশেষ করে তারা ভুলবে না যা ১/১১ সরকারের সময় টাক্স ফোর্সের রিমান্ড খেটেছে। ফলে হোঁচট বারবারই ফিরে আসে। তারপরও বিএনপি দাঁড়িয়ে আছে তালগাছের মত, বিলীন হয়ে যায় নাই, সরকার ও সরকারী ঘরানার লোকেরা যেভাবে মনে করছে।

এক পেশে কথা বলতে চাই না। আমি নিজে আত্মসমালোচনায় বিশ্বাসী। কারণ আত্মসমালোচনা সঠিক পথ নির্ধারণ করে দেখায় আলোর পথ। বিএনপি এমপিদের সংসদে যোগদেয়ার বিষয়টি নেতৃবৃন্দ যেভাবে তালগোল করে ফেলছেন, যা কাক্সিক্ষত ছিল না, সিদ্ধান্তটি আরো মসৃণভাবে নেয়া যেতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সংসদে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপি আঁতাত করে নাই। কারণ রাজনৈতিক অংগনে প্রচার ছিল যে, সংসদে যোগ দিলেই চেয়ারপার্সনের মুক্তি হবে। কিন্তু সংসদে যাওয়ার পরও নেত্রীর মুক্তি না হওয়াই প্রমাণ হয় যে, অদৃশ্য কোন সমঝোতা বা প্যারোল নিয়ে বিএনপি থেকে প্রস্তাব সরকারকে দেয়া হয় নাই। অন্যদিকে আমার নিজের দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে হয় যে, নেত্রীর মুক্তি বা জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবারের উপর ছেড়ে দেয়ার দায়িত্ব অবহেলার নামান্তর। তার কারাবন্দি রাজনৈতিক এবং এর দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত দলকেই রাজনৈতিকভাবে নিতে হবে। মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে দলীয় সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে নিজেই যোগ না দিয়ে সমালোচনার পথ খোলা রেখেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেছেন যে, সরকারের চাপের চেয়ে ৫ জন এম.পি লোভের বশবর্তী হয়েই অনির্বাচিত বির্তকিত সংসদে যোগ দিয়েছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যর বক্তব্য যদি সঠিক হয় তবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাসচিবকে লোভ বশীভুত করতে পারে নাই, অন্যদিকে যেহেতু তিনি দলীয় মুখপাত্র হিসাবে জাতীয় সংসদকে এত দিন বিতর্কিত সংসদ বলে বক্তৃতা দিয়েছেন, সেহেতু যোগদান না করে নিজেকে বির্তকের উর্দ্ধে রাখার উপলব্ধি থেকেই তিনি শপথ নেন নাই। কিন্তু এতে কঠোর সমালোচনা ও বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখানেই বির্তকের শেষ নয়, এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে যাতে বারবার হোঁচট খেতে না হয়। কারণ রাজনীতির পথ শুধু কন্টকময় নয় পিচ্ছিলও বটে।

আরাফাত রহমান কোকো বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত সেনা প্রধানের পুত্র। অন্যকোন পরিচয় না দিলেও কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে উই রিভোল্ট মুক্তিযুদ্ধের জোরালো অনুপ্রেরণা জিয়ার কণ্ঠ থেকেই বিশ্ববাসী শুনেছে। নিয়ম থাকলেও সেই জিয়া পুত্রকে সেনাবাহিনীর কবরস্থানে দাফন করতে দেয়া হয় নাই, অনুমতির আবেদন প্রত্যাখান করা হয়েছে। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শোক জানাতে চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে দেয়া হয় নাই। লোক মুখে বলাবলি হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী সেখানে নাটক করতে গিয়েছিলন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে গেইট থেকে ফেরৎ না পাঠিয়ে তার সাথে কাউন্টার নাটক করতে পারলে জনমত আমাদের পক্ষে থাকতো, দুরদর্শিতার প্রশ্নে এখানেও বিএনপি’কে হোঁচট খেতে হয়েছে।

৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ী থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সনকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের যেখানেই জিয়া ও বেগম জিয়ার নাম ছিল সেখানেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বিমানবন্দরসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, ব্যতিক্রম শুধু নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ জিয়া হলের নাম অক্ষুণ্ন রয়েছে, মুরালে কালিমা লেপন করা হয়েছিল, জেলা প্রসাশনকে বাধ্য করা হয়েছে কালি মোছার জন্য। বিএনপি অফিস উচ্ছেদের পৌর কর্তৃপক্ষের নোটিশ ২০ বছর আটকে রেখেছি শুধুমাত্র নিম্ন আদালত দিয়েই, এক লাফে উচ্চ আদালতে আসতে হয় নাই। সিটি কর্পোরেশনকে বিএনপি অফিস নিয়ে আমাদের সাথে আপোস করতে হয়েছে। আইনের গুটি, আর দাবার গুটি, কোনটা হিট করলে কোনটা পড়বে, ঝাঁপ দেয়ার পূর্বে তা জরিপ না করতে পারাই ব্যর্থতা এবং এজন্যই হোঁচট খেতে হয়।

চেয়ারপার্সনের মুক্তি ও জামিন নিয়ে বিচারপতি মানিক সরকারের অনেক সাফাই গেয়েছেন, তিনি সরকারের সকল পদক্ষেপকে আইনের বেলুনে ভরে দিয়েছেন। কিন্তু ম্যাডামের একটি মামলায় জামিন হলে ২টি মামলার শৌন অ্যারেস্ট করা হয় এবং ম্যাডামের জেল দীর্ঘায়িত করার জন্যই একই সাথে শৌন অ্যারেস্ট না করে একটার পর একটা দেখানো হচ্ছে। জেলা জজ জামিন দেবেন না, কিন্তু দীর্ঘসূত্রতার জন্য জামিনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন দেড় থেকে ২ মাস পর পর, কুমিল্লার মামলায় ৫৩ জন আসামীর মধ্যে ৫২ জন জামিনে থাকার পরও ম্যাডামের জামিন নিয়ে এতো দীর্ঘসূত্রতা কেন এ সম্পর্কেও বিচারপতি মানিকের নীরবতা কি স্বচ্ছতার পরিচয় বহন করে? আইনের পাশাপাশি বিচারাঙ্গনের রিজন্যাবল বলতে একটি দিক নির্দেশনা রয়েছে, যা ন্যায় বিচারের জন্য বাধ্যতামূলক। রিজন্যাবল শব্দটি কি এ ক্ষেত্রে প্রতিপালিত হচ্ছে? বিচারপতি মানিক এ ক্ষেত্রে কি বলবেন?

ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন ঈদের পূর্বেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের জামিন চেয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তির বিষয়ে কার্যত তিনি কি ভ‚মিকা রেখেছেন? কয়টা দিন ড. কামাল তার জন্য আদালতে দাঁড়িয়েছেন? কোনটা কান্না আর কোনটা মায়া কান্না এটা বোঝার শক্তি জনগণের রয়েছে, এ কথা কি ড. কামাল বোঝেন না? তিনি কেন্দ্র পাহাড়া দেয়ার কথা বলেই তার দায়িত্ব শেষ করেছেন। তিনি কেন তার কেন্দ্রে অবস্থান নেন নাই। তাছাড়া তার নিজ দল গণফোরাম কি তিনি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন? প্রথম দিন মোকাব্বির’কে “বেঈমান, গেট আউট” বলে পরের দিন পাশে বসিয়ে মিটিং করে তিনি নিজে শুধু বির্তকিত হন নাই বরং গোটা ঐক্যফন্ট’কে আস্থাহীনতায় ফেলেছেন। গণফোরামের প্রতিনিধি বির্তকিত সংসদে প্রথমে যোগদান করে বৈধতার সুযোগ করে দিয়েছেন, তাই নয় কি? আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া (রায় কি হবে তা জেনেই) আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। জেলে যাওয়ার জন্য আমাদের যেখানে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করা উচিৎ ছিল সেখানে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে মিছিল করে ম্যাডামকে জেলে দিয়ে আসা হলো। কিন্তু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে কিনা এবং জেল এত দীর্ঘ হবে, একটার পর একটা মামলায় শৌন অ্যারেস্ট হবে, নিম্ন আদালত মাসের পর মাস সময় নিয়ে জামিনের শুনানী করে জামিন দীর্ঘায়িত করবে এ বিষয়টি বুঝার দূর দৃর্ষ্টি ও গভীর ভাবে পর্যালোচনার কি দরকার ছিল না? নাকি এটা তাদেরই বুদ্ধি যারা মনে করেছিল যে, লাগাতার আন্দোলনে ১৫ দিন বা একমাসের মধ্যে সরকারকে ফেলে দেয়া যাবে (!)। এ ধরনের হোচট খেতে খেতে বিএনপি হয়রান, তবে উদ্যম হারালে চলবে না।

বিএনপি’কে বার বার হোঁচট খেতে হয়েছে। কিন্তু যাদের কারণে হোঁচট খেতে হয় তাদের বিরুদ্ধে কার্যত: কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না এবং জবাবদিহিতার সাংগঠনিক প্রশ্নটি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বহিষ্কার হলেও অসুবিধা নাই, কারণ পুনর্বহালের দরজাতো খোলাই থাকে। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, যেখানেই কোন বির্তক দেখা দেয় সেখানেই বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেয়া হয়। যিনি বিএনপি’র শেষ বাতিঘর, তাকে কি কোন বির্তকে জড়ানো উচিৎ? আশায় বুক বেঁধে বাতি ঘর তো জ্বালিয়ে রাখতে হবে, একে নিভানো যাবে না। কারণ দু’জনের (বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়া ও ম্যাডাম) রক্তই এর (তারেক রহমান) শরীরে প্রবাহিত। উল্লেখ্য, পাক-ভারত উপ-মহাদেশে রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের একটি গুরুত্ব রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও অনেক সতর্কতার সাথে এগুতে হবে, কোন কোটারীকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না, পরীক্ষিত কর্মীর তালিকা করতে হবে, মেধার মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ রাজনীতির অপর নাম মেধা এবং মেধার অপর নাম রাজনীতি। রাজনীতি একটি বিজ্ঞান, ২+২=৪, অংকের হিসাবে রাজনীতি চলতে হবে, নতুবা রাজনীতির হিসাব মিলবে না। জনগণের চাহিদা মোতাবেক রাজনীতির অনুশীলন না হলে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। অর্থনীতির সূত্র যথা চাহিদা ও সর্বরাহ সমান্তরাল না হলে অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে না। ভারতে নির্বাচনের ফলাফলের পর রাহুল গান্ধী বলেছে যে, ‘বিজেপির ব্যর্থতা জনগণের সামনে আমরা তুলে ধরতে পারি নাই বলে শোচনীয় পরাজয়।’ আমরা এক্ষেত্রে কতটুকু সফল, এখানে মেধার বিকাশ কতটুকু হয়েছে?

গোটা দুনিয়া জাতীয়তাবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী চেতনায় জনগণকে আমরা কতটুকু উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি? স্মরণ রাখা দরকার আত্মসমালোচনা বিরোধিতা নয় বরং সংগঠনকে মজবুত ও চেতনাকে করে দৃঢ়।

যুদ্ধ জয়ের প্রধান শর্ত এর জোরালো প্রস্তুতি এবং এ জন্য নির্ভরশীল সৈনিকের একটি তালিকা থাকা দরকার, যারা মাঠ ছেড়ে দৌড় দেবে না। ৪০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী দলটিতে অনুরূপ একটি নির্ভরযোগ্য তালিকা আদৌ প্রস্তুত হয়েছে কিনা তা আঁচ করা যাচ্ছে না। বিচারপতি মানিক’কে পরামর্শ নয়, বরং বলতে চাই যে, বিচারপতির লেখা একপেশে আর্টিকেল কাক্সিক্ষত নয়, বরং সমালোচিত।
লেখক: চেয়ারম্যান, গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন