শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন হওয়ায় এই সফলতা -সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৯, ৭:০৯ পিএম

২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮তে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) প্রকাশিত বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, একই সময়ে ভুটানের বিনিয়োগ কমেছে ১৬০ শতাংশ। বিভিন্ন দেশে বিদেশি বিনিয়োগ যখন পড়তির দিকে, তখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ করছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে বিনিযোগ বাড়ার সফলতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন হওয়ায় এদেশে বিনিয়োগ বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতেই স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেওয়ার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে জাপানি টোব্যাকো কোম্পানির বিনিয়োগ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আসলে আমরা না করতে পারি না। আমরা যে কোনো বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই।

সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্ট-২০১৯ এ বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সেখানেই এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) মো. আবুল কালাম আজাদ ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো ২৫১ কোটি ১৬ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। সে হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। পাশের দেশ ভারতে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো তিন হাজার ৯৯০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে যা দাঁড়ায় চার হাজার ২২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে ছয় শতাংশ।

মালদ্বীপে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো ৪৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৫৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ নতুন বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১২ শতাংশ। নেপালে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো ১২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১৬ কোটি আট লাখ টাকা। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ২৪ শতাংশ। পাকিস্তানে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো ৩২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ২৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো ১৩৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১৬১ কোটি ৫ লাখ টাকা। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৭ শতাংশ। ভুটানে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো ৯৯ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে সে বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৫৯ লাখ টাকা। বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে ১৬০ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো রিটেইনড আর্নিংস ও রিজার্ভের ওপর করের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পুঁজিবাজারের জন্য যেসব ‘প্রণোদনার’ ঘোষণা দিয়েছেন, তার একটি বাজারের জন্য নেতিবাচক বলে বিবেচিত হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার দিলে তার ওপর ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেছেন তিনি। এতে কোম্পানিগুলো নগদে লভ্যাংশ বিতরণ করবে বলে মনে করে সরকার।

এ ছাড়া কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত মুনাফা বা রিটেইনড আনির্ংস বা রিজার্ভের ওপরও করারোপের প্রস্তাব হয়েছে। কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিজার্ভ থাকলে যতটুকু বেশি তার ওপর ধার্য হবে এই কর।

এই প্রস্তাবের কারণে বগু কোম্পানি বিপাকে পড়বে। এমনকি বছরে মুনাফার চেয়ে বেশি চলে যাবে কর পরিশোধে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেটে ‘প্রণোদনার’ কথা জানালেও বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে বাজারে নেতিবাচক হাওয়া, যদিও আশা করা হচ্ছিল এবার বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। এর অন্তর্নিহিত কারণ হিসেবে রিজার্ভের ওপর করারোপের প্রস্তাবকেই কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

সালমান এফ রহমান এই বিষয়ে বলেন, ‘অনেক জায়গা থেকে আমাদের বলা হয়েছে। এটা সিরিয়াসলি আমরা কনসিডার করছি। এখানে দুটো জিনিস। একটা হলো রিটেইনড আর্নিংসের উপর ট্যাক্স। এচকুয়ালি এটা ডাবল ট্যাক্স হয়ে যাচ্ছে। রিটেইনড আনিংস অলরেডি ট্যাক্স পেইড। এটা পয়েন্টেট আউট করা হয়েছে। রিটেইনড আর্নিংয়ের উপর কর আরোপ করা হলে তা ডাবল করে রূপান্তরিত হবে, যা কোম্পানির বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তাই চূড়ান্ত বাজেটের আগে সরকার বিষয়টি সিরিয়াসলি বিবেচনা করবে।’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্রেড লাইসেন্সে করতে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটা করা হলে ডুইং বিজনেসে আরও পাঁচ ধাপ পিছিয়ে যাবে। এ বিষয়গুলো এনবিআরের কাছে তুলে ধরতে হবে।

কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনার দেশ। বিশ্বের কাছে সব দিক দিয়েই বাংলাদেশকে ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরতে হবে, তবেই দ্রুত এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন