ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করতে ধারাবহিকভাবে বাড়ছে সিগারেটের দাম। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটেও বিগত বছর গুলোর মতো সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে এ বছর এই দাম বৃদ্ধি সর্বোচ্চ। প্রস্তাবিত এই মূল্য বাস্তবায়ন হলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার যে ভিশন সেটা পূরনে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে অনেকেই এবারের বাজেট সরকারের ধূমপানমুক্ত দেশ গড়ার জন্য ইতিবাচক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের সব স্তরেই পৃথকভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে উচ্চ মূল্যস্তরের সিগারেটের দাম প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেট ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩ টাকা ও ১০৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২৩ টাকা হয়েছে। এছাড়া নি¤œ স্তরের সিগারেট ৩৫ টাকা থেকে ৩৭ টাকা এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম ৪৮ টাকা থেকে ৬৩ টাকা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্তরের ২০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ৩৬ টাকা বেড়েছে। এর আগে এত পরিমাণ দাম বাড়ানোর রেকর্ড দেখা যায়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, গত এক দশক ধরে প্রতি বাজেটেই ধারাবাহিকভাবে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত এক দশকে সব স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ করে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে নি¤œ স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য ছিলো ৭ টাকা ৫০ পয়সা। যা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে ৩৭ টাকা করা হয়েছে। এতেকরে দশ বছরের ব্যবধানে নি¤œস্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫ গুন। এই বাজেটে দৃষ্টান্তমূলক ভাবে সিগারেটের মূল্য বেড়েছে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত। দেশের ইতিহাসে সিগারেটের বর্তমান বাজার মূল্যও সর্বোচ্চ।
সিগারেটের দাম বাড়ানোর ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় বাড়ছে অন্যদিকে কমছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয় ‘বিগত ৮ বছরে দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ’। ধূমপায়ী কমার সঙ্গে সঙ্গে ২০১২-১৩ অর্থ বছরের তুলনায় রাজস্ব আহরণও বেড়েছে কয়েক গুন। অর্থাৎ তামাকমুক্ত দেশ গড়তে সরকার সফলভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সিগারেটের ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা দৃশ্যমান হলেও পিছিয়ে আছে বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাক যেমন- জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে।
তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যমতে, দেশে তামাক ব্যবহারকারীর মধ্যে ৭২ শতাংশই বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকের ভোক্তা। এই বিশাল অঙ্ককে আইন ও করের আওতার বাইরে রেখে তামাক মুক্ত দেশ গড়া সম্ভব নয় বলে সরকারকে এ বিষয়ে নজর দিতে বলে আসছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো। এ প্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই মূল্য বাস্তবায়ন হবে কি না সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। এই মূল্য কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। এটা যদি সঠিকভাবে তদারকি না করা হয় তাহলে অবৈধ সিগারেটের মতো এখানেও তামাক সেবী আশানুরুপ কমবে না বরং বাড়বে।
উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরে সিগারেটের দাম বাড়ানোর ফলে সারা দেশে ব্যপকহারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অবৈধ সিগারেট বাজার দখল করে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। আর বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাক ছিলো সব সময়ই নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
দেশে তামাকের ব্যবহার কমাতে সিগারেটের মতো সকল প্রকার তামাক পণ্যের উপর সরকারের একই রকম দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বচ্ছতার সাথে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, সরকারের প্রস্তাবিত মূল্য কাঠামো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার ভিশন সফল হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন