মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

জাতীয় কবির দায়সারা স্মরণ আর কতদিন চলবে

প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবদুল গফুর : সম্প্রতি দেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়ে গেল। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সুধী, সংস্কৃতিসেবী ও সঙ্গীতশিল্পী আলোচনার পাশাপাশি নজরুলের কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয়, এসব আয়োজনে জাতীয় কবিকে যেভাবে তুলে ধরা হবে বলে জনগণ আশা করেছিল তা হয়নি।
বিশেষ করে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তী যেমন দায়সারা গোছে পালিত হয়েছে তা ছিল খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মনে হলো নজরুল জয়ন্তী রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পালিত হওয়ার ব্যবস্থা দেশে প্রচলিত রয়েছে বলেই এটা করতে হচ্ছে। নইলে এতে কোনো আন্তরিক আগ্রহ নেই সংশ্লিষ্টদের। তাদের মনোভাব ও কাজকর্ম দেখে মনে হয় বঙ্গবন্ধু যেন নজরুলকে কলকাতা থেকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা এবং তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে এক মহা ভুল করে বসেছেন।
শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, আজকাল নজরুল ইসলামকে অধিকাংশ বেসরকারি পর্যায়েও যেভাবে স্মরণ করা হয়ে থাকে তার মাধ্যমে তাঁকে কতটা যথাযথ মর্যাদা দেয়া হয় সে প্রশ্ন থেকেই যায়। নজরুল ইসলাম জাতিকে জাগিয়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার বহু জাতি জাগানিয়া গদ্য রচনা। এ ছাড়া রয়েছে সৃজনশীলতার মূল ক্ষেত্রে তাঁর অংসখ্য কবিতা ও গান। বাংলা ভাষায় নজরুলই যে ছিলেন সর্বাধিক সংখ্যক গানের রচয়িতা এ সত্য সর্বজনস্বীকৃত।
কোনো কবিতা বা গানের অনুষদ যেমন হতে পারে প্রেম, তেমনি হতে পারে দেশপ্রেম। হতে পারে ধর্ম বিশ্বাস, অথবা ধর্ম নিয়ে সংশয়। কবিতা ও গানের অনুষদ যেমন হতে পারে বিদেশি শক্তির পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভের সংগ্রাম, তেমনি হতে পারে দেশের অভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন শোষক শক্তির কবল থেকে শোষিত জনগণের মুক্তি। যে কোনো কবির রচিত কবিতা ও গানের অনুষদে যেমন হতে পারে শিল্পের জন্য শিল্প (আর্টস ফর আর্টস সেক) নীতি অনুসরণে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা, তেমনি হতে পারে কবিতা ও গানের মাধ্যমে জাতিকে জাগিয়ে তোলার সাধনা ও সংগ্রাম।
একজন বহুমুখী প্রতিভার কবি ও গীতিকার হিসেবে নজরুল ইসলাম যেমন রচনা করেছেন বহু প্রেমের কবিতা ও গান, তেমনি তিনি রচনা করেছেন দেশ ও জাতিকে বিদেশি শাসকদের শৃঙ্খলা মুক্ত করার লক্ষ্যে নিবেদিত অসংখ্য জাতি জাগানিয়া কবিতা ও গান, তেমনি তিনি রচনা করেছেন দেশের দুই প্রধান ধর্ম সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে মিলনের সেতুবন্ধ সৃষ্টির লক্ষ্যে বেশ কিছু কবিতা ও গান। এর পাশাপাশি তিনি তাঁর স্বজাতি পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসলামের মহান সাম্য ভ্রাতৃত্বের আদর্শ এবং মুসলমানদের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরে পাওয়ার প্রেরণাদায়ী বহু কবিতা ও গান।
কাজী নজরুল ইসলামের এসব বহুমুখী সৃজনশীল কর্মকাÐের তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে নজরুলের আবির্ভাবের সময়কালের বাস্তবতার বৈশিষ্ট্য। নজরুলের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে। উপমহাদেশে তখন চলছে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির শাসন, যার সূত্রপাত হয় ১৭৫৭ সালের পলাশী বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে।
পলাশীতে এক ক‚টিল চক্রান্তের মাধ্যমে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে পরাজিত ও হত্যা করে এদেশে ইংরেজ শাসন শুরু হওয়ার পর নব্য শাসকদের অন্যতম প্রধান নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, জমিদারি, আয়মাদারি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি জাতীয় জীবনের সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র থেকে বেছে বেছে মুসলমানদের উৎখাত করে সেসব স্থানে ইংরেজ অনুগত হিন্দুদের বসানো। পলাশী বিপর্যয়ের মাত্র সাড়ে তিন দশকের মধ্যে ১৭৯৩ সালে পূর্বতন ভ‚মি ব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইংরেজরা ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ নামের নতুন ভ‚মি ব্যবস্থা প্রবর্তন করে- ইংরেজ অনুগত এক নব্য জমিদার গোষ্ঠী গড়ে তোলে, যার সিংহভাগই ছিল হিন্দু। নব্য শাসকদের এসব পদক্ষেপের পরিণতিতে এককালের সমৃদ্ধ মুসলমানরা অচিরেই পরিণত হয় এক অসহায় জনগোষ্ঠীতে।
অন্যদিকে মুসলমানরাও কিছুতেই বিদেশি ইংরেজদের শাসন মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে একের পর এক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এসব সংগ্রামের মধ্যে ছিল মজনু শাহের নেতৃত্বে ফকীর আন্দোলন, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা খ্যাত সংগ্রাম, শরীয়তুল্লাহ দুদু মিয়ার ফারায়েজী আন্দোলন, মহিশূরের হায়দার আলী টিপু সুলতানের সংগ্রাম, সৈয়দ আহমদ বেলভীর জিহাদ আন্দোলন এবং সর্বশেষে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এসব সংগ্রামই ব্যর্থ হয় উপমহাদেশের প্রধান ধর্মসম্প্রদায় হিন্দুদের অসহযোগিতার কারণে।
সর্বশেষের ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবও ব্যর্থ হওয়ায় ইংরেজ ভক্ত হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এদের অন্যতম সাহিত্য স¤্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ‘সংবাদ ভাস্কর’ এ লিখলেনÑ ‘পাঠক সকল জয় জয় বলিয়া নৃত্য কর। হিন্দু প্রজাসকল দেবালয়ে পূজা দেও, আমাদের রাজ্যেশ্বর শত্রæজয়ী হইলেন।’
আর কবি ঈশ্বরগুপ্ত লিখলেনÑ
‘চিরকাল হয় যেন ব্রিটিশের জয়।
ব্রিটিশের রাজল²ী স্থির যেন রয়।
এমন সুখের রাজ্য আর নাহি হয়।
শাস্ত্রমতে এই রাজ্য রামরাজ্য কয়\’
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব পরাজিত হওয়ার পর মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার নতুন করে নেমে আসে। তখন নবাব আবদুল লতিফ, স্যার সৈয়দ আহমদ খান প্রমুখ তদানীন্তন মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং উন্নতির লক্ষ্যে সাময়িকভাবে ইংরেজদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি অবলম্বন করেন। এই সহযোগিতা যুগের শেষ নেতা নবাব সলিমুল্লাহর আমলে ১৯০৫ সালে প্রধানত প্রশাসনিক কার্যের সুবিধার্থে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত বিশাল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি বিভক্ত করে ঢাকা রাজধানীসহ ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামের একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হলে কলকাতা প্রবাসী হিন্দু জমিদাররা পূর্ববঙ্গে অবস্থিত তাদের জমিদারিতে তাদের প্রভাব হ্রাসের আশঙ্কায় এর বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন সৃষ্টি করে বসেন। যে হিন্দু নেতৃবৃন্দ সব সময়ই ইংরেজদের সমর্থক ছিলেন তাদের এ আকস্মিক অগ্নিমূর্তিতে শাসকরা ভীত হয়ে পড়েন এবং মাত্র ছয় বছরের মাথায় বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে পুরনো মিত্রদের খুশি রাখার ব্যবস্থা করেন। বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় রবীন্দ্রনাথ মহা খুশি হয়ে ব্রিটিশ স¤্রাটকে জনগনমন অধিনায়ক শীর্ষক গান লিখে অভিনন্দন জানান।
বঙ্গভঙ্গের ফলে অবহেলিত পূর্ববঙ্গের উন্নয়নের কিঞ্চিৎ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বলে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের অবিসংবাদিত নেতা নবাব সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। তাঁর ক্ষোভ প্রশমনের লক্ষ্যে সরকার তাঁর অন্যতম দাবি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতি দেয়। কলকাতা প্রবাসী হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের প্রবল বিরোধিতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও দশ বছর পিছিয়ে যায়। আগেই বলা হয়েছে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর পূর্ব পুরুষরা মুসলিম শাসনামলে বিচার বিভাগের উচ্চ পদে আসীন ছিলেন। ইংরেজ আমলে নব্য শাসকদের মুসলিমবিরোধী নতির শিকার হয়ে অসহায় দরিদ্র হয়ে পড়ে নজরুলের পরিবার। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাল্যকাল থেকেই স্বাধীনচিত্ততার প্রমাণ রাখেন। একপর্যায়ে তরুণ নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তখন থেকেই তাঁর কাব্যচর্চা শুরু হয়। কবি দেহিকভাবে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করলেও দুর্ভাগ্যক্রমে ১৯৪২ সালে এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অল্প বয়সেই নজরুলের কবি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে। সেই নিরিখে তাঁর কবি জীবনের ব্যাপ্তি ছিল মাত্র দুই দশকের মত। কিন্তু মাত্র দুই দশকের মধ্যে নজরুল বাংলা কবিতা ও গানে যে বিশাল অবদান রাখতে সক্ষম হন, তা অপকল্পনীয়। আগেই বলেছি, নজরুলের কবিতা ও গানের অনুষঙ্গের মধ্যে যেমন ছিল ব্যক্তিগত প্রেম বিরহ, মিলন, তেমনি ছিল দেশপ্রেম যেমন ছিল বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পাশাপাশি, সা¤্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণা, তেমনি ছিল তাঁর পিছিয়ে পড়া স্বজাতি মুসলমানদেরকে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে ইসলামের মহান আদর্শ সম্বন্ধে গৌরব বোধ জাগিয়ে তোলার মতো অসংখ্য কবিতা ও গান।  
এর পাশাপাশি নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে এদেশের দুই প্রধান ধর্ম সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে মিলনের লক্ষ্যে রচনা করেন বেশ কিছু কবিতা ও গান। নজরুল নিজে গভীরভাবে ইসলামে বিশ্বাসী হয়েও বহু কবিতা ও গান রচনা করেন হিন্দু ঐতিহ্যকে তুলে ধরে, যা বাংলা সাহিত্যের প্রধান ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পক্ষে কখনও সম্ভব হয়নি। অথচ রবীন্দ্রনাথের জমিদারি ছিল মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। রবীন্দ্রনাথ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় জমিদারি করলেও তিনি মুসলমানদের কোনো ধর্মীয় পর্ব নিয়ে কোনো কবিতা বা গান রচনা করেননি। এ কারণে প্রখ্যাত, সাংবাদিক সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছিলেনÑ রবীন্দ্রনাথের আকাশে কখনও ঈদের চাঁদ উঠত না।
এ ব্যাপারে নজরুলেল অবদান ছিল একেবারে অনন্য। নিজে ইসলামী আদর্শে গভীর বিশ্বাসী হয়েও ইসলামী আদর্শে অসংখ্য হামদ, নাত, ইসলামী জাগরণী কবিতা ও গানের পাশাপাশি লিখে গেছেন হিন্দু ঐতিহ্যের বহু কবিতা ও গান। নজরুলের এই উদার অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণেই সেই ১৯২৯ সালে যখন রবীন্দ্রনাথের কবি খ্যাতির সূর্য মধ্য গগনে তখন কলকাতার এলবার্ট হলে সেকালের হিন্দু-মুসলমান নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়।
নজরুলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এবার বাংলাদেশের অনেক স্থানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে বহু অনুষ্ঠান হলেও সরকারি সংস্থার আয়োজনগুলো ছিল অনেকটাই দায়সারা গোছের, যা দুঃখজনক। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার আয়োজনেও যেসব অনুষ্ঠান হয় তাতেও একটি বিষয় ছিল দুর্ভাগ্যজনক। নজরুলের জন্ম ব্রিটিশ শাসিত পরাধীন দেশে ১৮৯৯ সালে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ার কারণে তার কবি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৪২ সালে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে বহুমুখী অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই কবি বাংলা কবিতা ও গানকে সমৃদ্ধ করে গেছেন অসংখ্য ক্ষেত্রে। দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের কথা, নজরুলের অসাধারণ বৈচিত্র্যমÐিত অবদানের মাত্র সীমিত কয়েকটা দিকই বর্তমানে আমরা চর্চা হতে দেখতে পাই। নজরুল চর্চা রহস্যজনকভাবে শুধু তাঁর প্রেম ও হিন্দু-মুসলমান মিলনবিষয়ক কবিতা গানের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। অথচ নজরুলের প্রধান পরিচয়ই হচ্ছে বিদ্রোহ- অন্যায়, অনাচার, শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রচিত কবিতা ও গান যা জাতিকে জাগিয়ে তোলার অনুপ্রেরণা যোগায়। সেসবের চর্চা আজ প্রায় অনুপস্থিত।
জাতিকে জাগিয়ে তুলতে কবি যেসব জাতি জাগানিয়া কবিতা ও গান লিখেছেন, জাতির মধ্যে ইসলামের সাম্য ভ্রাতৃত্বের হারিয়ে অভিধার যাওয়া আদর্শের জন্য গৌরব বোধ সৃষ্টির পক্ষে রচিত মধ্যে যেসব কবিতা ও গান, সেসবের ¯্রষ্টা হিসেবে কবিকে স্মরণ না করলে একদিন ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে তার অভিধার তাৎপর্যও লোকে উপলব্ধি করতে পারবে না। কারণ কেউ শুধু প্রেমের কবিতা ও গান রচনা করে জাতীয় কবি হতে পারেন না। তার জাতীয় কবি অভিধা সার্থক করতে হলে শোষণ, নির্যাতন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার ক্ষেত্রে তাঁর গৌরবজনক যে অবদান ছিল তার সাথেই নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করতে হবে। নইলে এ যুগের নজরুল চর্চাকারীদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনও ক্ষমা করবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন