বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পরীক্ষায় ফেল দুধ ও তেল

৭টি পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বাজারে প্রচলিত ৭টি পাস্তুরিত দুধে মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও ৩টি অপাস্তুরিত দুধে ফরমালিন ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরবাইরে ফ্রুট ড্রিংকস, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, ঘি, গুঁড়া মশলা, শুকনা মরিচ, হলুদ, পাম অয়েলের উপর পরীক্ষা চালানো হয়। এরমধ্যে অধিকাংশ পণ্যই বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ডে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

খাদ্যপণ্যের গুণগত মান নিয়ে সরকার ও জনগণগের উদ্বেগের কথা চিন্তা করে গবেষণাটি পরিচালনা করে ঢাবি বায়োমেডিকেল রিচার্স সেন্টার ও ফার্মেসী অনুষদ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফার্মেসী লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফার্মেসী অনুষদের প্রফেসর ফিরোজ আহমেদ, প্রফেসর আ ব ম ফারুক, প্রফেসর রায়হান সরকার। পাস্তুরিত দুধের ৭টি নমুনা হলো, মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট এবং ইগলু ম্যাংগো। আর অপাস্তুরিত দুধের ৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে।

দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের উল্লেখ করে প্রফেসর আ ব ম ফারুক বলেন, আমাদের পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের ৭টি নমুনার সবগুলোতেই মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সসিন, এন্টিবায়োটিক সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং এন্টিবায়োটিক এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও অপাস্তুরিত দুধের একটি নমুনাতে ফরমালিনও পাওয়া গেছে। অন্য একটি পাওয়া গেছে ডিটারজেন্ট। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুধে ফ্যাট ইন মিল্ক যা থাকার কথা পাস্তুরিত দুধের ৬টি নমুনাতেই তার কম পাওয়া গেছে। সলিড নট ফ্যাট যে পরিমাণ থাকার কথা রয়েছে বিশ্লেষণে এসব দুধের সবগুলোতেই কম ছিল। এসিডিটি এনালাইসিসে যত থাকার কথা পাস্তুরিত দুধের ১টি ও অপাস্তুরিত দুধের ৩টি নমুনাতে এর পরিমাণ ছিল বেশি। আর টোটাল ব্যাকটেরিয়া কাউন্টও ছিল পাস্তুরিত দুধের সবগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কলিফর্ম কাউন্ট পাস্তুরিত দুধের ২টি নমুনাতে ছিল এর পরিমাণ অনেক বেশি। আর স্টেফাইলোকক্কাস স্পেসিজ শূন্য থাকার কথা থাকলেও পাস্তুরিত দুধের ৫টিতে এর জীবাণুর উপস্থিতিতো ছিলই এমনকি এর পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। অর্থাৎ বিএসটিআই মানদন্ডে এসব দুধের সবগুলোই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ফ্রুট ড্রিংকস যেগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বলে প্রতীয়মান হয় এমন নামের ১১টি নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই এর শর্ত পূরণ করে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। যেসব পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেগুলো হলো- স্টার শিপ ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, সেজন ম্যাংগো ড্রিংক, প্রাণ ফ্রুটো, অরেনজি, প্রাণ জুনিয়র ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, লিটল ফ্রুটিকা ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, সানড্রপ, চাবা রেড এপল, সানভাইটাল নেকটার ডি ম্যাংগো, লোটে সুইডেন্ড এপল ড্রিংক এবং ট্রপিকানা টুইস্টার।

বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ফ্রুট ড্রিংকসে টোটাল প্লেট কাউন্স থাকতে পারে সবোর্চ্চ ৫০টি। কিন্তু বিশ্লেষণে ১১টি পণ্যের ৭টিতে এর পরিমাণ ছিল অনেক বেশী। আর কলিফর্ম না থাকার কথা থাকলেও ১১টি পণ্যের ৩টিতে এর উপস্থিতি ছিল ১০০টি। এছাড়াও কৃত্রিম মিষ্টিকারক সাইক্লামেট ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও ১১টি পণ্যের সবগুলোতেই এর ব্যবহার ছিল অতিমাত্রায়। অর্থাৎ এসব পণ্য নমুনাই মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।
সরিষার তেলের ৮টি বিভিন্ন নামের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। সেগুলো হলো- রূপচাঁদা, রাঁধুনি, তীর, ফ্রেশ, পুষ্টি, সুরেশ, ড্যানিশ এবং বসুধা। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সরিষার তেলের স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু যত থাকার কথা তার থেকে বেশি রয়েছে ৮টি নমুনার ৩টিতে। পারক্সাইড ভ্যালু ১০ থাকার কথা থাকলেও ৪টিতে এর পরিমাণ ছিল প্রায় দ্বিগুণ। আর রিলেটিভ ডেনসিটির পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল ৪টিতে। এছাড়া জলীয় উপাদানও বেশি পাওয়া গেছে ৮টি নমুনার সবগুলোতে। অর্থাৎ এসব নমুনা মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

সয়াবিনেরও ৮টি নমুনার ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেগুলো হলো- রূপচাঁদা, ফ্রেশ, পুষ্টি, তীর, এসিআই পিওর, ভিওলা, মুসকান এবং মিজান। বিএসটিআই স্টান্ডার্ড অনুযায়ী তেলের এসিড ভ্যালু যতটুকু থাকার কথা দুটি নমুনায় তার থেকে বেশি পাওয়া গেছে। স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু ৮টির ২টতে কম এবং ৫টিতে বেশি পাওয়া গেছে। ৫টিতে পারক্সাইড ভ্যালু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। আয়োডিন ভ্যালু ৮টি নমুনার ৪টিতে কম এবং ১টিতে বেশি পাওয়া গেছে। আর রিলেটিভ ডেনসিটি বেশি পাওয়া গেছে ৩টি নমুনাতে। জলীয় উপাদান ৮টি নমুনাতেই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া মেটাল কনটেন্ট কপারের বেলায় সবগুলো নমুনায় নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি এবং আয়রণের বেলায় ৬টি নমুনাতে বেশি ছিল।

বাজারে প্রচলিত ৮টি ঘিয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। এগুলো হলো, বাঝাবাড়ি, প্রাণ, মিল্কভিটা, মিল্কম্যান, সমির এবং টিনে বিক্রি হওয়া নামবিহীন দুটি নমুনা। বিএসটিআই স্ট্যান্ডর্ড অনুযায়ী ঘিতে জলীয় উপাদান ও আয়োডিন ভ্যাল যতটুকু থাকার কথা রয়েছে এসব নমুনায় তার থেকে বেশি পাওয়া গেছে। আর তিলের তেলের কোন উপস্থিতি থাকতে পারবে না উল্লেখ থাকলেও এসব পণ্যের সবগুলোতেই এর উপস্থিতি ছিল। এ বিবেচনায় ৮টি নমুনাই মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

বাজারে প্রচলিত ৮টি বিভিন্ন নামের শুকনা মরিচের গুঁড়া সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। সেগুলো হলো, আরকো, বিডি, ড্যানিশ, ফ্রেশ, প্রাণ, রাঁধুনি এবং প্লাস্টিক ব্যাগে খোলা অবস্থায় বিক্রি হওয়া নামহীন ২টি। বিএসটিআই স্টান্ডার্ড অনুযায়ী শুকনা গুঁড়া মরিচে জলীয় উপাদান সবোর্চ্চ ১০ থাকার কথা থাকলেও এসব নমুনার ২টিতে বেশি ছিল। এসিড ইনসল্যুবল এ্যাশ সবগুলোতেই ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

একই কম্পানির হলুদের নমুনায়ও বিএসটিআই স্টান্ডার্ড মানা হয়নি। ৮টির ৬টিতে জলীয় উপাদান বেশি পাওয়া গেছে। আর মেটানিল ইয়েলো নামের টেক্সটাইল কালারের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য না হলেও সবগুলোতে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বলে প্রতীয়মান এমন ১০টি পাম ওয়েলের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেগুলা হলো, মিজান এবং টিনে খোলা বিক্রি হওয়া ৯টি নমুনা। বিএসটিআই স্টান্ডার্ড অনুযায়ী পাম অয়েলে স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু, ইনসল্যুবল ইমপিউরিটিজ, পারক্সাইড ভ্যালু ও জলীয় উপাদান সবগুলো নমুনাতেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এই বিবেচনায় ১০টির সব নমুনাই মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রফেসর আ ব ম ফারুক বলেন, আমরা যে ফলাফল দিয়েছি তা নমুনার ফলাফল। তার মানে এই না যে ঐসব কোম্পানির সব পণ্যই এরকম। এন্টিবায়োটিক যে গরুকে খাওয়ানো হলো ঐ গরুর দুধ ও মাংস আমরা খেলে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে। মানুষকে বাঁচাতে আপনারা ইমেডিয়েটলি গরুকে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধ করুন।
একজন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই সরকার যে সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দিয়েছে তারা যদি সঠিকভাবে ও নৈতিকতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতো তাহলে এ সমস্যা এমন প্রকট আকার ধারণ করতো না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (15)
Mohammad Farhad ২৬ জুন, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
ভাল তো একটা নিলে অন্যটা ফ্রি
Total Reply(0)
Murtuza Chowdhury ২৬ জুন, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
এসব কি চলছে দেশে? এদেরকে থামাবার কি কোন উপায় নাই? শুধু জরিমানা করে কি এদেরকে জনগনকে নিয়ে ভয়ংকর খেলা থেকে নিবৃত করা যাবে? এদেরকে থামাতে না পারলে পুরো জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
Suman G ২৬ জুন, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
এদের পণ্য বয়কট করুক সাধারন পাবলিক|
Total Reply(0)
Nil Akash ২৬ জুন, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি প্রানের সবগুলো পন্য পরিক্ষা করলে একটাও টিকবেনা।।
Total Reply(0)
Mamun Nabab ২৬ জুন, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
সরকার বলে দিলে ভালো হয় । জনগণ কি খাবে।
Total Reply(0)
Zisan Feni ২৬ জুন, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
বাংলার মানুষ কি খাবে
Total Reply(0)
Md Juel Khan ২৬ জুন, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
আগেকার মানুষ তো এত ভেজাল বুঝতোনা
Total Reply(0)
শফিকুল ইসলাম ২৬ জুন, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
ঢাকার বাহিরে দুধ 50-60 টাকা কেজিতে পাওয়া যায়,আর এই ভেজাল দুধ কিনে জনগন,70-75 টাকায়। বন্ধ করে দেয়া হউক এসব কোম্পানি।
Total Reply(0)
আলমগীর কবির ২৬ জুন, ২০১৯, ৭:৩৩ এএম says : 0
এবার মনে হয়, সরিষার তেলে ফিরে যেতে হবে!!!
Total Reply(0)
md ashraful alam ২৬ জুন, ২০১৯, ১০:২৭ এএম says : 0
Dear sir, we are pleased on your inspection all item of edible oil quality test from market collection sample. if you mention what range the above oil quality . you have mention only all item can not exit out of range ,but what range and what result not mention. if mention all parameter then we can satisfy. your sincerely, md ashraful alam.
Total Reply(0)
shafiqul Alam ২৬ জুন, ২০১৯, ১১:২৪ এএম says : 0
ALLAH Tumi Ato vejal Theka Amader bachu... Ameen
Total Reply(0)
Md. Akramul Islam ২৬ জুন, ২০১৯, ২:২০ পিএম says : 0
Please, mentioned which company product quality is good and bad or risky for the human health. Then, we can decide which company product, we can buy. Otherwise, general statement is meaningless for us.
Total Reply(0)
মোঃআসাদুল ইসলাম ২৬ জুন, ২০১৯, ২:৩৮ পিএম says : 0
পন্য বয়কট কোন সমস্যার সমাধান নয়। সরকারকে ঐ কোম্পানীগুলোকে সময় দিয়ে তাদের প্রোডাক্টের মান ঠিক করবে।নতুবা তাদের সব রকম প্রোডাক্ট উৎপাদন ও বিপনন বন্ধ করে দিতে হবে।আর বি এস টি আই তাদের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।বি এস টি আই এর যারা ঘুষ ব্যানিজ্যে যুক্ত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।কি আর বলবো যে দেশে দূর্নীতি দমন কমিশন দূর্নীতিগ্রস্ত সেখানে দূর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করবে, এটাই স্বাভাবিক।
Total Reply(1)
MAHMUD ২৭ জুন, ২০১৯, ৭:১৬ পিএম says : 4
Yes brother you are 100% right,
Md Nasir Uddin ২৯ জুন, ২০১৯, ১২:৪৭ পিএম says : 0
Saudi Arabia Laws system only foods crimes
Total Reply(0)
Sayful Islam ৯ মার্চ, ২০২১, ৬:২১ এএম says : 0
কর্মচারীদেরতো ঠিক ভাবে বেতন দেয়ই না তাও আবার ভেজাল সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করছি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন