শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাংবাদিককে দেয়া দুদকের চিঠির ভাষা নিয়ে বিতর্ক: বাংলাদেশের আইন কি বলে?

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৯, ৬:৫৮ পিএম

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তুলে প্রকাশিত এক সংবাদের প্রতিবেদককে তলব করেছে দুদক।

আজ ওই প্রতিবেদকের সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি জানিয়েছেন, তাকে যে নোটিশ দেয়া হয়েছে, তার ভাষা না বদলালে তিনি যাবেননা।

বাংলাদেশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে গত ২৩ জুন 'লন্ডন প্রবাসী দয়াছের অডিও সংলাপে দুদকের ওরা কারা?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সেখানে দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে বক্তব্য দিতে নিউজ পোর্টালটির বিশেষ প্রতিবেদক দীপু সারোয়ারকে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

আজকের মধ্যে দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নোটিশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

নোটিশে বলা হয়,"দুদকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হল। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।"

ভাষার ব্যবহার নিয়ে আপত্তি সাংবাদিকের:

জিজ্ঞাসাবাদ বা তলব করার নামে এ ধরণের ভাষার ব্যবহারকে আপত্তিকর, অপমানজনক এবং হুমকিস্বরূপ বলে দাবি করছেন বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি সারোয়ার দীপু।

তিনি বলেন, "একদিকে তারা এই নোটিশে আইন ও বিধিমালার কথা উল্লেখ করছেন, আবার না আসলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে। অন্যদিকে বলছেন যে সহযোগিতা করেন। এই দ্বিমুখী আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।"

"আমরা আইনজীবীদের সাথে কথা বলেছি । তারা বলেছেন, এটি মূলত সমনের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু নোটিশে যে ভাষা বা আইনের বিধিমালা বা ধারা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা সমন পর্যায়ে পড়েনা।"


নোটিশ মোতাবেক দুদকের কার্যালয়ে আপাতত যাচ্ছেন না বলে তিনি জানান।

তার দাবি, যদি দুদক তার সঙ্গে কথা বলতে চান, তাহলে কার্যবিধি ও আইনের আওতার বাইরে গিয়ে তাদের কথা বলতে হবে।

"আমার কাছে তারা যদি সহযোগিতা চান, আমি আমার সোর্সের গোপনীয়তা রক্ষা করে তাদের যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করবো। তবে সেখানে কোন আইনি বাধ্যবাধকতা থাকতে পারবেনা।"

দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যা ওই নোটিশে স্বাক্ষর করেন।

মিস্টার দীপু গতকাল তাকে বলেন, নোটিশটি থেকে আপত্তিকর ভাষা প্রত্যাহার না করলে তিনি কোন সাড়া দেবেননা।

দুদক কি বলছে?

নোটিশে এ ধরণের ভাষা ব্যবহারের প্রসঙ্গে মিস্টার ফানাফিল্যা বলছেন, একে আপত্তিকর ভাবার কোন কারণ নেই।

তার দাবি এই চিঠির ফরম্যাটগুলো সরকার থেকে স্বীকৃত ও অনুমোদিত। তাই এ নিয়ে প্রশ্ন করার কোন অবকাশ নেই।

২০১২ সালের এই কমন ফরম্যাটে সব সাক্ষীদের নোটিশ পাঠানো হয়। এ চিঠিতেও ওই একই ফরম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে।

মিস্টার ফানাফিল্যা বলেন, "ভাষাগত বোঝার একটু এদিক সেদিক থাকতে পারে, তবে ভবিষ্যতে যদি লেখায় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে হয়, তাহলে সেটা বিবেচনা করা হবে। এ বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।"

"যে রিপোর্টটা প্রকাশ করা হয়েছে, তার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য তো রিপোর্টারের সাথে কথা বলতে হবে।"

সাংবাদিকদের তলব প্রসঙ্গে দুদকের বিধি কি বলছে
তবে সুপ্রিয় কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীর সরদার জানান, দুদকের ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারার আওতায়, একজন সরকারি তদন্ত কর্মকর্তার যে ক্ষমতা আছে, তার সমান ক্ষমতা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারও রয়েছে।

তিনি বলেন, "দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা তার তদন্তের স্বার্থে চাইলে একজন সাক্ষ্যকে যেকোন সময় নোটিশ পাঠিয়ে হাজির হতে বলতে পারেন। তার কাছে তদন্তে সহযোগিতা করতে ও প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য বলতে পারেন।"

যদি কেউ সেই নোটিশের অবমাননা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারবে দুদক।

দুদকের ফৌজদারি ১৬০ ধারায় এবং দুদক আইনের সেকশন ১৯ ও ২০ এবং বিধি ২০ অনুযায়ী, দুদকের তদন্তকাজে তাদের চাহিদা মতো তথ্য দিতে সকল ব্যক্তি ও সংস্থা সহযোগিতা করতে বাধ্য।

অন্যদিকে, সাংবাদিকদের জন্য যে বিশেষ আইন রয়েছে সেখানে স্পষ্ট বলা রয়েছে যে, সাংবাদিকরা তার সংবাদের সোর্স সম্পর্কে বলতে বাধ্য নন।

সব মিলিয়ে দুদকের চিঠিতে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল একে, আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ বলে জানান অ্যাডভোকেট শামীর সরদার।

দুদকের এমন আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন টিআইবির সুলতানা কামাল।
নিন্দা জানিয়েছে টিআইবি:
টিআইবি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালও বলছেন, দুদকের এ ধরণের ভাষা ব্যবহারের কোন এখতিয়ার নেই।

তিনি বলেন, "দুদকের চিঠির ভাষা এমন হওয়ার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। যদি তাদের চিঠি সরকারি ফরম্যাটেও লেখা হয়ে থাকে, তাহলেও সেটা যথাযথ নয়।"

মিজ কামালের মতে, তারা যদি সহযোগিতাই চেয়ে থাকেন, তাহলে চিঠির ভাষাও যেন তেমন হয়।

"দুদক আইনানুগ কি ব্যবস্থা নেবেন। এগুলো তো আদালত থেকে আসা অপরাধ মামলার তলব করা চিঠিতে থাকে। সহযোগিতা চেয়ে করা চিঠিতে থাকেনা।"- বলেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

সাংবাদিকদের প্রতিবাদ ও শোকজ নোটিশ
দুদকের এমন আচরণের প্রতিবাদে এরইমধ্যে দুদক কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা।

দুদকের চিঠি প্রত্যাহার সেইসঙ্গে এমন ভাষা ব্যবহারের জন্য দু:খ প্রকাশ না করলে আগামীকাল থেকে দুদক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানান তারা।

এদিকে, গতকাল এটিএন নিউজের আরেক সাংবাদিক ইমরান হোসেন সুমনকেও চিঠি পাঠায় দুদক।

তবে সেখানে তারা "অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হইবে"- এই লাইনটি ব্যবহার করেননি। যেটা কিনা সারোয়ার দীপুর চিঠিতে ব্যবহার করা হয়েছিল।

একে দুদকের অনুসন্ধান সংক্রান্ত প্রচলিত নোটিশের ফরম্যাটের বহির্ভূত উল্লেখ করে শেখ মোহাম্মদ ফানাফিল্যাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে দুদক।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. জহির রায়হান সাক্ষরিত ও শোকজ নোটিশে বলা হয়, দুই জন ব্যক্তির একজনকে প্রচলিত ফরম্যাট অনুযায়ী এবং অপরজনকে প্রচলিত ফরম্যাট বহির্ভূত ভিন্নতর নোটিশ প্রদান করে আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যা অসদাচরণের সামিল।

এ কারণে দুদক তাকে ৭ দিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Amir ২৬ জুন, ২০১৯, ৮:০৮ পিএম says : 0
আমরা চাই না সর্ষের ভিতর ভূত ঢুকুক!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন