ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের আহমদাবাদের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম আদালত গতকাল ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত গুলবার্গ গণহত্যা মামলায় বিশ্বহিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) নেতাসহ ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। গতকাল থেকে ১৪ বছর আগে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে সারা ভারত কাঁপানো গুজরাট দাঙ্গায় সবচেয়ে বড় গণহত্যাকা-টি ঘটে আহমেদাবাদ শহরের গুলবার্গে। গুলবার্গ সোসাইটির আবাসনে নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দাঙ্গাবাজেরা। খুন করা হয়েছিল প্রাক্তন কংগ্রেস সংসদ সদস্য এহসান জাফরিসহ ৬৯ জন মুসলিমকে।
এছাড়া গুজরাটজুড়ে বেশ কয়েক দিন ধরে চলা গুজরাট দাঙ্গায় মোট এক হাজারের বেশি লোক নিহত হয়। দোষীদের মধ্যে আছে বিশ্বহিন্দু পরিষদ নেতা অতুল বৈদ্য। তথ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করে দেয়া হয়েছে ৩৬ জনকে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলা এ মামলায় মোট তিনশ’ জন সাক্ষ্য দেন। আগামী সোমবার ৬ জুন দোষীদের সাজা ঘোষণা করবে। মামলার কৌঁসুলিরা সকল অভিযুক্তের যাবজ্জীবন সাজা চেয়েছেন।
দাঙ্গাবাজদের হাতে নিহত কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির বিধবা স্ত্রী জাকিয়া জাফরি সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৪জন আসামি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আমি খুশি। তবে ৩৬ জনকে খালাস দেয়ায় নাখোশ। এটি একটি অসম্পূর্ণ বিচার আর আমি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’
এই গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যার মধ্যে দিয়েই গুজরাট জুড়ে শুরু হয়েছিল সংখ্যালঘু বিরোধী দাঙ্গার আগুন। আর এর ঠিক আগের দিনই ঘটেছিল গোধরার সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০২ গোধরা স্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেসের কামরার আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৫৯ জন করসেবকের। পর দিন সকাল ন’টা নাগাদ আহমদাবাদের চমনপুরা এলাকায় মুসলিমবিরোধী সেøাাগান দিতে দিতে হাজির হয় এক বিশালবাহিনী। এই চমনপুরা এলাকায় মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি। দাঙ্গাবাজের চড়াও হয় গুলবার্গ সোসাইটির আবাসনে। গোটা চল্লিশেক বহুতল ভবন বা বাংলো রয়েছে এই সোসাইটিতে। বসবাসবাসকারীদের প্রায় সবাই উচ্চ-মধ্যবিত্ত মুসলিম ব্যবসায়ী পরিবার। আবাসনে জড়ো হওয়া বাহিনীকে দেখে ভয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস সংসদ সদস্য এহসান জাফরির বাড়িতে।
অভিযোগ রয়েছে, থানায় ফোন করেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। কয়েক ঘণ্টা ধরে হুমকি, গালিগালাজের পর দুপুর হতে না হতে হিংস্র হয়ে ওঠে সেই বাহিনী। দরজা বন্ধ করে দিয়ে আগুন লাগানো হয় একের পর এক বাড়িতে। চলতে থাকে মারধরও। সংসদ সদস্য জাফরিসহ ৩৫ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। নানাভাবে খুন করা হয় আরও ৩৪ জনকে। ঘণ্টা ছ’য়েক ধরে চলেছিল এই নৃশংস গণহত্যাকা-।
এই ঘটনায় মোট ৬৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। মামলা চলাকালে মৃত্যু হয় ছ’জনের। এর মধ্যে ভিএইচপি নেতা অতুল বৈদ্যসহ ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। ১৪ বছর পর বেরোনো এই রায়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ৩৬ জনকে। খালাস পাওয়াদের মধ্যে আছেন বিজেপি নেতা বিপিন প্যাটেল ও পুলিশ ইনস্পেক্টর কেজি এর্দা। গুজরাট দাঙ্গায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় শতাধিক লোক দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। -সূত্র : এএফপি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন