জাহাঙ্গীর হোসেন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে : শিক্ষক স্বল্পতা, নেই শ্রেণিকক্ষ ও বসার বেঞ্চ রয়েছে টয়লেটের অভাব। এতসব সীমাবদ্ধতা ও শিক্ষার প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও সাফল্যেও দিক থেকে পিছিয়ে নেই মির্জাপুর উপজেলা সদরের পুষ্টকামুরী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সাফল্যেও ধারাবাহিকতায় পার করছে টানা পাঁচ বছর। বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থার দেখে অনেক অভিভাবকই তাদের শিশু সন্তানদের বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি করছে। যে কারণে সরকারের বাধ্যতামূলক সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার সুফল থেকে অনেক শিশু বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মির্জাপুর উপজেলা সদরে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত পুষ্টকামুরী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলা শহরের গুরুত্বেও সাথে সাথে পুরনো এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষ ও বসার বেঞ্চ স্বল্পতাসহ প্রয়োজনের তুলনায় টয়লেটেরও অভাব রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রায় ৭শ’ শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য রয়েছেন মাত্র ১৭জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এদের মধ্যে মাতৃকালীন ছুটি, ডেপুটেশন ও প্রশিক্ষণে থাকেন ২/৩ জন শিক্ষক। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষের রয়েছে সংকট। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের পুরাতন ভবনের সঙ্গে যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে ছোট একটি ভবন। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীর সংকুলান না হওয়ায় পাঠদান চলে বরান্দায় এবং পাশের মাদরাসায়। তাতেও স্থান সংকুলন না হওয়ায় বিদ্যালয়ের ছোট মাঠেই একটি টিনসেট ঘর তুলে পাঠদান চলছে। টিনসেট সে ঘরটিও এখন জরাজীর্ণ। এই জরাজীর্ণ টিনের ঘরে গাদাগাদি করে বসিয়ে চলে পাঠদান। এরপরও অপেক্ষা চলে কখন মাদরাসা ছুটি হবে। মাদরাসার ছুটির পর শ্রেণি স্থানান্তরিত হয় সেখানে। মাঠ না থাকায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী এ্যাসেম্বিলি ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না বলে জানা গেছে। তাছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় টয়লের স্বল্পতা থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে খোলা জায়গায় ও আসপাশের বাসা বাড়িতে যেতে বাধ্য হয় বলে জানা গেছে। এসব সমস্যার মধ্যেও অভিভাবকদের সহযোগি মনোভাব শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রচেষ্টায় ফলাফলে সাফ্যল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে বিদ্যালয়টি। গত পাঁচ বছর ধরে শতভাগ পাসসহ জিপিএ ৫ ও রয়েছে সন্তোষজনক। ২০১৫ সালে সমাপনি পরীরক্ষায় ১৫৯ জনের মধ্যে ৬১ জন জিপিএ৫সহ শতভাগ পাস করে উপজেলার সেরা বিদ্যালয় হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এ ব্যাপারে পুষ্টাকামুরী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সরফুন নেছা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা সদরের বিদ্যালয় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রচুর চাপ রয়েছে। বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা দেখে অনেক অভিভাবকই তাদের শিশু সন্তানদের বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি করছে। যে কারণে সরকারের বাধ্যতামূলক সরকারি প্রাথমিক শিক্ষার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি হলে সকলের সহযোগিতা নিয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মির্জাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. খলিলুর রহমান শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষের অভাবসহ সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, জায়গার স্বল্পতার কারণে নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব নয়। তবে পুরাতন ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের এই অর্থ বছরেই কাজ শুরু হবে। এছাড়া শিক্ষক সংকট সমাধানেও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন