মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নদী রক্ষায় যুগান্তকারী রায়

দখলকারীরা ব্যাংক ঋণ পাবেন না, অযোগ্য নির্বাচনেও

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২ জুলাই, ২০১৯

নদী দখলকারীরা ব্যাংক ঋণ পাবেন না। নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার ক্ষেত্রেও ‘অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন। নদ-নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ হয়। প্রকাশিত রায়কে নদ-নদী রক্ষায় ‘যুগান্তকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন পরিবেশবাদী ও নদী গবেষকগণ। চলতি বছর ৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন। প্রকাশিত রায়ে আদালত ‘মানবজাতির টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। নাব্যতা সঙ্কট এবং বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সঙ্কটে পড়তে বাধ্য’ বলেও মন্তব্য করেন।

প্রকাশিত রায়ে রাজধানী সংলগ্ন তুরাগ নদকে ‘লিগ্যাল/জুরিসটিক পারসন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রায়ে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। নদী রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে জাগরণ শুরু হয়েছে। এখন সবারই ভাবনা- পরিবেশের জন্য নদী রক্ষাও জরুরি। আদালত রায়ে বলেন, আমাদের দেশের সব নদীকে রক্ষা করার সময় এসেছে। যদি তা না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকার চারপাশে বহমান চার নদী রক্ষায় এর আগে আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া না হলে এত দিনে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর হয়তো বহুতল ভবন দেখা যেত। অথবা তুরাগ নদে অবৈধ দখলদারদের হাউজিং এস্টেট থাকত। তবে এত রায় ও নির্দেশনার পরও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে বিবাদীরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আদালতের নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালন হলে তুরাগ নদ রক্ষায় হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করতে হতো না। রায়ে বলা হয়, ‘শুধু যে তুরাগ নদই আক্রান্ত তা নয়, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনাসহ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদ-নদীও অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত। এখন এসব নদী রক্ষায় আমরা কি হাজারখানেক মামলা করার ব্যাপারে উৎসাহ কিংবা অনুমতি দেবো? নাকি অবৈধ দখলের হাত থেকে সব নদী রক্ষায় এই মামলা ধরে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবো? নির্দেশনার আলোকে নদী দখলমুক্ত করার মামলা আর আদালতের সামনে আসবে না। পাশাপাশি দেশের সব নদ-নদী-খাল-জলাশয় ও সমুদ্র সৈকতের সুরক্ষা এবং তার বহুমুখী উন্নয়নে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ বাধ্য থাকবে। রায় অনুযায়ী নদী দখলের সঙ্গে জড়িতরা ব্যাংক ঋণ পাবে না। নদী দখলকারীদের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার অযোগ্য গোষণা করা হয়েছে। রায়ে নদী রক্ষা কমিশন যাতে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, সে লক্ষ্যে আইন সংশোধন করে সরকারকে ‘কঠিন শাস্তি’র বিধান করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে জলাশয় দখলকারী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা প্রকাশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ের ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরি এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায় নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে বলা হয়। রায়ে দৃষ্টান্ত টেনে বলা হয়, ইকুয়েডর, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও কলম্বিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নদ-নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। নদ-নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণাকারী পঞ্চম দেশ।

রায় প্রকাশের পর রিটের বাদী ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’-এর আইনজীবী মনজির মোরসেদ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে রায় হয়েছিল। আজ (সোমবার) পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে মানুষের মতোই নদীও মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছে। নদী যাতে জীবন্ত থাকতে পারে। কেউ যাতে দখল করতে না পারে, দূষণ না হয় তেমন একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন আদালত। তিনি আরো বলেন, এ রায় অনুযায়ী তুরাগসহ নদ-নদীগুলো এখন থেকে মানুষ বা প্রাণী যেভাবে আইনি অধিকার পায় তেমনি আইনি অধিকার পাবে নদীও। নদীর কিছু আইনি অধিকার সৃষ্টি হলো এ রায়ের ফলে। নদী নিজেই তার ক্ষতি বা দখলের বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে। বাস্তবতা হলো, তবে নদী তো আর নিজে আদালতে আসতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে কেউ তার প্রতিনিধি হয়ে ক্ষতিগুলো আদালতকে জানাবে। আদালতও সেটির আইনগত প্রতিকার দেবেন। মূলত এ রায়ের মাধ্যমে মানুষের মতো নদীর মৌলিক অধিকার স্বীকৃতি পেল।

রায় প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নদী গবেষক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। নদী রক্ষার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক রায় এটি। এর ওপর ভিত্তি করে কথা বলা যাবে। আগে নদীর কোনো অধিকারই ছিল না। নদী হিসেবে বাঁচার অধিকার না থাকায় এটিকে যেভাবে ইচ্ছে হত্যা করা হচ্ছিল। এ রায় হওয়ার অর্থ হলো নদীকেও একটি প্রাণ হিসেবে গণ্য করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Mohammed Kowaj Ali khan ১ জুলাই, ২০১৯, ১১:৪৯ পিএম says : 0
বিশ্বে বিপরয্যয় ঢেকে আনার জন্য ভারতকে মহা দুষি সাব্যস্থ করে স্বাস্থীর আওতায় আনা হোক। ভারত নিরবোধেরা ফারাক্কা সহ নদীতে অরধেক শতক বাঁধ দিয়ে বিশ্বে মহা বিপরয্যয় আনিয়াছে।
Total Reply(0)
Mohi Uddin ২ জুলাই, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
প্রতি উপজেলায় নদী কমিশন করে রায় বাস্তবায়ন করা হউক। না হয় বন্ধ থাকলে লিভার নষ্ট হবে।
Total Reply(0)
Lutfor Alam Sikder ২ জুলাই, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
Akta valo kaj korlan aponara
Total Reply(0)
Muhammad Ali Bahadur ২ জুলাই, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
হাইকোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Alihosainalihosain Ritaar ২ জুলাই, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
THANKS good
Total Reply(0)
Wazi Al Shams ২ জুলাই, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
এসব মুখের কথায় আর রক্ষা হবে না। দেশকে যা মারার মেরে দিয়েছে প্রথম-দ্বিতীয় প্রজন্ম।
Total Reply(0)
Muhammad Minar Hussain ২ জুলাই, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
এসব নীতি কথা আইন বইয়েই থাকবে। "মোরা বইয়ে করি বৃক্ষ রোপন ধ্বংস করি সুন্দরবন"
Total Reply(0)
Mirza Anik Hasan ২ জুলাই, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
যুগান্তকারী রায়ের জন্য হাইকোর্টকে অসংখ্যা ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
ash ২ জুলাই, ২০১৯, ৫:২১ এএম says : 0
HARD LINE JEA LAW KORE DILE E TO HOY, JE VABE ONNO DESHE HOY, KAWRO TO SHORKARER AKTA INCH JAYGAO DOKHOLER SPORDHA HOY NA! BANGLADESH E KENO NA?? ASHOLE BANGLADESH E CHUTUR-BUTUR KHUB BESHI !! R ...........AR PULISH KI KORE?? ONNANNO DESH E SHORKARI JAYGAY KISU KORLE TO 30 MINUTES ER MODDY PULISH CHOLE ASHE ! R MAMLA?? MAMLAR PROSNO ASHE KENO?? KON ...AR BAPER SHOKTI ASE SHORKARI JAYGAY HAT DAY??
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২ জুলাই, ২০১৯, ৯:০০ এএম says : 0
Eai raier jonno jara porisrom koresen oshesh dhonnobad kintu onrodh roilo eai raike kothorvabe jeno karjjokori kora hoy....
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন