মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

নাজুক শাখা রেল লাইন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও নাজুক চট্টগ্রাম থেকে শাখা লাইনগুলোর অবস্থা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারীর অবস্থা বেহাল। এসব লাইনে চরম ঝুঁকিতে চলাচল করছে যাত্রীরা। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের মতো শাখা লাইনগুলোর উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।

রেলওয়ে উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কমতি নেই। নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। চলমান আছে অর্ধশত প্রকল্প। সেই সঙ্গে আছে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনাও। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে নির্মাণাধীন কক্সবাজার লাইনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দ্রুতগতিসম্পন্ন বুলেট ও বৈদ্যুতিক ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। প্রতি বছরই বিভিন্ন রুটে নামছে নতুন নতুন আন্তঃনগর ট্রেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে ব্যাপক উন্নয়নের মধ্যেও অবহেলিত চট্টগ্রামের শাখা লাইনগুলো। জরাজীর্ণ রেললাইন দিয়ে চলছে যাতায়াত।

চট্টগ্রাম-নাজিরহাট লাইনে চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে। চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট লাইনে লোকাল ট্রেন চলাচল করে নিয়মিত। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী লাইনেও নিয়মিত ট্রেন চলাচল করছে। এ দুটি লাইনে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এসব লাইনে মালবাহি ট্রেনও চলাচল করে। নিয়মিত যারা এসব ট্রেনে চলাচল করেন তারা বলছেন, রেলে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এসব লাইনে তার কোন ছোঁয়া লাগেনি। লক্কর ঝক্কর অবস্থায় রয়েছে লাইন।

এ দুটি রেলপথের অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে বেহাল। বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময়ই খোলা থাকে ফিশপ্লেট, ক্লিপ, হুক, নাটবল্টুসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ। এমনকি রেললাইন মজবুত ও স্থিতিশীল রাখতে স্থাপিত স্লিপারের অবস্থাও নাজুক। এসব স্লিপারকে যথাস্থানে রাখতে যে পরিমাণ পাথর থাকা প্রয়োজন, অধিকাংশ স্থানেই তা নেই। কোনো কোনো স্থানে পাথরশূন্য অবস্থায় আছে স্লিপার। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেললাইনের মতো রেলসেতুর অবস্থাও নাজুক। জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে সচল রাখা হয়েছে সেতুগুলো। এগুলোর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। এসব লাইনে অরক্ষিত ক্রসিংগুলোও।

রেললাইন নাজুক হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ৯ মে নগরীর ষোলশহরে বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে ১০ শিক্ষার্থী আহত হন। তার আগে ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম-দোহাজারী লাইনের হাটহাজারী এলাকায় ফার্নেস অয়েলবাহী তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। জরাজীর্ণ একটি সেতু ভেঙ্গে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রেলসেতু এলাকার খালে তেল ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়। কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম-দোহাজারী লাইনে অনুরূপ এক দুর্ঘটনায় তেলবাহী ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জরাজীর্ণ এসব রেললাইনে বড় ধরনের কোন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইনে সংস্কার কাজের জন্য আন্দোলনও করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, নাজুক রেলপথের কারণে ঝুঁকি নিয়ে তারা যাতায়াত করছেন। লাইনের অবস্থা এতই নাজুক যে ট্রেন চালাতে হয় অনেকটা রিকশার গতিতে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম-নাজিরহাট ও চট্টগ্রাম-দোহাজারী লাইনের।

জান আলী হাট থেকে শুরু করে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় পাথরশূণ্য অবস্থায় আছে স্লিপারগুলো। কোন কোন এলাকায় নাটবল্টুও খোলা। অনেক এলাকায় স্লিপারও নেই। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে রামু, কক্সবাজার এবং গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের কাজ চলছে। এ লাইনে বুলেট ট্রেন চালানোর মহাপরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার। স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারমুখি রেললাইন চালুর আগেই চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত নাজুক রেলপথের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। এ পথেই রয়েছে শত বছরের পুরনো কালুরঘাট রেলসেতু। জরাজীর্ণ এ সেতুটি জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন রেলসেতু নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করছে বোয়ালখালীবাসি। আন্দোলনকারিরা বলছেন, কক্সবাজারমুখি রেললাইন চালুর আগেই কর্ণফুলী নদীতে নতুন রেলসেতু নির্মাণ করতে হবে। তা না হলে নতুন এ রেলপথ কার্যকর হবে না।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম সৈয়দ ফারুক আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রামের শাখা লাইনগুলোতে বড় ধরনের উন্নয়ন কাজ না হলেও নিয়মিত সংস্কার কাজ চলছে। বিশেষ করে মৌলভীবাজারে রেল দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-দোহাজারীসহ এ অঞ্চলের শাখা লাইনগুলোতে সংস্কার কাজ জোরদার করা হয়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। শাখা লাইনগুলো সংস্কারে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ লাইনগুলোতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন