বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চৌদ্দগ্রামে ওষুধ বিক্রির নিয়ম মানা হচ্ছে না

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) থেকে মো. আকতারুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

সারা দেশের মত চৌদ্দগ্রামেও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ফার্মেসি। লাইসেন্স ছাড়াই ফার্মেসিগুলো ওষুধ বিক্রি করছে। মুদি দোকানেও দেদার অ্যান্টিবায়োটিকসহ সব ধরনের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসনের লাইসেন্স এবং নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধ বিক্রি বেআইনি হলেও তা মানা হয় না। অধিকাংশ ফার্মেসিতেই জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের কোনো নিয়ম মানা হয় না। ফার্মেসিতে যে তাপমাত্রায় ওষুধ রাখার কথা, সেই তাপমাত্রায় রাখা হয় না। এতে ওষুধের গুণগতমান বজায় থাকছে না। এর ফলে মানবশরীরে ওষুধের কার্যকারিতা আর থাকছে না।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের বিধি অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মেসিতে একজন করে ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ চৌদ্দগ্রামে ফার্মাসিস্টের তুলনায় ফার্মেসির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। ওষুধ সংরক্ষণের জন্য ন্যূনতম যে নিয়মনীতি রয়েছে সেগুলোর কিছুই মানা হয় না। সব ধরনের ওষুধই বিক্রি হয় এসব মানহীন ফার্মেসিতে।
বেশির ভাগ ওষুধ সংরক্ষণে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির নিচে রাখতে হবে। এর চেয়ে তাপমাত্রা বেশি হলেই বেশির ভাগ ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়। আমাদের দেশে দুই মাস ২০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা থাকে। এ ছাড়া সারা বছরের গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির বেশি থাকে। এ জন্য ওষুধ সংরক্ষণে ফার্মেসিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার প্রয়োজন। কিন্তু চৌদ্দগ্রামের বেশিরভাগ ফার্মেসিতেই তা নেই। যে তাপমাত্রায় ওষুধ রাখার কথা, সেই তাপমাত্রায় রাখা হয় না। এতে ওষুধের গুণগতমান বজায় থাকে না।
ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে, কোন ওষুধ কত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে তা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে ঠিক করে দেয়া হয়। কোনো ফার্মেসি এটা না মানলে জরিমানার বিধানও রয়েছে।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ ফার্মেসিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়। ওষুধ রাখার জন্য কোনো ফ্রিজ নেই। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করা হয়। ওষুধ সংরক্ষণে নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা করা হয় না। মুদি দোকানের মতোই সাজিয়ে রাখা হয়েছে জীবনরক্ষার বিভিন্ন ওষুধ। চৌদ্দগ্রাম, মুন্সিরহাট, মিয়া বাজার, গুনবতী, চিওড়া, ধোড়করা এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকানেও ওষুধ বিক্রি করা হয়। প্যারাসিটামল ওর স্যালাইন ছাড়াও অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রæপের অ্যান্টিবায়েটিক বিক্রি করা হয়।
হাতের কাছে পাওয়া যায় তাই মুদি দোকান থেকে ওষুধ কেনার কথা জানান, কনকাপৈতের বাসিন্দা মাহফুজ আহমেদ আলামীন। এসব ওষুধ অসুখে কোনো কাজে আসে না এটি জানতেন না বলে জানান তিনি। এ ধরনের অনিয়ম বন্ধে তিনি সরকারের কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানান।
অন্যদিকে সারা দেশে ফার্মেসির এই নৈরাজ্যকর অবস্থার মধ্যেই ঔষধ প্রশাসনের গড়ে তোলা মডেল ফার্মেসি কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। সারা দেশে এমন ফার্মেসি আড়াইশ। মডেল ফার্মেসির প্রথম শর্ত ৩০০ ফিট জায়গার ওপর হতে হবে। এ ছাড়া একজন এ-গ্রেড, বি-গ্রেডের দুজন ও সি-গ্রেডের পাঁচজন ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। যাদের কাজ হবে ওষুধ ক্রেতাদের ওষুধ সেবন করার সঠিক নিয়ম বুঝিয়ে দেয়া। এ ছাড়া ওষুধ সব সময় ২৫ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অথচ চৌদ্দগ্রামে এই ধরনের কোন ফার্মেসি নেই।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক আ.ব.ম. ফারুক বলেন, আমাদের দেশে ফার্মেসি বলে কিছু নেই। যা আছে সব মুদি দোকান। ফার্মেসিতে বিক্রেতারা ওষুধ সংরক্ষণ করে মুুদি দোকানের মালপত্রের মতো। এজন্য ওষুধের কার্যকারিতাও অনেক কমে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একদমই থাকে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন