প্রায় তিন মাস আগে ১০ এপ্রিল রাতে সুদানের ভয়ঙ্কর গুপ্তচর বাহিনী প্রধান সালাহ গশ প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের প্রাসাদে ঢুকলেন। তিনি প্রেসিডেন্টকে জানাতে এসেছেন যে গণবিক্ষোভ তার শাসনের জন্য কোনো হুমকি নয়।
চার মাস ধরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজপথে রয়েছে। তারা গণতন্ত্র চায়, অবসান চায় অর্থনৈতিক দুরবস্থার। সালাহ গশ আরব বিশে^র অন্যতম দীর্ঘকালীন শাসক তার বসকে বললেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরের একটি বিক্ষোভ শিবির নিষ্ক্রিয় করা হবে বা ভেঙ্গে দেয়া হবে।
তার কথায় স্বস্তি বোধ করে ঘুমাতে গেলেন বশির। চার ঘণ্টা পর তার যখন ঘুম ভাঙ্গল, দেখলেন সালাহ তার সাথে বেইমানি করেছেন। তার প্রাসাদ রক্ষীদের কেউই নেই, রয়েছে নিয়মিত সেনারা। তার ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটতে চলেছে।
সেই শেষ মুহূর্তগুলোতে মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক তার সাথে কথা বলেছিলেন। তাদেরই একজন, যিনি বশিরের অভ্যন্তরীণ বলয়ের ছিলেন এক সদস্য। তিনি রয়টার্সকে বলেন, প্রেসিডেন্ট তখন নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। তার নামাজ পড়া শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেনা অফিসাররা।
নামাজ শেষ করে ফিরলেন বশির। তারা তাকে জানালেন যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা ও পুলিশের প্রধানগণ তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করছেন। অর্থাৎ তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন।
ওমর আল বশিরকে খার্তুমের কোবার কারাগারে নেয়া হয়েছে। নিজে ক্ষমতায় থাকাকালে হাজার হাজার রাজনৈতিক বিরোধীকে তিনি এ কারাগারে বন্দী রেখেছিলেন। আজ তিনি নিজেই সেখানে।
যে মানুষটি বহু বিদ্রোহ ও সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা দেখেছেন। যিনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং দারফুরে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতার এড়িয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় এক মসৃণ অভ্যুত্থান। ক্ষমতা থেকে বশিরের বিদায় শেষ পর্যন্ত কীভাবে চ‚ড়ান্ত হল তা সেই বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে জোড়া দেয়ার লক্ষ্যে রয়টার্স অভ্যুত্থানের ব্যপারে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কয়েক ডজন সূত্রের সাক্ষাতকার নিয়েছে।
এ সব সূত্রের মধ্যে রয়েছেন এক সাবেক মন্ত্রী, বশিরের অভ্যন্তরীণ বলয়ের এক সদস্য এবং অভ্যুত্থানের এক চক্রান্তকারী। তারা সেই নেতার কথা বলেছেন যিনি ছিলেন একজন কৌশলী। তিনি সুদানে তার প্রতিদ্ব›দ্বী ইসলামপন্থী ও সামরিক উপদলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ভাবে পরিবর্তিত মধ্যপ্রচ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলেন। তারা বলেন, বশির কিভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিনষ্ট করেছেন।
তেল সমৃদ্ধ ইউএই আগে সুদানকে শত শত কোটি ডলারের তেল দিয়েছে। বশির ইয়েমেনে ইউএইর স্বার্থ দেখাশোনা করেছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের শেষে সুদানের অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দেয়। বিক্ষোভকারী লোকজন রাস্তায় নেমে আসে। বশির ক্ষমতাশালী ও ধনী বন্ধু ইউএইকে পাশে দেখতে পাননি।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, যে জেনারেলরা বশিরের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে কিভাবে জাতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান সালাহ গশ সমর্থন আদায়ের জন্য রাজনৈতিক বন্দী ও সুদানের বিরোধী দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করেন। এবং অভ্যুত্থানের কয়েকদিন আগে সালাহ কি ঘটতে চলেছে সে বিষয়ে আগাম হুঁশিয়ারি দিতে কমপক্ষে একবার ইউএইতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।
ইউএই ও সউদী কর্মকর্তারা এ নিবন্ধ লেখার ব্যাপারে রয়টার্সের বিশদ প্রশ্নের জবাব দেননি। ইউএইর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ বশিরের ক্ষমতাচ্যুতির পর গত জুনে টুইটারে লেখেন যে আমিরাত সকল সুদানি বিরোধী নেতা ও ক্ষমতায় থাকা অন্তর্বর্তী সামরিক পরিষদের যোগাযোগ রেখেছিল।
গারগাশ সুদানে বশিরের উগ্রপন্থী মিত্রদের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, বহু বছরের বশিরের স্বৈরাচার ও মুসলিম ব্রাদারহুডের পর এঠা এক সংবেদনশীল সময় চলছে। (অসমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন