বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কম জায়গায় নড়াচড়া নেই অন্যের কাঁধে পা দিয়ে ঘুম

সিএনএন | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম


ইরাকের এক কারাগারে মহিলা অংশের বিভিন্ন সেলে কিশোরী, সন্দেহভাজন মহিলা সন্ত্রাসী ও তাদের শিশু সন্তানদের সংখ্যা এত বেশি যে সেখানে মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডবিøউ) কাছে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন ছবি দেখে এ কথা জানা গেছে।
এসব ছবির মধ্যে একটি ছবি নেয়া হয়েছে নিনেভেহ প্রদেশের তাল কায়েফ বন্দি শিবির থেকে। ইন্টারন্যাশনাল রাইটস গ্রæপ গত বৃহস্পতিবার ছবিটি প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, একটি সেলের মেঝেতে পুরুষরা কুঁকড়ে শুয়ে আছে। সংখ্যায় এত বেশি বন্দি যে তাদের পা ছড়িয়ে পূর্ণভাবে শোয়ার পরিস্থিতি নেই। তাদের আঙুলগুলো পরস্পর সংবদ্ধ। কেউ জায়গার অভাবে আরেকজন বন্দির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। একজনকে দেখা যায়, আরেকজনের কাঁধের উপর পা দিয়ে শুয়ে আছে।

একই জায়গায় নারী বন্দিদের একটি সেলের ছবিতে দেখা যায়, নারীরা মেঝেতে বসে আছে। সেলের দেয়ালে তাদের কাপড় ও অন্যান্য জিনিস ঝুলছে। সেলে শিশুদেরও দেখা যাচ্ছে। তাদের নড়াচড়া করার জায়গা নেই। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, অজ্ঞাতনামা একজন সিনিয়র ইরাকি কারাগার বিশেষজ্ঞ গোপনে এ ছবিগুলো তাদের দিয়েছেন। এসব ছবির সত্যতা সিএনএন নিশ্চিত করতে পারেনি।
ইরাকের একটি অধিকার গ্রæপ এসব ছবির সত্যতা স্বীকার করেছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটস ইন ইরাকের এক সদস্য আলি আকরাম আল-বায়াতি সিএনএনকে বলেন, এর কারণ সেখানে আটক ব্যক্তি ও কারাবন্দির সংখ্যা অসংখ্য। অবকাঠামো অত্যন্ত অপ্রতুল, এসব স্থানে প্রশাসন ও কর্মচারি পর্যায়ে রয়েছে লাগামহীন দুর্নীতি।

অজ্ঞাতনামা ইরাকি কারাগার বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে এইচআরডবিøউ বলে, নিনেভেহ প্রদেশে বিচারপূর্ব তিনটি কারাগার রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- তাল কায়েফ, ফয়সালিয়া ও তাসফিরাত। এগুলোতে সব মিলিয়ে আড়াই হাজার লোকের স্থান সংকুলানের কথা। গত মাসের হিসাবে সেখানে আটক ও বন্দি মিলিয়ে সাড়ে চার হাজার লোক ছিল।
কারাগার বিশেষজ্ঞ বলেন, বন্দিদের তাদের সেলগুলোতে শোয়ার জায়গা নেই। এমনকি তারা আরাম করে বসতেও পারে না। সূত্র জানান, এসব কারাগার হচ্ছে বন্দিদের পুনর্বাসনের জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি বন্দিদের এ অবস্থায় রাখেন তাহলে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের কি অবস্থা হবে তা বলা সম্ভব নয়।

এইচআরডবিøউ বলে, পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে এটাকে নির্যাতন বলা যায়। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংস্থা বলে, কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে বন্দিদেরকে মানবেতর পরিস্থিতিতে রাখা হয়নি এবং আইনি ভিত্তিতেই তাদের আটক রাখা হয়েছে।
এইচআরডবিøউ বলে, নারী ও কিশোরীদের সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে আটক করা হয়েছে। সিএনএন মন্তব্য করার অনুরোধ জানালেও ইরাকি কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাত সাড়া দেয়নি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রæপগুলো নিয়মিতভাবে ইরাকি কারাগারগুলোতে মানবেতর পরিস্থিতির প্রমাণাদি সংগ্রহ করছে। ২০১০ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক রিপোর্টে অভিযোগ করা হয় যে ইরাকে প্রায় ৩০ হাজার বন্দির কোনো অধিকার নেই। তাদের যথেচ্ছভাবে নির্যাতন ও অত্যাচার করা হয়।

এইচআরডবিøউ বলে, নিনেভেহ প্রদেশে গত বছর যথাযথ চিকিৎসার অভাব ও খারাপ পরিস্থিতির কারণে কমপক্ষে চার জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। সংস্থা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলে, কারাগারগুলোর ভয়াবহ পরিস্থিতি বন্দিদের উগ্রপন্থী করে তুলতে পারে। সিএনএন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রিপোর্টে ইরাকে ইসলামিক স্টেটের সম্ভাব্য পুনরভ্যুদয়ের খবর দিয়েছে। মাত্র এক বছর আগে ইরাকি কর্তৃপক্ষ দেশকে আইএসমুক্ত ঘোষণা করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক লামা ফাকিহ বলেন, কারাগারগুলোর মানবেতর পরিস্থিতি শুধু বন্দিদেরই প্রভাবিত করে না, সামগ্রিকভাবে সমাজের উপরও প্রভাব ফেলে। ইরাকি কারাগারগুলোর পরিস্থিতি ভবিষ্যতে যাতে আরো খারাপ পরিস্থিতি ডেকে না আনে, কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন